ইউক্রেনে হামলা চালালে রাশিয়ার গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্প বন্ধের হুমকি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। রুশ এই গ্যাস পাইপলাইনটি নর্ড স্ট্রিম ২ নামে পরিচিত এবং এর মাধ্যমে রাশিয়ার গ্যাস জার্মানি তথা পশ্চিম ইউরোপে যাওয়ার কথা রয়েছে। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) এই পাইপলাইনই বন্ধের হুমকি দেয় মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর।
শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নর্ড স্ট্রিম ২ পাইপলাইনের মাধ্যমে রাশিয়ার গ্যাস জার্মানিতে যাওয়ার কথা রয়েছে। জার্মানির কর্মকর্তারাও বলছেন, রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করলে এই গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্পের ওপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে।
ইউক্রেন সীমান্তে দীর্ঘদিন ধরেই প্রায় এক লাখ সেনাসদস্য মোতায়েন করে রেখেছে প্রতিবেশী দেশ রাশিয়া। যেকোনো মুহূর্তে রুশ সেনারা দেশটিতে আক্রমণ করতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে। যদিও ইউক্রেনে হামলার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে বরাবরই দাবি করে আসছে মস্কো।
ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্ররা বরাবরই বলে আসছে যে, পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে হামলা হলে তারা রাশিয়ার অর্থনীতিকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করবে। আর জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ এই বক্তব্যের মাধ্যমে তাদের রুশ-বিরোধী কঠোর অবস্থান আরও স্পষ্ট হলো। কারণ রাশিয়ার জন্য এই গ্যাস পাইপলাইন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেছেন, ‘আমি পরিষ্কার করেই বলে দিতে চাই, রাশিয়া যদি ইউক্রেনে হামলা করে, তাহলে নর্ড স্ট্রিম ২ গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্প আর সামনে এগোবে না।’
অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র এই গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্প কিভাবে বন্ধ করবে এবং এটি বন্ধ বা বাতিল করার ক্ষমতা ওয়াশিংটনের আছে কি না, সে বিষয়ে বিশদ কোনো ব্যাখ্যায় যাননি নেড প্রাইস। তবে তিনি এটিই বলেছেন যে, ‘(ইউক্রেনে হামলা হলে) এই প্রকল্প যেন সামনে না এগোয়, তা নিশ্চিত করতে জার্মানির সঙ্গে কাজ করবো আমরা।’
যুক্তরাষ্ট্র যখন এই গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্পটি পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলছে, তখন জার্মানি বলছে, প্রকল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি তারা উড়িয়ে দেবে না।
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বায়েরবক দেশটির পার্লামেন্টে জানিয়েছেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞার প্যাকেজ নিয়ে পশ্চিমা মিত্রদের সঙ্গে কাজ চলছে। যেসব বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সম্ভাবনা রয়েছে তার মধ্যে নর্ড স্ট্রিম ২ প্রকল্পও রয়েছে।
তবে তিনি আরও বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে সংলাপ চালিয়ে যাওয়াকেই বেশি ভালো বলে মনে করছেন তিনি।
উল্লেখ্য, ১১ হাজার কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ে ১২২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইনটি নির্মাণ করতে রাশিয়ার পাঁচ বছর সময় লেগেছে। বাল্টিক সাগরের নিচ দিয়ে এবং ইউক্রেনের ভেতর যাওয়া এই পাইপলাইন দিয়ে রাশিয়া থেকে জার্মানিতে আরও বেশি পরিমাণে গ্যাস রফতানি করতে চায় মস্কো।
তবে গ্যাস পাইপলাইনটি এখনও চালু হয়নি। জার্মান আইন না মানায় এর অনুমোদন আপাতত স্থগিত রয়েছে বলে গত বছরের নভেম্বর জানানো হয়েছিল।
খুলনা গেজেট/এনএম