খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সোনারগাঁওয়ে টিস্যু গোডাউনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১২ ইউনিট
  আগামীতে সরকারের মেয়াদ হতে পারে চার বছর : আলজাজিরাকে ড. ইউনূস

রমজানকে সামনে রেখে সাতক্ষীরায় বেড়েছে খেজুরসহ নিত্যপণ্যের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

“রোজা আসছে শুনলেই শয়তান তার দায়িত্ব বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের কাছে হস্তান্তর করে” রোজার সময় সারা বিশ্বে বিশেষ করে মুসলিম প্রধান দেশ গুলোতে নত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য কমলেও শুধুমাত্র বাংলাদেশে বাড়ে। আমাদের দেশের ব্যবসায়িরা অধিক মুনাফা লাভের আশায় যেন রজজান মাসের অপেক্ষায় থাকেন। তাই আসন্ন রমজান উপলক্ষে ইতিমধ্যে সাতক্ষীরার বাজারে কয়েকটি জিনিস ছাড়া প্রায় প্রতিটি নিত্য পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।

মঙ্গলবার (৫ মার্চ) সকালে সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বড়বাজারে রোজার বাজার করতে এসে আক্ষেপ করে এসব কথা বলছিলেন রাধানগর এলাকার মনিরুল ইসলাম মিনি। তিনি বলেন, পত্রপত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরেছি রমজান উপলক্ষে সৌদি আরবে খেজুরের দাম অনেক কমিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু সাতক্ষীরার বাজারে প্রকারভেদে সব ধরনের খেজুরের দাম গত বছরের তুলনায় কেজি ৩শ’ থেকে ৫’শ টাকা বেশি। একই সাথে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বেশ কয়েকটি মসলাজাতীয় পণ্য। বেড়েছে আলু পেঁয়াজ ও রসনের দাম। বেড়েছে গ্যাস সিলিন্ডারের দাম। প্রতিটি গ্যাস সিলিন্ডার বিইআরসি নির্ধারিত মল্যের চেয়ে প্রায় একশ’ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। রমজান আসলেই আমাদের দেশে সব ধরণের পণ্যের দাম বেড়ে যায়। যেন দেখার কেউ নেই। তিনি রমজানে বাজারে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়িমিত মনিটরিংয়ের দাবি জানান।

আশাশুনির বিছট গ্রামের স.ম নুরুল আলম জানান, গত বছর রমজানে যে খেজুর ৯০০ টাকা কেজি কিনেছিলাম আজ সুলতানপুর বড়বাজার থেকে সেই একই ধরনের খেজুর কিনলাম ১২’শ টাকা কেজি দরে। সৌদি আরবে খেজুরের দাম কমলেও বেড়েছে বাংলাদেশে। বাজার দর নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় ব্যসায়িরা রমজান মাসকে অধিক মুনাফার মাস হিসাবে টার্গেট করে ব্যবসা পরিচালনা করে থাকেন।

শহরের মুনজিতপুর এলাকার গৃহনী শারমিন একরাম বলেন, সরকারিভাবে সোয়াবিন তেলের দাম কেজিতে ১০টাকা কমিয়ে দেয়া হলেও সাতক্ষীরার বাজারে এখনো তার প্রভাব তেমন পড়েনি। এখনো বাজারে প্রায় আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে সোয়াবিন তেল। তিনি বাজারের একটি দোকান থেকে সরিষার তেল ১৮০ টাকা ও খোলা সয়াবিন কিনেছেন ১৬৫ টাকা কেজি দরে। অথচ সরকার নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ি খুচরা বাজারে সোয়াবিন তেল ১৫৯ টাকা বিক্রি হওয়ার কথা।

মঙ্গলবার সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বড়বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে আলুর দাম কেজিতে ৮/৯ টাকা বেড়েছে। এক সপ্তাহ আগে যে আলু পাইকারি বাজারে ২০ টাকা কেজি ছিল তা বিক্রি হচ্ছে ২৮/২৯ টাকা কেজি। দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা ও পেঁয়াজ ৮৫ থেকে ৯৫ টাকা কেজি। চায়না রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা কেজি। এক সপ্তাহর ব্যবধানে এদুটি পণ্যের দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। গোল মরিচ ৮০০ টাকা কেজি। কিছু দিন আগে ছিল ৭২০ টাকা। জিরা ১০০০ টাকা, ভারতীয় জিরা ৮০০ টাকা, আস্ত ধনিয়া ৩০০ টাকা, ছোলা ১০০ টাকা, বুট ৭৫ টাকা, ব্যাসন ৮০ টাকা, ইসুব গুলের ভূষি ১৬শ’ টাকা কেজি, মিছিরি ১৫০ টাকা এবং চিনি লাল ১৬০ টাকা কেজি এদিকে শহরের কয়েকটি গ্যাস সিলিন্ডারের দোকান ঘুরে দেখা গেছে ১২ কেজির প্রতিটি সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে ১৫৩০ থেকে ১৫৬০ টাকা পর্যন্ত।

অথচ গত ৩ মার্চ বাংলাদেশে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) ১২ কেজির একটি গ্যাস সিলিন্ডার ১৪৭৪ টাকা থেকে ১০ টাকা বাড়িয়ে। ১৪৮৪ টাকা মূল্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু দোকানে বিক্রি হচ্ছে ১৫৩০ থেকে ১৫৬০ টাকা পর্যন্ত বিইআরসি নির্ধারিত মূল্যের চয়ে ভোক্তা পর্যায় প্রতিটি গ্যাস সিলিন্ডার ৪৫ টাকা থেকে ৭০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে

সাতক্ষীরা শহরের মুনজিতপুর এলাকার খুচরা গ্যাস ব্যবসায়ি উজ্জল বলেন, আমার প্রতিটি সিলিন্ডাব কেনার উপর ৪০ থেকে ৫০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করে থাকি ডিলারবা আমাদের কাছ থেকে দাম কম না নেওয়ায় আমরাও ক্রেতাদের কাছ থেকে কম নিতে পারিনা।

সুলতানপুর বড়বাজারের খুচরা ব্যবসায়ি আনোয়ার হোসেন জানান, গত বছরের তুলনায় এবার প্রতিটি খেজুরের দাম কেজিতে ২ থেকে ৩শ’ টাকা বেশি। ২১০ টাকার দাবাস খেজুর এবার কিনতে হচ্ছে ৪২০ টাকায় তনয়। একই ভাবে ৬শ’ টাকার যমজম খেজুর ৯শ’ টাকায় ও ৭শ’ টাকার মমতাজ খেজুর ১০০০ এবং ৯০০ টাকার মরিয়ম খেজুর ১২০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে বছর বস্তার যে খেজুর ১১০ থেকে ১১৫ টাকায় কিনেছি এবার সে খেজুর কিনতে হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা কেজি দরে। তবে শুকনা মরিচ ও জিবার দাম একটু কমলেও অন্যান্য মসলা জাতীয় পণ্যের দাম বাড়তি রয়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি আরো বলেন, অর্ডার নিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত সরকার নির্ধারিত মূল্যে সোয়াবিন তেল সরবরাহ করেনি কমিশন এজেন্টরা। তবে ৫ লিটারে সোয়াবিন তেল তারা ৮০০ টাকায় বিক্রি করছেন।
অপরদিকে সাতক্ষীরার পাইকারী মসল্যা বাজারে শুকনা মরিচের দাম কমেছে। এক মাসের ব্যবধানে কেজিতে ৭০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। একই ভাবে খুচরা বাজারেও দাম কমে গেছে শুকনা মরিচের। আড়তদার ও পাইকারী ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়াতে দাম কমেছে শুকনা মরিচের। ফলে তার প্রভাব খুচরা বাজারেও পড়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। একইভাবে কমেছে জিরার দাম। ১২শ’ টাকা কেজি দরের জিরা এখন বিক্রি হচ্ছে ১০০০ টাকায়। বর্তমানে বাজারে শুকনা মরিচ পাইকারী বিক্রি হয়েছে কেজি প্রতি ৩৯০ টাকা দরে। যা এক মাস আগেও বিক্রি হয়েছে ৩৭০ থেকে ৪৮০ টাকা কেজি দরে। দাম কমার কারণ হিসেবে ব্যবসায়িরা জানান, সম্প্রতি বাজারে শুকনা মরিচ আমদানি বেড়েছে ব্যাপক ভাবে। যে কারনে পাইকারী ও খুচরা বাজারে দাম কমেছে।

সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরের মসল্যাজাত পণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্টান মেসার্স রাফসান এন্টারপ্রাইজের স্বত্তাধিকারী মোঃ আবু হাসান জানান, ভারতে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় সম্প্রতি শুকনা মরিচ আমদানি বেড়েছে। বর্তমান সপ্তাহে ১৮ থেকে ২০ ট্রাক শুকনা আমদানি হচ্ছে। যা এক থেকে দেড় মাস আগেও সপ্তাহে আমদানি ছিলো ১০ থেকে ১২ ট্রাক।

তিনি বলেন, আমদানিকৃত এসব শুকনা মরিচ স্থানীয় জেলার পাশাপাশি ঢাকা ও চট্রোগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

এব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা মার্কেটিং কর্মকর্তা আবু সাঈদ মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ বলেন, শুধু শুকনা মরিচই নয় রমজানের আগে পর্যায়ক্রমে সবধরনের মসল্যা বা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমে যাবে। ইতিমধ্যে শুকনা মরিচ, পেঁয়াজ ও জিরার দাম কমে গেছে। বাজার মনির্টারিং এর জন্য জেলা প্রশাসনের সাথে সমম্বয় রেখে কাজ করা হবে বলেও জানান তিনি।

খুলনা গেজেট/ টিএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!