খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২১ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে একদিনের ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ২১৪

রক্ষণশীল পরিবার থেকে উঠে আসা সফল নারী লিপি খাতুন

একরামুল হোসেন লিপু

লিপি খাতুনের বেড়ে ওঠার পেছনে কোন দারিদ্রতা ছিল না। কিন্তু পারিবারিক কিছু বাধা ছিলো। সেই বাধাগুলো অতিক্রম করে তিনি হয়েছেন একজন সফল নারী। একজন আদর্শ শিক্ষক। কাব্যগ্রন্থ “বন্দিনী”র রচয়িতা। তিনবার উপজেলা পর্যায়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেষ্ঠ শিক্ষিকার মর্যাদায় ভূষিত হয়েছেন।

প্রতিভাময়ী লিপি খাতুনের জন্ম ১৯৭২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার দিঘলিয়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। পিতার নাম মরহুম আলহাজ্ব সোলায়মান বিশ্বাস। কড়া রক্ষণশীল পরিবারে বেড়ে ওঠা। ৭ ভাই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন চতুর্থ। ছোটবেলা থেকে খুবই মেধাবী চঞ্চল এবং মিশুক প্রকৃতির ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই পারিবারিক রক্ষণশীলতা ভেদ করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার অদম্য ইচ্ছা শক্তি ছিলো তার।

শৈশব এবং কৈশোর কেটেছে ভৈরব নদীর পাড়ে দিঘলিয়া গ্রামে। দিঘলিয়া (দঃ)সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে আনুষ্ঠানিক লেখা পড়ার হাতেখড়ি। এরপর দিঘলিয়া এম এ মজিদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৮৮ সালে ১ম বিভাগে এসএসসি পাস করেন। ১৯৯০ সালে সরকারি এম এ মজিদ ডিগ্রী কলেজ থেকে ১ম বিভাগে মানবিক শাখা থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে ভর্তি হন সরকারি বিএল কলেজে। ১৯৯৩ সালে বিএল কলেজ থেকে অর্থনীতিতে অনার্স সম্পন্ন করে ১৯৯৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।

পড়াশোনা শেষ করার পর নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে সরকারি চাকুরীর জন্য পরীক্ষা দিতে থাকেন। ১৯৯৮ সালে সাফল্য তার হাতের মুঠোয় ধরা দেয়। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে চাকুরী পেয়ে যান। এক বছর পর ১৯৯৯ সালে প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে সাফল্যে উত্তীর্ণ হন। বর্তমানে তিনি দিঘলিয়া উপজেলার ৩৪ নং প্রতিভাবময়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিক হিসাবে সততা, দক্ষতা, যোগ্যতা এবং নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

উপজেলা পর্যায়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্যাটাগরিতে প্রাথমিক শিক্ষা পদক ২০২৩ এ শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষিকা নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া গত বছর এবং ইতিপূর্বে আরও একবার মোট তিনবার একই উপজেলার শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষিকা নির্বাচিত হয়েছেন। এ বছর জেলা পর্যায়ে প্রতিযোগিতার জন্যও তিনি নির্বাচিত হয়েছেন। শিক্ষকতা চাকুরীর পাশাপাশি তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২০১৬ সালে বিএড এবং ২০১৯ সালে সাফল্যের সাথে এম এড ডিগ্রী অর্জন করেন।

তিনি খুলনা বেতারের ঘরোয়া অনুষ্ঠানের একজন নিয়মিত আলোচক। ছোটবেলা থেকে লিপি খাতুনের বই পড়ার প্রতি অদম্য ইচ্ছা। চরম সামাজিক বাধা অতিক্রম করে লেখালেখি অব্যাহত রেখেছেন। তাঁর ১ম কাব্যগ্রন্থ “বন্দিনী” প্রকাশনার দুর্দুমনীয় ইচ্ছাশক্তির বহিঃপ্রকাশ।

ব্যক্তি জীবনে লিপি খাতুন তিন সন্তানের গর্বিত জননী। স্বামীর সঙ্গে বসবাস করেন খুলনা মহানগরীর খালিশপুর এলাকায়। বড় মেয়ে সাদিয়া আফরিন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রনিক্স এ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ECE) তৃতীয় বর্ষের একজন মেধাবী ছাত্রী। একমাত্র ছেলে ফাহিম আলম বাংলাদেশ নৌবাহিনী স্কুল এন্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণী এবং ছোট মেয়ে নওশীন তাবাসসুম তিশা একই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী।

লিপি খাতুন যেন পরবর্তী পর্যায়ে নিজের সততা, মেধা, যোগ্যতা, এবং কর্মতৎপরতার মাধ্যমে আরো সাফল্য অর্জন করতে পারেন এবং চাকুরী জীবনে অবসরে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সাফল্যের ধারা অব্যাহত রেখে একজন আদর্শ শিক্ষক হতে পারেন সেজন্য সকলের দোয়া প্রার্থনা করেছেন।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!