পূণ্যার্থীদের বকশিশের টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় শ্যামনগরের যশোরেশ্বরী কালীমন্দির স্বেচ্ছাসেবিকা কে পিটিয়ে জখমের ঘটনায় থানায় মামলা হলেও পুলিশ এখনো কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারিনি। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার যশোরেশ্বরী কালীমন্দিরে এই ঘটনা।
শ্যামনগর উপজেলার খাগড়াঘাট গ্রামের আনন্দ মন্ডলের ছেলে দেবসাগর মন্ডল জানান, তার দিদিমা ঈশ্বরীপুর গ্রামের কৌশল্যা রানী মন্ডল ও পরবর্তীতে তার মা চারুবালা মন্ডল (৫৭) দীর্ঘকাল ধরে যশোরেশ্বরী কালীমন্দিরের স্বেচ্ছাসেবিকা হিসেবে মন্দির পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও পূজা অর্চনা করে আসছেন। ওই মন্দির পরিচালনার জন্য কোন কমিটি না থাকায় মন্দিরের শতাধিক বিঘা জমি লুটপাট হয়ে গেছে। বর্তমানে ৭ শতক জমি দেবত্ব সম্পত্তি হিসেবে রেকর্ড রয়েছে। এ ছাড়া মন্দিরের দান বাক্স ছাড়াও জ্যোতি চট্টপাধ্যায়, জয়ন্ত চট্টপাধ্যায়, ও মন্দিরের নামে ব্যাংক একাউন্টে পূর্ণার্থীরা টাকা দান করে থাকেন। প্রতিদিনের পূজায় পূর্ণার্থীরা গড়ে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা দান বাক্সে দান করে থাকেন। এ ছাড়াও সোনার গহনা ও দান করা হয়। মন্দিরের এসব আয় সম্পর্কে কেউ কোন খোঁজ খবর রাখতে পারেন না। কারণ যারা এ মন্দিরের কর্তা হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন তাদের ক্ষমতা অনেক বেশি। তবে পূজারী দীলিপ হালদার ও তার সহযোগী অপূর্ব সাহার মাধ্যমে মন্দিরের দানবাক্স ও বিভিন্ন উপায়ে পাওয়া টাকা ও সোনার গহনা ওইসব প্রভাবশালীদের হাতে পৌঁছে যায়।
দেবসাগর মন্ডল আরো বলেন, গত শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) কক্সবাজার থেকে কমপক্ষে ১হাজার ২০০ পূর্ণার্থী এ মন্দিরে পূজা দিতে আসে। বিকালে পূর্ণার্থীরা গাড়িতে ওঠার আগে তিন পূর্ণার্থীকে প্রসাদ দিলে তারা বকশিশ হিসেবে তার মাকে ২০ টাকা দেয়। বিকালে ৫টার দিকে মা বাড়িতে যাওয়ার সময় মন্দির চত্বরে পৌঁছালে অপূর্ব সাহা ও ঈশ্বরীপুর গ্রামের অরশেদ সরদারের ছেলে খোকন সরদার তার কাছে ওই টাকা চায়। টাকা দিতে রাজী না হওয়ায় তাকে অরুপ ও খোকনসহ কয়েকজন তার মাকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করে। প্রভাবশালী আসামিদের ভয়ে কেউ তার রক্তাক্ত মাকে নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যায়নি।
একপর্যায়ে খবর পেয়ে মন্দির চত্বরে পড়ে থাকা মাকে রাত ৯টার দিকে উদ্ধার করে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন তিনি। এ ঘটনায় তিনি খোকন সরদার ও অপূর্ব সাহার বিরুদ্ধে থানায় এজাহার দিলে ঘটনার সত্যতা পেয়ে শুক্রবার দিবাগত রাত সোয়া ১২টার মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়। মামলা হওয়ার দুই দিন কেটে গেলেও পুলিশ ওই আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা শ্যামনগর থানার উপপরিদর্শক সরল কুমার বিশ্বাস জানান, মামলাটি রেকর্ড করা হলেও একটি মহল ঘটনার সঙ্গে এজাহার নামীয় আসামিরা জড়িত নয় মর্মে জোরালো দাবি করেছেন। ফলে মন্দিরের সিসি টিভি ফুটেজ আগমীকাল সংগ্রহ করার চেষ্টা করা হবে। সিসি টিভি অকেজো থাকলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা যাঁচাই এর পর মামলা রেকর্ড করা হলে আসামি গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠাতে আপত্তি কোথায় এমন প্রশ্নের জবাবে সরল বিশ্বাস বলেন, সেটা ও মাথায় রয়েছে। কারণ এফআইআর এ উল্লেখিত আসামির বিরুদ্ধে ঘটনার সত্যতা না পেলে তার বিরুদ্ধে আদালতে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়।
খুলনা গেজেট/ এএজে