আমাদের শরীরের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন হলো ‘ভিটামিন ডি’। যাকে আমরা ‘সানশাইন ভিটামিন’ নামেও চিনি। সূর্যের আলো ত্বকে পড়লে শরীরে কোলেস্টেরল থেকে তৈরি হয় এই ভিটামিন। এর প্রভাব কেবল হাড় নয়, বরং স্নায়ুতন্ত্র, পেশি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপরও পড়ে। অথচ আমাদের অনেকেই বুঝতেই পারি না যে, শরীরে এই গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিনের ঘাটতি হচ্ছে। কিছু লক্ষণ সময়মতো ধরতে পারলে সমস্যা গভীর হওয়ার আগেই সমাধান করা সম্ভব।
ভিটামিন ডি-র ভূমিকা: ভিটামিন ডি শরীরের ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। ক্যালসিয়াম শোষণের মাধ্যমে এটি হাড়কে শক্ত করে, গঠন ও রক্ষণাবেক্ষণে সহায়তা করে। এর অভাবে রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা কমে গিয়ে শরীর হাড় থেকে ক্যালসিয়াম টানতে শুরু করে। ফলে হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে, প্রাপ্তবয়স্কদের অস্টিওম্যালাসিয়া (নরম হাড়) এবং শিশুদের রিকেটের ঝুঁকি বাড়ে।
যেসব লক্ষণে বুঝবেন ভিটামিন ডি’র ঘাটতিতে ভুগছেন: আমাদের শরীর নানানভাবে সংকেত পাঠায়। শরীরে ভিটামিন ডি’র অভাব দেখে দিলেও বেশ কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায় বলছেন চিকিৎসকরা। এগুলো হলো:-
১. হাড় ও পিঠে ব্যথা
ভিটামিন ডি এর অভাবের কারণে শরীর ক্যালসিয়াম শোষণ করতে পারে না, যার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যায়। হাড় ও পিঠের নিচের অংশে ব্যথা অনুভব হলে সেটি হতে পারে ভিটামিন ডি কমে যাওয়ার লক্ষণ।
২. দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি
অকারণে সবসময় ক্লান্ত লাগা বা ঘুমিয়েও সতেজ না লাগা—এমন সমস্যার পেছনে ভিটামিন ডি এর অভাব থাকতে পারে।
৩. ক্ষত সারতে দেরি হওয়া
শরীরের ক্ষত দ্রুত শুকিয়ে না যাওয়ার পেছনে থাকতে পারে এই ভিটামিনের ঘাটতি। কারণ, ভিটামিন ডি ত্বকের কোষ পুনর্গঠনে সহায়ক।
৪. হাড় ভাঙার ঝুঁকি বৃদ্ধি
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়, তবে যাদের শরীরে ভিটামিন ডি এর মাত্রা কম, তাদের ক্ষেত্রে হাড় ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে—বিশেষ করে নারীদের।
৫. পেশি ব্যথা
দীর্ঘমেয়াদি ব্যথায় ভুগছেন এমন অনেক ব্যক্তির শরীরেই দেখা গেছে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি। এটি পেশিকে দুর্বল করে তোলে এবং ব্যথার কারণ হতে পারে।
৬. ঘন ঘন অসুস্থ হওয়া
ভিটামিন ডি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এর অভাবে শরীর সহজেই ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে আক্রান্ত হয়। ফলে বারবার সর্দি-জ্বর বা অন্যান্য সংক্রমণ দেখা দিতে পারে।
৭. মন খারাপ বা বিষণ্নতা
মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গেও জড়িত রয়েছে ভিটামিন ডি। এর ঘাটতি হলে মুড বদলে যেতে পারে, বিষণ্নতা বাড়তে পারে। বিশেষ করে যারা দীর্ঘদিন ধরে হতাশায় ভোগেন, তাদের রক্তে ভিটামিন ডি এর মাত্রা পরীক্ষা করানো উচিত।
করণীয় কী?
প্রয়োজনের তুলনায় কম সূর্যালোক পাওয়া, সুষম খাদ্যাভ্যাসের অভাব কিংবা বয়সজনিত কারণে অনেক সময় শরীরে ভিটামিন ডি এর মাত্রা কমে যায়। তাই প্রতিদিন কিছুটা সময় রোদে হাঁটা, দুধ, ডিমের কুসুম, মাশরুম, সামুদ্রিক মাছ ইত্যাদি খাদ্য তালিকায় রাখা জরুরি। তবে সন্দেহ থাকলে অবশ্যই রক্ত পরীক্ষা করে পরামর্শ নিতে হবে চিকিৎসকের।
ভিটামিন ডি এর ঘাটতি দেখেও না দেখার ভান করলে ভবিষ্যতে হাড়ের জটিলতা থেকে শুরু করে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার বিপর্যয় পর্যন্ত হতে পারে। তাই সচেতন হোন, নিজেকে সুস্থ রাখুন।
খুলনা গেজেট/এনএম