রামপালে তীব্র লবণাক্ততা ও জলবায়ু পরির্বতনজনিত কারণে দীর্ঘদিন ধরে ধানের আবাদ আশংকাজনক হারে কয়েক বছর ধরে কমে গেলেও কৃষি বিভাগের নানামূখি পদক্ষেপ ও তৎপরতায় আমন ও বোরো আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারণে এ উপজেলা ২/৩ বছর ধরে খাদ্যের স্বয়ংসম্পুর্ণ।
কৃষি বিভাগের সূত্রমতে, ১ লক্ষ ৮১ হাজার ২২৯ জন জনসংখ্যার বিপরীতে এ উপজেলায় খাদ্য চাহিদার পরিমান ৩২ হাজার ৬০৬ মেঃ টন চাল। বর্তমানে উৎপাদন হচ্ছে ৩৬ হাজার ১৯০ মেঃ টন। এর মধ্যে আমন চাল উৎপাদন হচ্ছে ১৭ হাজার ৬১৫ মেঃ টন ও বোরো আবাদ হচ্ছে ১৮ হাজার ৫৭৫ মেঃ টন।
চলতি আমন মৌসুমে এ উপজেলার ১০ ইউনিয়নে ৮ হাজার ২শ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রিড ০.৫ হেক্টর, উফশী ৩ হাজার ৯৯০ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ৪ হাজার ২০৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায়, সময়মত বৃষ্টিপাত হওয়ায় ও রোগবালাই তেমন না হওয়ায় এবং সার ও বালাইনাশক সঠিক সময় সরবরাহ করায় কৃষকরা তাদের কাংখিত ফসল ঘরে তুলতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করা হচ্ছে।
উপজেলার পেড়িখালী বাজারের কৃষক এরশাদ হাকিম জুয়েলের সাথে কথা হলে তিনি জানান, কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগীতা, পরামর্শ ও তদারকির কারণে আল্লাহর রহমতে গত বছরের চেয়ে এবার কম খরচে ভালো ফলন ঘরে তুলতে পারব।
একই কথা বলেন, হুড়কার তনয় মজুমদার, রামপালের সদরের অরবিন্দু মজুমদার, গোলাম কিবরিয়া ছোট, সিংগড়বুনিয়ার পল্লী চিকিৎসক এম এম মহিতুর রহমান।
চলতি আমন মৌসুমে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৭ হাজার ৮৭০ হেক্টর। তা বেড়ে আবাদ হয়েছে ৮ হাজার ২শ হেক্টর। যা ৩৩০ হেক্টর বেশি।
আমন আবাদের বিষয়ে রামপাল উপজেলা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি এড. মহিউদ্দিন শেখ জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে এবং তীব্র লবণাক্ততার প্রভাবে এতদিন ব্যাপক ফসলহানী ঘটেছে। কৃষকদের বাঁচাতে ও এ এলাকার পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষা করতে হলে বৈজ্ঞানিক উপায়ে বেড়িবাঁধ দিতে হবে এবং লবণ সহিষ্ণু ধানের আবাদ বৃদ্ধি করতে হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষ্ণা রানী মন্ডল এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, কৃষকদের সময় উপযোগী করে বাস্তবমুখী প্রশিক্ষণ, কৃষি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণের মনিটরিং ও মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের ফলোআপ, প্রয়োজনীয় কৃষি উপকরণ প্রদান, আধুনিক জাত নির্বাচন, হাইব্রিড জাতের আবাদ বৃদ্ধিসহ নানান পদক্ষেপের কারনে এবছর আমন আবাদে বাম্পার ফলন হয়েছে।
এ বিষয়ে রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাধন কুমার বিশ্বাস এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী কৃষিকে অগ্রাধিকার খাত হিসাবে প্রাধান্য দিয়েছেন। দেশের মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণে এবং কৃষকদের বাঁচাতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। বিশেষ করে কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন এবং মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের ঘরে ঘরে তা পৌছে দেওয়ার মত যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। তার নিদের্শনা মোতাবেক আবাদ যোগ্য জমি যাতে খালি পড়ে না থাকে সে জন্য কৃষি বিভাগের পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসনও কাজ করছে। সরকারি বিভিন্ন সহায়তা বিশেষ করে সার, বীজ ও কৃষি উপকরণ বিতরণসহ সকল বিষয় মনিটরিং এবং সঠিক ব্যবস্থাপনার কারণে আমাদের এ উপজেলা এখন খাদ্যের স্বয়ংসম্পূর্ণ এ জন্য তিনি কৃষকদের ও সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগকে ধন্যবাদ জানান।
খুলনা গেজেট/এনএম