করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি সারাদেশে ১৪ দিনের পূর্ণ শাটডাউনের সুপারিশ করেছে। এটি বাস্তবায়নের চিন্তাভাবনা করছে সরকার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ১৪ দিনের পূর্ণ শাটডাউন বাস্তবায়ন হলে জরুরি পরিষেবা ছাড়া সরকারি-বেসরকারি সব অফিস ও দোকানপাট বন্ধ থাকবে। কঠোরভাবে মানুষের চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করা হবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে কাউকে বের হতে দেওয়া হবে না।
সরকার এমন চিন্তাভাবনা করছে বলে শুক্রবার বিকেলে গণমাধ্যমকে জানান জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাতে বের হতে না হয় সেজন্য শ্রমজীবী মানুষদের সহযোগিতা করা হবে। সরকারি ও বেসরকারি অফিস-আদালত বন্ধ রাখারও চিন্তাভাবনা আছে।’
তিনি আরও বলেন, কোরবানির ঈদ সামনে। এ ঈদের আগে যাতে স্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হয়, সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) বিকেলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকার করোনা পরিস্থিতি খুব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় যেকোনো সময় যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি বলেন, আমরা জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সুপারিশ বিবেচনায় নেব। করোনা সংক্রমণ কমানোর জন্য যা করা প্রয়োজন আমরা তাই করব। পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে উপযুক্ত সিদ্ধান্তই আমরা নেব।
ওইদিন কোভিড-১৯ কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে সারাদেশে ১৪ দিনের ‘শাটডাউন’- এর সুপারিশ করা হয়। এতে বলা হয়, দেশে কোভিড-১৯ রোগের ভারতীয় ডেল্টা ধরনের সামাজিক সংক্রমণ চিহ্নিত হয়েছে। ইতোমধ্যে এর প্রকোপ অনেক বেড়েছে। এ প্রজাতির জীবাণুর সংক্রমণ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বিশ্লেষণে সারাদেশেই উচ্চ সংক্রমণ, পঞ্চাশটির বেশি জেলায় অতি উচ্চ সংক্রমণ লক্ষ্য করা গেছে। এটি প্রতিরোধে খণ্ড খণ্ডভাবে নেওয়া কর্মসূচির উপযোগিতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। অন্যান্য দেশ, বিশেষত পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের অভিজ্ঞতা হলো, কঠোর ব্যবস্থা ছাড়া এর বিস্তৃতি প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। ভারতের শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তাদের মতামত অনুযায়ী, যেসব স্থানে পূর্ণ ‘শাটডাউন’ প্রয়োগ করা হয়েছে সেখানে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা গেছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বর্তমান পরিস্থিতিতে রোগের বিস্তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া ঠেকাতে এবং জনগণের জীবনের ক্ষতি প্রতিরোধে কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে সারাদেশে কমপক্ষে ১৪ দিন সম্পূর্ণ ‘শাটডাউন’ দেওয়ার সুপারিশ করছে। জরুরি সেবা ছাড়া যানবাহন, অফিস-আদালতসহ সবকিছু বন্ধ রাখা প্রয়োজন। এ ব্যবস্থা কঠোরভাবে পালন করতে না পারলে আমাদের যত প্রস্তুতিই থাকুক না কেন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অপ্রতুল হয়ে পড়বে।
এদিকে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার (২৫ জুন) দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু দেখল দেশ। এদিন স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ১০৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখন পর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে ১৩ হাজার ৯৭৬ জনের। একদিনে সর্বাধিক ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে খুলনায়; ঢাকায় মারা গেছেন ২৫ জন।
২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন পাঁচ হাজার ৮৬৯ জন। মোট শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৮ লাখ ৭৮ হাজার ৮০৪ জনে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, চলতি বছরের ১৯ এপ্রিল দেশে করোনায় সর্বাধিক ১১২ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তার আগের দিন ১৮ এপ্রিল ১০২ জন মারা যান। এছাড়া ১৬, ১৭ ও ২৫ এপ্রিল ১০১ জন করে মারা যান।