খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  হাইব্রিড মডেলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, রাজি পাকিস্তান; ভারতের ম্যাচ দুবাইয়ে : বিসিবিআই সূত্র
  গুমের দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ সদস্য চাকরিচ্যুত, গুম কমিশনের সুপারিশে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে

রামপালে আবাসন প্রকল্পের প্রায় ৭০ টি কক্ষ শূন্য!

‌মে‌হেদী হাসান, রামপাল

বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার সবচেয়ে বড় আবাসন প্রকল্পের নাম ফয়লাহাট আবাসন প্রকল্প। নির্মাণের পর এ প্রকল্পে ধাপে ধাপে সাড়ে ৪ শ’ ভূমিহীন পরিবারের ঠাঁই হয়। অনেকে ঘর পাওয়ার পর দুই একদিন ঘরে থেকেছে। তারপর এক সময় তারা তালা ঝুলিয়ে চলে গেছে অন্যত্র। আর ফিরে আসেনি। আবার কেউ কেউ নগদ টাকায় অন্যের কাছে ঘর বিক্রি করে ফিরে গেছে পূর্বের ঠিকানায়। এখন ওই আবাসনের প্রায় ৭০ টির মতো ঘর খালি পড়ে আছে।

সরেজমিনে ওই আবাসন প্রকল্প ঘুরে ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দাউদখালী নদীতে পলি পড়ে ভরাট হলে ওই জমির শ্রেনী পরিবর্তন করেন সরকারের পক্ষে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক। এরপর ২০১০ সালে ফয়লাহাটের পার গোবিন্দপুর মৌজার খাস জমির উপর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এ আবাসন প্রকল্পে ২৮ টি পাকা ব্যারাক নির্মাণ করা হয়। প্রতিটি ব্যারাকে ৫ টি করে কক্ষ রয়েছে। এছাড়া টিন সেডের রয়েছে আরো ৪০ টি ঘর।

শুরু থেকে বসবাস করছে এমন কয়েকটি পরিবারের সাথে কথা বললে তারা জানান, যারা প্রথম পর্যায়ে ঘর পেয়েছিল তাদের অনেকেই এখন এখানে বসবাস করে না। কেউ কেউ নগদ টাকায় ঘর বিক্রি করে চলে গেছে। আবার অনেকেই দু-একদিন ঘরে থাকার পর তালা ঝুলিয়ে চলে গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, যারা ঘর পেয়েও আসে না তাদের প্রত্যকেরই বাড়ি -ঘর রয়েছে। সেখানে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছে। দুই একজন মাঝে মাঝে এসে দখল ধরে রাখতে ঘর খুলে ঝাড়ু দিয়ে চলে যান।

এক নারী জানান, সম্প্রতি তার বোন ৭০ হাজার টাকায় দুটি ঘর কিনেছেন। জানা গেল তার মতো আরো বেশ কয়েকজন ঘর কিনে বসবাস করছে। সরকারি নিয়মে আবাসনের ঘর বিক্রির কোন নিয়ম নেই। অথচ একের পর এক ঘর বিক্রি চলছে। যাদের বসবাসের কোন ব্যবস্থা নেই তারা ২০/২৫ হাজার টাকায় কিনে বসবাস করছে। কোন কোন ঘর একাধিকবার টাকার বিনিময়ে হস্তান্তর হয়েছে এমন নজিরও রয়েছে। ৪০ টি টিন সেডের ঘরের মধ্যে প্রায় অর্ধেক ঘর এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। দীর্ঘদিন পরিত্যাক্ত অবস্থায় এসব ঘর পড়ে থাকায় মরিচায় টিনের চাল, বেড়া, দরজা ও জানালা জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। বসবাসের অনুপযোগী এসব ঘরের কোন কোন ঘরে এখন সাপে বাসা বেধেঁছে।

টিনের ঘরে বসবাস করেন এমন একজন নারী বলেন, ঘর পাওয়ার পর একদিনও ঘরে আসনি এমন লোকও আছে। ঘরে বসবাস করেনা এমন কয়কজনের মধ্যে মুক্তিযাদ্ধারাও রয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করে এক সাবেক জনপ্রতিনিধি বলেন, রামপালের সাবেক ইউএনও জিল্লুর রহমানের সময় ফয়লাহাটে বসে ভূমিহীন যাচাই বাছাই করা হয়েছিল। ওই সময় স্থানীয় প্রভাবশালী কিছু নেতা মানুষের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে ঘর বরাদ্দ পেতে সহায়তা করেছিল। যারা সুবিধা দিয়ে ঘর পেয়েছিল তারাই পরবর্তীতে ঘর বিক্রি করে চলে গেছে।

আবাসনের একটি ব্যারাকে অন্যের ঘরে দুই শিশু সন্তান নিয়ে স্বামী রবিউলের সাথে থাকেন খাদিজা বেগম নামের এক নারী। জমিজমা বলতে কিছুই নেই। স্বামীর আয়ে চলে তাদের সংসার। নেই মাথা গোজার ঠাঁই। একটি ঘরের জন্য এ প্রতিবেদকের কাছে আকুতি মিনতি করে বলেন, ভাইজান অনেকে ঘরে থাকে না। সেই সব ঘরের একটি ঘর আমাকে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।

তার মতো ফাতেমা খাতুন নামের আরেক নারী বলেন, তারও বসবাসের ঘর নেই। তার এক আত্মীয়ের ঘরের বারান্দায় থাকেন। একটি শিশু সন্তান আর স্বামীকে নিয়ে কোন মতে আছেন তারা। সেও একটি ঘরের জন্য বার বার আকুতি জানাচ্ছিল। খাদিজা- ফাতেমার মতো আরো অনেকেরই নেই মাথা গোঁজার ঠাঁই। তারাও চান একটি ঘর।

এ ব্যাপারে রামপাল উপজলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কবীর হোসেন এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, যে সব কক্ষ শুণ্য পড়ে আছে সেই সব কক্ষে প্রকৃত ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হবে। যাদের ঘর নেই তারা আবেদন করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!