ব্রিটেনের মহারানি হিসেবে পরিচিত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্য আজ। পৃথিবী থেকে আজ তাকে চিরবিদায় জানাবেন তার স্বজন, শুভানুধ্যায়ীসহ বিশ্বনেতারা। স্বামীর পাশেই শায়িত করা হবে তার মরদেহ। দীর্ঘদিন ব্রিটিশ সিংহাসনে দায়িত্ব পালনকারী রানি কতটা যে জনপ্রিয়, তা তাকে শ্রদ্ধা জানাতে সাধারণ মানুষের ঢল দেখলেই বোঝা যায়। প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যেও রাস্তায় ১৭ ঘণ্টা অপেক্ষা করে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তার ভক্তরা।
গতকাল রানির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ব্রিটেন জুড়ে সরকারিভাবে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। আজ সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) শোকযাত্রার সঙ্গে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে থেকে রানির মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে লন্ডনের ওয়েলিংটন আর্চে। সেখান থেকে দেহ আনা হবে উইন্ডসোর দুর্গে। পরে সেন্ট জর্জ চ্যাপেলে আসবে রানির মরদেহ। সেখানেই রাষ্ট্রপ্রধানদের হাজির থাকার কথা। স্বামী ফিলিপের কবরের পাশেই শায়িত থাকবে রানির কফিনও। এর মধ্য দিয়ে ১০ দিনের জাতীয় শোকের সমাপ্তি ঘটবে। উল্লেখ্য, ৯৬ বছর বয়সি এলিজাবেথ সিংহাসনে আরোহণের ৭০ বছর পর ৮ সেপ্টেম্বর স্কটল্যান্ডে তার বালমোরাল এস্টেটে মারা যান।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের কফিন দেখার জন্য হাজার হাজার মানুষ, কয়েক মাসের মধ্যে লন্ডনের শীতলতম রাতে দাঁড়িয়ে কাটিয়েছে। কর্তৃপক্ষ শনিবার সতর্ক করেছে যে, এখানে আসা শোকার্ত মানুষকে ১৭ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে। তার পরও মানুষকে শ্রদ্ধা জানানো থেকে বিরত রাখা যায়নি। জনগণের ধৈর্যের প্রতি সম্মান জানিয়ে রাজা তৃতীয় চার্লস ও প্রিন্স উইলিয়াম এলিজাবেথের কফিনের পাশে অপেক্ষমাণ মানুষদের ধন্যবাদ জানাতে সেখানে এক অঘোষিত পরিদর্শনে যান। রাজপরিবারের এ দুই জ্যেষ্ঠ সদস্য জনগণের সঙ্গে করমর্দন করেন এবং ল্যাম্বেথ ব্রিজের কাছে মাইলখানেক লম্বা সারিতে অপেক্ষমাণ শোকাহতদের ধন্যবাদ জানান। ৮ সেপ্টেম্বর রাজা হওয়ার পর থেকে চার্লস তার প্রজাদের সঙ্গে যতটা সম্ভব সাক্ষাতের প্রয়াসে বেশ কয়েকটি তাৎক্ষনিক পরিদর্শনে বের হন।
দাদির মৃত্যুর পরে এখন সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হলেন উইলিয়াম। তিনি কফিনের মাথার কাছে এবং হ্যারি পায়ের কাছে দাঁড়াবেন। উভয় রাজকুমার সামরিক পোশাক পরিহিত অবস্থায় থাকবেন। তারা দুজনেই সামরিক বাহিনীতে কাজ করেছেন। শোকার্তদের মধ্যে ছিলেন ইংল্যান্ডের সাবেক ফুটবল অধিনায়ক ডেভিড বেকহাম। তিনি রানিকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য প্রায় ১২ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি সাদা শার্ট ও কালো টাই পরিহিত ছিলেন। ওয়েস্টমিনস্টার হল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে কফিনের কাছে সামান্য ঝুঁকে শেষ বারের মতো রানিকে সম্মান জানান। আজ সকাল পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য রানিকে রাখা হবে। প্রিয় রানির কফিন একবার চোখের দেখা দেখতে এডিনবরার রাস্তার দুপাশে নেমেছিল মানুষের ঢল। স্কটল্যান্ডে অনুষ্ঠান শেষে গত মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাত ৮টা নাগাদ লন্ডনে পৌঁছায় কফিন। আপাতত সেখানে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে পারছে ব্রিটেনের সাধারণ মানুষ।
ব্রিটেনের প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে শ্রদ্ধা জানাতে লন্ডনে পৌঁছেছেন বিশ্বনেতারা। গতকাল মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ বিশ্বনেতারা গতকাল রবিবার লন্ডনে যান। গতকাল রবিবার বিশ্বনেতারা রানির কফিনে শ্রদ্ধা জানান। একই দিনে রাষ্ট্রীয় এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে রাজা চার্লস এবং অন্য কয়েক জন বিশ্বনেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। স্থানীয় সময় গতকাল রাত ৮টায় পুরো দেশে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
আজ সোমবার লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে রানির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দেবেন বাইডেন। কয়েক দশকে দেখা যায়নি বিশ্বনেতাদের এমন সমাবেশে যোগ দিতে। লন্ডনে আসা প্রায় ৫০০ রাষ্ট্রপ্রধান এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন বাইডেন। রানির শেষকৃত্য এবং বিশ্বনেতাদের আগমন উপলক্ষ্যে লন্ডন জুড়ে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে ১০ হাজারের বেশি নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন ছাড়াও ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ, নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন এবং কমনওয়েলথ নেতাদের মধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে। অন্য বিশ্বনেতাদের মধ্যে অংশ নিচ্ছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ, আইরিশ প্রেসিডেন্ট তাওইস্যাচ মাইকেল মার্টিন, জার্মানির প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক-ওয়াল্টার স্টেইনমায়ার এবং ইতালির প্রেসিডেন্ট সার্জিও মাতারেলা। এছাড়া ইউরোপ জুড়ে থাকা রাজপরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত থাকবেন। ১৯৬৫ সালে উইনস্টন চার্চিলের মৃত্যুর পর ব্রিটেনে প্রথম অনুষ্ঠেয় এ রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় সোমবার লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতাদের পাশাপাশি প্রায় ২ হাজার অতিথি যোগ দেবেন।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল ৪০ বছর আগে। রানির মৃত্যুতে শোক জানিয়ে তিনি বলেন, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ছিলেন ‘অতুলনীয় মর্যাদার’ এবং শান্ত প্রকৃতির। গত বছর বাইডেন বলেছিলেন, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ তাকে তার মায়ের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। উল্লেখ্য, গত ৮ সেপ্টম্বর স্কটল্যান্ডের বালমোরাল প্রাসাদে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। —ভয়েস অব আমেরিকা, রয়টার্স ও দ্য গার্ডিয়ান