চার দেশের রাষ্ট্রদূতের স্থায়ী পুলিশি এসকর্ট সুবিধা বাতিলের পর রাষ্ট্রদূতদের গাড়িতে পতাকা উড়ানো বন্ধের বিষয় নিয়েও ভাবছে সরকার। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন সাংবাদিকদেরকে এ তথ্য জানিয়েছেন। রোববার (১৪ মে) ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, ভারত ও সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূতের বিশেষ নিরাপত্তা সুবিধা তথা সার্বক্ষণিক পুলিশ এসকর্ট প্রত্যাহার করে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। রোববার এ সিদ্ধান্ত হলেও সোমবার (১৫ মে) তা প্রকাশ পায়।
অপরদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, শুধু রাষ্ট্রদূত নয়, মন্ত্রীদের নিরাপত্তার দায়িত্ব থেকেও সরানো হবে পুলিশ। আনসার সদস্যদের নিয়ে প্রটেকশন গার্ড রেজিমেন্ট তৈরি করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
কুটনীতিকদের প্রটোকল প্রত্যাহারের খবর প্রকাশের পর থেকে কূটনৈতিক পাড়ায় রীতিমতো তোলপাড় চলছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন। সোমবার সন্ধ্যায় তিনি বলেন, কেবল এসকর্ট প্রত্যাহারই নয়, রাষ্ট্রদূতদের গাড়িতে ফ্লাগ উড়ানো বন্ধের বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে। মন্ত্রী বলেন, নিরাপত্তার নামে ৪/৫টি দেশের রাষ্ট্রদূত বাড়তি ঢং করছিলেন। নিউ ইয়র্কে ১৯৩টি দেশের স্থায়ী মিশন রয়েছে। সেখানে যে সমস্ত মিশন প্রধান দায়িত্ব পালন করেন তাদের অনেকেই নিজ নিজ দেশের কেবিনেট মেম্বার পদমর্যাদার। কিন্তু ওখানে কেউ পুলিশ এসকর্ট নিয়ে চলার চিন্তাও করতে পারেন না, গাড়িতে পতাকা উড়ান না।
ড. মোমেন বলেন, আমি মন্ত্রী, কিন্তু কোথাও পুলিশ এসকর্ট নেই না। এমনকি মফস্বলে গেলেও না। কারণ আমি মনে করি এটি একটি বাড়তি ঝামেলা। বাংলাদেশে রাস্তাঘাটে কিংবা শপিং মলে আক্রমণ করে লোক মারে না। সুতরাং চলাফেরায় কোনো অসুবিধা নাই।
এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, শুধু রাষ্ট্রদূতদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের সরানো হচ্ছে না, পর্যায়ক্রমে মন্ত্রীদের ক্ষেত্রেও সরানো হবে। পুলিশের বদলে আনসার বাহিনী থেকে তৈরি করা গার্ড রেজিমেন্ট তাদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে।
সোমবার (১৫ মে) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, এতদিন যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব এবং ভারতের রাষ্ট্রদূতকে বাড়তি প্রটেকশন দেওয়া হতো। গাড়ির আগে এবং পেছনে পুলিশ থাকতো। আমরা চিন্তা করেছি, পুলিশের বদলে আনসার বাহিনী থেকে তৈরি করা গার্ড রেজিমেন্ট প্রটেকশনের দায়িত্বে থাকবে। আর কোনও দেশের রাষ্ট্রদূত যদি এই সুবিধা চান আমরা তাদেরকেও দেবো। আমাদের সেই সিদ্ধান্তটাই হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের বহু কাজে পুলিশ সদস্যের প্রয়োজন। পুলিশের সংখ্যা আপাতত বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না, আবার অন্যদিকে সামনে নির্বাচন। সবকিছু চিন্তা-ভাবনা করে ওই নিরাপত্তা থেকে পুলিশ সদস্যদের সরিয়ে নিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, শুধু রাষ্ট্রদূতদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের সরানো হচ্ছে না, পর্যায়ক্রমে মন্ত্রীদের নিরাপত্তার জন্য থাকা পুলিশ সদস্যদেরও সরানো হবে।
‘আনসার ব্যাটালিয়নের গার্ড রেজিমেন্ট যেটা তৈরি হয়েছে তারা অনেকটা দক্ষ। অত্যন্ত পারদর্শী করে তাদেরকে তৈরি করা হয়েছে এ ধরনের নিরাপত্তার জন্য। আস্তে আস্তে তাদেরকে কেপিআইভুক্ত স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তার দায়িত্বও দেওয়া হবে।’
কারও সাথে বৈরী সম্পর্ক নেই উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, খুব শক্তিশালী এবং আধুনিক সাজে সজ্জিত একটি প্রটেকশন গার্ড রেজিমেন্ট আমরা করেছি। প্রধানমন্ত্রী দিকনির্দেশনায় এটি আনসার ব্যাটালিয়ন থেকে তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, যত ভিআইপি প্রটোকল বা প্রটেকশন যাই বলা হোক না কেন—এমনকি মন্ত্রী-মিনিস্টারদের বাসাবাড়ির নিরাপত্তার বিষয়গুলো তাদের উপর দেওয়া হবে। এজন্য একটি রেজিমেন্ট তৈরি করেছি, এর সংখ্যাও বাড়াতে হবে।
কূটনীতিকদের নিরাপত্তা সম্পর্কে ডিএমপির জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘কূটনীতিকদের বাসাবাড়ি, অফিস, মুভমেন্ট, সব সময় আমরা নিরাপত্তা দিয়ে আসছি। তাদের নিরাপত্তার কোনো রকম ঘাটতি হোক সেটা আমরা চাই না। তারা যখন মুভমেন্ট করেন তখন সামনে-পেছনে প্রটেকশন গাড়ি থাকত। এর বাইরেও অতিরিক্ত আরেকটি গাড়ি থাকত। এ ছাড়া দুজন ফোর্স থাকত। আমাদের অন্যান্য ডিভিশনের ফোর্স ক্রাইসিসের কারণে আপাতত কিছুটা সমন্বয় করা হয়েছে। মূল যে নিরাপত্তা পরিকল্পনা, সেটার কোনো ঘাটতি নেই। সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফোর্সের স্বল্পতার কারণে আপাতত এ সিদ্ধান্ত।’
রবিবার সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে বাড়তি প্রটোকল সুবিধা বাতিলসংক্রান্ত সিদ্ধান্তের কথা ডিএমপিকে জানানো হয় বলে জানান ডিএমপির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। ডিএমপি সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছে বলেও তিনি জানান।
ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস সরকারের সিদ্ধান্ত বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় দূতাবাসটির কাউন্সিলর (পাবলিক ডিপ্লোম্যাসি) শন ম্যাকিন্টোস সংবাদমাধ্যমে পাঠানো বার্তায় বলেন, ‘ভিয়েনা কনভেনশন অনুসারে আয়োজক দেশকে অবশ্যই সমস্ত কূটনৈতিক মিশন ও কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে তার বাধ্যবাধকতা বজায় রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের কূটনৈতিক কর্মীদের নিরাপত্তা ও অন্যান্য সুবিধা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
খুলনা গেজেট/কেডি