আপনি যদি মার্কিন নাগরিক হন আর করোনায় সংক্রমিত হয়ে থাকেন, তাহলে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প যে চিকিৎসা পেয়েছেন সেই একই চিকিৎসা আপনিও প্রত্যাশা করতে পারেন না। এটা সুস্পষ্ট যে, দেশের প্রেসিডেন্ট একটু বাড়তি মনোযোগ পাবেন এবং সর্বোচ্চ সেবা পাবেন। কিন্তু তিনি এমন কিছু চিকিৎসা পেয়েছেন, যা সাধারণ মানুষের জন্য প্রযোজ্য নয় অথবা পর্যাপ্ত নয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন তার লাখ লাখ অনুসারীকে ‘করোনায় ভয় পাবেন না’ অভয়বাণী শুনিয়েছেন, তখন এই সত্যটা যেন হারিয়ে গেছে।
সোমবার তিনি টুইটে বলেছেন, ২০ বছর আগে আমি যেমন সুস্থ ছিলাম। তার চেয়ে বেশি সুস্থ বোধ করছি। কিন্তু তিনি এ বিষয়টি এতে উল্লেখ করেন নি যে, তিনি যে ওষুধ ও চিকিৎসা সুবিধা পেয়েছেন তা পাওয়ার সুবিধা নেই অন্য মার্কিনিদের।
শুক্রবার রাতে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল। এর আগে তাকে রিজেনারনের পরীক্ষামূলক এন্টিবডি থেরাপি দেয়া হয়েছিল। এই থেরাপি করোনা ভাইরাসের লেভেলকে কমিয়ে আনে এবং ২৭৫ জন রোগীর ওপর পরীক্ষায় তা প্রতিশ্রুতিশীল ফল দেখিয়েছে। কিন্তু এই চিকিৎসাকে এখনও যুক্তরাষ্ট্রের ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দেয়নি।
বায়োটেক কোম্পানি রিজেনারন বলেছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চিকিৎসকদের অনুরোধে তারা ওই ওষুধটি সরবরাহ দিয়েছে। অনলাইন সিএনএনে এসব কথা লিখেছেন সাংবাদিক হোলি ইয়ান।
মায়ো ক্লিনিক বলেছে, বেশির ভাগ মানুষের ক্ষেত্রে অনুমোদনহীন ওষুধ ব্যবহারের এমন অনুরোধ রাখা একটি দীর্ঘ ও চ্যালেঞ্জিং প্রক্রিয়া। এক্ষেত্রে একগাদা চাহিদার তালিকা পূরণ করতে হয় রোগীকে। কিন্তু হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ও ট্রাম্পের এক চিকিৎসকের মতে, ট্রাম্পের করোনা পজেটিভ পাওয়ার ঠিক একদিন পরেই শুক্রবার তাকে ওই থেরাপি দেয়া হয়েছিল।
মহামারি বিশেষজ্ঞ ডা. সীমা ইয়াসমিন বলেন, অবশ্যই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। জরুরি চিকিৎসার ক্ষেত্রে তিনি ওইসব এন্টিবডি পেতে পারেন, যদি তা অনুমোদিত হোক বা না হোক। কিন্তু গত কয়েক মাসে যুক্তরাষ্ট্রে মারা গেছেন দুই লাখ ১০ হাজারের মতো মার্কিনি। তাদের বিষয়ে তেমন সাড়া মেলেনি এবং অবশ্যই তারা এই ধরনের চিকিৎসা পাননি। ট্রাম্প এক্ষেত্রে যে সুবিধা পেয়েছেন, তিনি শুধু সেটা দিয়েই যুক্তরাষ্ট্রে লাখ লাখ আক্রান্ত মানুষের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করেছেন। পরীক্ষামুলক এন্টিবডি থেরাপিতে ট্রাম্পকে আরো দেয়া হয়েছিল রেমডিসিভির এবং ডেক্সামেথাসন।
জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির মেডিসিন বিষয়ক প্রফেসর ড. জোনাথন রেইনার বলেন, এই গ্রহে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পই হয়তো একমাত্র রোগী, যিনি এসব ওষুধের একটি সমন্বিত চিকিৎসা পেয়েছেন। জরুরি ভিত্তিতে রেমডিসিভির ব্যবহারের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় দেখা গেছে, রেমডিসিভিরের ৫ দিনের কোর্স অনেক রোগীর সুস্থ হওয়ার গতি ত্বরান্বিত করেছে। রেমডিসিভির দেয়া হয় আইভি পদ্ধতিতে। তাই কাউকে ৫ দিনের কোর্সের এই ওষুধটি নিতে হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়।
কিন্তু ট্রাম্পকে তার এই কোর্স শেষ হওয়ার আগেই সোমবার বাসায় ফিরতে অনুমোদন দিয়েছেন চিকিৎসকরা। অন্য মার্কিনিদের মতো তিনি নন। তার জন্য হোয়াইট হাউজে আছে হোয়াইট হাউজ মেডিকেল ইউনিট। তার চিকিৎসক ডা. সিন কোনলি বলেছেন, সেখানে সার্বক্ষণিকভাবে ট্রাম্পকে বিশ্বমানের সেবা দেয়া হবে । সূত্র: সিএনএন
খুলনা গেজেট/এনএম