বাগেরহাটের রামপালে নাশকতার মামলায় ৩০ বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১৫-২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) রামপাল থানায় বিশেষ ক্ষমতা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলাটি দায়ের করেন ফয়লা পুলিশ ক্যাম্পের এসআই খন্দকার আব্দুল মবিন। এ মামলায় বিএনপি-জামায়াতের ৮ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মামলার ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ কর্মসূচি সফল করার লক্ষ্যে নাশকতামূলক কার্যক্রম সংগঠিত করতে ককটেল, লোহার রড, হাসুয়া ও বাঁশের লাঠি নিয়ে গোপন বৈঠক করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এটিকে ‘গায়েবি মামলা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন বিএনপি নেতারা।
এদিকে গেল বুধ ও বৃহস্পতিবার বাগেরহাটের বিভিন্ন থানা পুলিশ বিএনপি-জামায়াতের অন্তত ২৫ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। তাদের অধিকাংশকে ইতোপূর্বে দায়ের করা বিভিন্ন নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
রামপাল উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাফিজুর রহমান তুহিন বলেন, উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আমাদের ৮ নেতা কর্মীকে আটক করে পুলিশ মিথ্যা গায়েবি মামলা দিয়েছে। আমাদের কর্মীরা হামলা-মামলার কারনে এমনিতেই বাড়িতে থাকতে পারেন না। আবার নতুন করে মিথ্যা মামলা দিয়ে ৮ জনকে আটক করা হলো।
বৃহস্পতিবারের মামলায় ঘটনাস্থল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে রামপাল উপজেলার গোবিন্দপুর পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ। এজাহারে বুধবার দিনগত রাত ১০টার দিকে আসামিরা সেখানে পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল ছোড়ে উল্লেখ করে সেখান থেকে চারটি অবিস্ফোরিত ককটেলসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তারের কথা বলা হয়েছে।
এদিকে ওই মামলায় আটক গৌরম্ভা ইউনিয়ন পরিষদ ইউপি সদস্য সদস্য মো. আব্দুল হালিমকে এজাহারে উল্লেখীত সময়ের অন্তত ৮ ঘন্টা আগে বুধবার দুপুরে রামপাল উপজেলার প্রশাদনগর বাজার থেকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ তার পরিবারের।
আব্দুল হালিমের ছেলে মো. মহিবুল্লাহ আল সাকিব বলেন, তার বাবা গৌরম্ভা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য। তিনি দীর্ঘদিন ধরে জামায়তে ইসলামের রাজনীতিতে জড়িত। বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে তাকে আটক করে রাতে ককটেল ফাটানোর মিথ্যা অভিযোগে করা মামলায় আমার বাবাকে আটক করা হয়েছে। আমি তাঁর মুক্তি চাই।
বাইনতলা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক নেতা সাগরের স্ত্রী উর্মি বেগম বলেন, তার স্বামী দুপুরে ভাত খাওয়ার পর ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন বিকাল ৫ টার দিকে পুলিশ এসে তাকে তুলে নিয়ে যায়। পরে তিনি জানতে পারেন রাতের একটি বিস্ফোরক মামলায় তাকে আটক দেখিয়ে আদালতে চালান দিয়েছে পুলিশ।
বাগেরহাট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আকরাম হোসেন তালিম বলেন, ঢাকার মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে গেল কয়েক দিন ধরে জেলা জুড়ে গ্রেপ্তার অভিযান করছে পুলিশ। নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ তাদের খুঁজছে। গত বুধবার ও আজ বৃহস্পতিবার রামপাল উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মুজিবর রহমান বাবুল, গৌরম্ভা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি হেমায়েত শেখ, বাইনতলা ইউনিয়নের সাবেক ছাত্রনেতা হুমায়ুন কবির সাগরসহ ৮জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন গায়েবি মামলা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশের এই গায়েবি মামলার নিন্দা জানিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি জানান তিনি।
জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির এডভোকেট শেখ আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকে পুলিশ জেলাজুড়ে নেতা কর্মীদের বাড়িবাড়ি অভিযান করছে। পুলিশ বুধবার গৌরম্ভা ইউনিয়নের প্রসাদনগর এলাকার ইউপি সদস্য আ: হালিম, রাজনগর এলাকার নজিবর রহমান, সোনাতুনিয়া থেকে আলাউদ্দীন ও মোজামকে আটক করে নতুন করে গায়েবি মামলা দিয়ে আদালতে প্রেরণ করেছে।
তিনি বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের কাউকে ফয়লা, কাউকে গৌরম্ভা, কাউকে হুড়কা থেকে ধরে নিয়ে মামলার অভিযোগে লেখা হয়েছে তারা নাকি নাশকতার পরিকল্পনা করছিল। এ ধরনের গায়েবী মামলা দিয়ে সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না।
রামপাল থানার ওসি এসএম আশরাফুল আলম বলেন, নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টাকারে কিছু দূর্বৃত্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। আট জনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত অন্যদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
খুলনা গেজেট/মাসুদুল হক/এমএম