দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়নে বর্তমান প্রতিমন্ত্রী, হুইপসহ তিনজন বাদ পড়েছেন। তারা হলেন খুলনা-১ (দাকোপ-বাটিয়াঘাটা) আসনে এমপি ও হুইপ পঞ্চানন বিশ্বাস, খুলনা-৩ (খালিশপুর-দৌলতপুর) আসনের এমপি শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) আসনে মো. আখতারুজ্জামান বাবু। এর মধ্যে সবচেয়ে চমক সৃষ্টি হয়েছে খুলনা-৬ (কয়রা-পাইকগাছা) আসনে। এখানে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও লবণ পানির ঘেরবিরোধী আন্দোলনের নেতা মো. রশীদুজ্জামান।
এদিকে বর্তমান সংসদ সদস্যের বাদ পড়ায় শুরু হয়েছে নানা আলোচনা। কী কারণে বাদ পড়লেন, কেন বাদ পড়লেন তা নিয়ে চলছে দলীয় নেতাকর্মীসহ নির্বাচনী এলাকার মানুষদের নানা মন্তব্য। তবে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, বাদ পড়া এমপিদের মধ্যে একজন অসুস্থতা ও বার্ধ্যকজণিত কারণে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন। অপর দুইজনের বিরুদ্ধে দল ও দলের বাইরে একাধিক অভিযোগ থাকায় ইমেজ সংকটে ভুগছিলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুলনা-৩ আসনে দীর্ঘদিন সংসদ নির্বাচিত হয়েছেন আসছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। তিনি দীর্ঘদিন শ্রমিক রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য। সাদাসিদে জীবনযাপনে অভ্যস্ত এই নারী নেত্রী সব সময়ই নেতাকর্মীদের কাছে অন্য উচ্চতায় আসীন ছিলেন। তবে মন্ত্রী হয়ে নিজ ভাই সাহাবুদ্দিন আহমেদকে ব্যক্তিগত সহকারী নিয়োগ দিয়ে সমলোচনায় পড়েন। পরবর্তীতে মন্ত্রীর ভাই সাহাবুদ্দিন, সাহাবুদ্দিনের স্ত্রী ও কন্যার বিরুদ্ধে নিয়োগ, সিন্ডিকেট গড়ে তোলাসহ গণমাধ্যমে বিভিন্ন খবর প্রকাশিত হয়। বিশেষ তাদের দাপটে শ্রম মন্ত্রণালয়ে অসন্তোষ রয়েছে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তরের একটি সূত্র জানিয়েছেন, বেগম মন্নুজান সুফিয়ানকে তার পরিবারের লোকরাই ডুবিয়েছে। নেত্রী থেকে এমপি, এমপি থেকে মন্ত্রী হয়েও বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের ব্যক্তি জীবনের খুব পরিবর্তন হয়নি। অথচ তার এই আত্মীয়রা ফুলে-ফেঁপে উঠেছেন, যার খেসারত দিতে হয়েছে একজন মাঠের নেতাকে। এই আসনটিতে এবার মনোনয়ন পেলেন সাবেক ছাত্রনেতা ও দলটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন।
অপরদিকে খুলনা-১ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য পঞ্চানন বিশ্বাস বর্তমান সংসদের হুইপ ছিলেন। একাধিক বারের এই সংসদ সদস্য বয়সজণিত কারণে দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। ফলে দলীয় ও সরকারি কার্যক্রমে তিনি অনেকটাই নিস্ক্রীয় হয়ে পড়েন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে এবার বাদ পড়েছেন তৃণমূল স্তরের এই নেতা। এখানে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক এমপি ননী গোপাল মন্ডল।
এদিকে সবচেয়ে চমক দেখা দিয়েছেন খুলনা-৬ আসনে। এখান থেকে বাদ পড়েছেন সাবেক ছাত্রনেতা মো. আখতারুজ্জামান বাবু। এর আগের একাদশ জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়ে চমক দেখিয়েছিলেন এই নেতা। তিনি ছিলেন খুলনার বয়সে সর্বকনিষ্ঠ এমপি। কিন্তু এক মেয়াদেই মনোনয়ন দৌড়ে হেরে গেলেন তিনি।
দলটির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সংসদ সদস্য আখতারুজ্জামান বিভিন্ন সময়ে খবরের শিরোনাম হয়েছেন। এতে দলের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। আওয়ামী লীগের স্থানীয় কোন্দলও তাকে কোণঠাসা করে রাখে। ফলে প্রতিটি দুর্যোগে এলাকায় থাকা, উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেও শেষ হাসি হাসতে পারেননি। এই এমপির বিরুদ্ধে সর্বশেষ ঠিকাদারী করার অভিযোগ করা হয়।
অপরদিকে এবারও এ আসনটিতে মনোনয়নের ক্ষেত্রে চমক দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এবার এখানে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা মো. রশীদুজ্জামান। এক সময়ের সিপিবি’র এই রাজনীতিক লবণ পানিতে ঘের বিরোধী আন্দোলনের নেতা হিসেবে এলাকায় পরিচিত।
খুলনা গেজেট/কেডি/এনএম