জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব সত্ত্বেও গাজা উপত্যকায় ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ৮১ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। আহত হয়েছে প্রায় একশ। নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্র সব সময়ের মতো ‘ভেটো (আমি এটা মানি না)’ প্রয়োগ না করায় নাখোশ হয়ে ইসরায়েলি প্রশাসন তাদের প্রতিনিধিদলের ওয়াশিংটন সফর বাতিল করেছে। আর ইসরায়েল রাফাহ অভিযানের ব্যাপারে এখনো অনড়।
গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার ১৭০ দিন পর গত রবিবার যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব পাস হয় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে। এবারের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের বিপক্ষে কোনো যুক্তি বা ভেটো দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। যদিও এর আগে গাজায় যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত জাতিসংঘের সব প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে দেশটি। যুক্তরাষ্ট্রের এমন কা-ে ক্ষুব্ধ হয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
মার্কিন সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স জানান, গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব পাস এবং যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের জেরে ইসরায়েলি প্রতিনিধিদলের যুক্তরাষ্ট্র সফর বাতিল করেছেন নেতানিয়াহু। গাজার রাফাহ শহরে সামরিক অভিযানের বিষয়ে আলোচনার জন্য আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কথা ছিল জ্যেষ্ঠ ইসরায়েলি নেতাদের। রাফাহ শহরে ইসরায়েলের প্রস্তাবিত অভিযানের বিষয়ে অনেকদিন ধরেই আপত্তি জানিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এই অভিযানের সিদ্ধান্তে অনড়।
নিরাপত্তা পরিষদের ১০ অস্থায়ী সদস্যের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের পক্ষে ১৪টি দেশ ভোট দিয়েছে। অন্যদিকে সেখানে একমাত্র দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ভোটদান থেকে বিরত ছিল। এছাড়া প্রস্তাবটির বিপক্ষে কোনো যুক্তি উপস্থাপন বা ভেটো ক্ষমতারও প্রয়োগ করেনি পরাশক্তি এই দেশটি।
জাতিসংঘের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে গাজায় যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের দ্রুত ও নিঃশর্ত মুক্তির বিষয়টিও উল্লেখ রয়েছে। অন্যদিকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস হওয়া সত্ত্বেও গাজায় হামলা বন্ধ করবে না ইসরায়েল, জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সের এক পোস্টে কাটজ বলেন, ‘ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি করবে না। আমরা হামাসকে ধ্বংস করব এবং সমস্ত বন্দিকে ঘরে ফিরে না আসা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাব।’
জাতিসংঘে ইসরায়েলপন্থি অবস্থানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা ঐতিহাসিক। তবে সবাইকে অবাক করে দিয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের ভেটো না দেওয়ার এমন নীতি নজিরবিহীন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে গাজা নিয়ে ইসরায়েলের নেতৃত্বের প্রতি ওয়াশিংটনের ক্রমবর্ধমান হতাশা মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার জন্য ইসরায়েলকে এখনো যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট পরিণতির মুখোমুখি হতে হয়নি।
অনেক বিশ্লেষক যুক্তরাষ্ট্রের এই ভূমিকায় বড় বাঁক বদল লক্ষ করছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষক অ্যাডাম শাপিরো বলেন, ‘এটি বড় একটি পরিবর্তন। কিন্তু এই কারণে ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ হয়নি। তা সত্ত্বেও এটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ কাজ।’
মার্কিন প্রশাসনের এমন মনোভাব বদলকে ইতিবাচকভাবে নেয়নি ইসরায়েলের বর্তমান সরকার। নেতানিয়াহুর দপ্তর থেকে ইস্যুকৃত বিবৃতিতে ইসরায়েলি প্রতিনিধিদলের ওয়াশিংটন সফর বাতিলের কথা জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়েছে, ইসরায়েলের যুদ্ধচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করেছে ওয়াশিংটন।
অবশ্য ভেটো না দেওয়াকে মৌলিক নীতির পরিবর্তন হিসেবে দেখে না মার্কিন প্রশাসন। হোয়াইট হাইজের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মুখপাত্র জন কারবি গত রবিবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভেটো না দেওয়া কখনোই আমি আবারও বলছি আমাদের নীতি পরিবর্তনের প্রতিনিধিত্ব করে না।’
ওদিকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বলা হয়, যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস হওয়ার পর থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েল গাজার বিভিন্ন অংশে হামলা অব্যাহত রেখেছে। রাতভর ৬০টির মতো লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়েছে। স্থল বাহিনীর পাশাপাশি যুদ্ধবিমানের হামলায় ৮১ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৯৪ জনের মতো। রাফাহ শহরের হামলায় ১৮ জন নিহত হয়েছেন।
খুলনা গেজেট/এইচ