খুলনা, বাংলাদেশ | ৩০ কার্তিক, ১৪৩১ | ১৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  রাজশাহীতে বাসচাপায় দুই মোটরসাইকেল আরোহীর নিহত
  ফ্যাসিবাদের শেকড় অনেক দূর ছড়িয়ে গেছে : আইন উপদেষ্টা

রামপালে মঞ্চস্থ হল গণহত্যা বিষয়ক নাটক ‘ডাকরা ও তারপর’

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগেরহাট

বাগেরহাটের রামপালে গনহত্যা বিষয়ক নাটক `ডাকরা ও তারপর’ মঞ্চস্থ্য করা হয়েছে। শনিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে রামপাল উপজেলার ডাকরা বধ্যভূমি সংলগ্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে এই বিশেষ নাটক মঞ্চায়ন করা হয়। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর সহযোগিতায় জেলা শিল্পকলা একাডেমীর আয়োজনে মঞ্চায়িত এই নাটক হাজারো দর্শক উপভোগ করেন। এর আগে নাটকের পটভূমি সম্পর্কিত এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্র্রী হাবিবুন নাহার এমপি। বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের পরিচালক আফসানা করিম, রামপাল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ মোয়াজ্জেম হোসেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ কবীর হোসেন, বাগেরহাট জেলা কালচারাল অফিসার মোঃ রফিকুল ইসলাম, বাশতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল, পেড়িখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাওলাদার রফিকুল ইসলাম।

নাট্যকার শামসুল হাদীর রচনা ও নির্দেশনায় মঞ্চায়িত এই নাটকে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন বেলাল হোসেন বিদ্যা। এছাড়া অর্ধশতাধিক নাট্যাঅভিনেতার পাশাপাশি ডাকরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী এই নাটকে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এক ঘন্টা ৪০ মিনিটের এই নাটকের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে রামপাল উপজেলার ডাকরা এলাকায় সংগঠিত গনহত্যার বিষয় ফুটিয়ে তোলা হয়। স্মৃতিচারণ করা হয় রাজাকার বাহিনীর হাতে নিহতদের। বেঁচে যাওয়া ভাগ্যবানরাও সেদিনের নারকীয় হত্যাকান্ডের বর্ণনা দেন। ৫০ বছর পরে হলেও এই নাটক দেখে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন স্বজন হারা ডাকরা ও আশপাশের লোকেরা।

প্রতক্ষদর্শী শিশির মজুমদার বলেন, ভারতে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা হিন্দু সম্প্রদায়ের সহস্রাধিক ডাকরা এলাকায় নোয়া ঠাকুরের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। কিন্তু রাজাকার রজ্জব আলী ফকিরের রাজাকার বাহিনী দুই দিক থেকে নৌকায় এসে এলাকায় ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়। শুধু হত্যা করেই থেমে থাকেনি তারা মূল্যবান সম্পদও লুট করেছিল সেদিন। সেদিনের ঘটনা মনে পড়লে আজও গা শিওরে ওঠে। কষ্টে চোখে জল চলে আসে।
নাট্যকার শামসুল হাদী বলেন, খুবই অল্প সময়ের এই নাটকে আমরা চেষ্টা করেছি ডাকরা গনহত্যার সম্পূর্ণ ঘটনা তুলে ধরতে। আমাদের মঞ্চায়িত নাটক সবার ভাল লেগেছে। মুক্তিযুদ্ধ ও গনহত্যার ইতিহাস বর্তমান প্রজন্মকে জানাতে আমাদের এই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ আজিজুর রহমান বলেন, গনহত্যা বিষয়ক এই নাটক বর্তমান প্রজন্মকে ১৯৭১ সালে ঘটে যাওয়া নারকীয় ঘটনা জানতে সহযোগিতা করবে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক এই ধরণের আয়োজন আরও বেশি বেশি করে মানুষকে আসল ইতিহাস জানার সুযোগ করে দিতে হবে। তাহলেই যাদের আত্মত্যাগে আমরা এই স্বাধীন দেশ পেয়েছি, তাদের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা বাড়বে। পাশাপাশি বর্তমান প্রজন্মের মানুষের মধ্যে দেশপ্রেমও বৃদ্ধি পাবে।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের পরিচালক আফসানা করিম বলেন, আমরা আসলাম, নাটক দেখলাম, বাড়িতে গিয়ে সব ভুলে গেলাম বিষয়টি তা নয়। আমরা চাই এই নাটকের মাধ্যমে প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে সেই নারকীয় হত্যার ঘটনা খোদাই করে দিতে। যাতে সবাই মুক্তিযুদ্ধ ও গনহত্যার সঠিক তথ্য মনে রাখতে পারে।

পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্র্রী হাবিবুন নাহার বলেন, বর্তমান প্রজন্মের অনেকে মনে করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা বহু আড়ামে চলে এসেছে। এজন্য কাউকে কোন ত্যাগ তিতিক্ষা বা মূল্য দিতে হয়নি। আসলে স্বাধীনতা অর্জন যে আমাদের জন্য কত কঠিন ছিল, শুধু মক্তিযোদ্ধা নয়, সাধারণ মানুষকেও স্বাধীনতা অর্জনের জন্য কত মূল্য দিতে হয়েছে, তা চিন্তার বাইরে। আজকের এই নাটিকার মাধ্যমে যাদের আত্মত্যাগে আমরা এই স্বাধীনতা পেয়েছি সে বিষয়টি আমার জানতে পারলাম।

১৯৭১ সালের ২১ মে শুক্রবার বাগেরহাটের রজ্জব আলী ফকিরের রাজাকার বাহিনী রামপাল উপজেলার পেড়িখালী ইউনিয়নের ডাকরা গ্রামে ব্যাপক গণহত্যা চালায়। গুলি ও জবাই করে তারা সেদিন প্রায় ছয় শতাধিক সাধারন মানুষকে হত্যা করে। এক সাথে রাজাকার বাহিনীর এটিই সম্ভাবত জেলার সবচেয়ে বড় হত্যাকান্ডের ঘটনা।

খুলনা গেজেট/ টি আই




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!