যশোরের প্রতিথযশা সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবলের আজ ২২তম হত্যাবার্ষিকী। দেশের আলোচিত এ হত্যা মামলার কার্যক্রম গত ১৭ বছর যাবৎ আইনি জটিলতায় আটকে রয়েছে। এ কারণে হত্যার ২২ বছর পরেও খুনিদের বিচারের মুখোমুখি করা যায়নি। প্রায় দেড় যুগ মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়ায় ক্ষুব্ধ নিহতের পরিবার ও যশোরের সাংবাদিকরা।
সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবল ২০০০ সালের ১৬ জুলাই রাতে দৈনিক জনকণ্ঠের যশোর অফিসে কর্মরত অবস্থায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন।
আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সাংবাদিক শামছুর রহমান খুন হওয়ার পর ২০০১ সালে সিআইডি এ মামলায় ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেয়। ওই চার্জশিটে নতুন করে আরেক সাংবাদিক ফারাজী আজমল হোসেনকে অভিযুক্ত করে।
এ কারণে একদিকে মামলার বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়, অন্যদিকে দুর্বল হয়ে যায় চার্জশিট। ওই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর ২০০৫ সালের জুন মাসে যশোরের স্পেশাল জজ আদালতে শামছুর রহমান হত্যা মামলায় চার্জ গঠন হয়। ওই বছরের জুলাই মাসে বাদীর মতামত ছাড়াই মামলাটি স্থানান্তর করা হয় খুলনার দ্রæত বিচার আদালতে। এ অবস্থায় মামলার বাদী নিহত শামছুর রহমানের সহধর্মিণী সেলিনা আকতার লাকি বিচারিক আদালত পরিবর্তনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ২০০৫ সালে উচ্চ আদালতে আপিল করেন।
আপিলে তিনি উল্লেখ করেন, মামলার অন্যতম আসামি খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী হিরক পলাতক রয়েছে। হিরকসহ মামলার অন্যান্য আসামির সাথে খুলনার সন্ত্রাসীদের সখ্যতা রয়েছে। ফলে তার পক্ষে খুলনায় গিয়ে সাক্ষ্য দেয়া ঝুঁকিপূর্ণ। বাদীর এ আপিল আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট মামলাটি কেন যশোরে ফিরিয়ে দেয়া হবে না এ মর্মে সরকারকে রুলনিশি জারি করেন। এরপর মামলার বর্ধিত তদন্তে অভিযুক্ত ফারাজী আজমল হোসেন উচ্চ আদালতে আরেকটি রিট করেন। সেই রিটের নিষ্পত্তি না হওয়ায় মামলার সমস্ত কার্যক্রম গত ১৭ বছর ধরে স্থগিত রয়েছে।
আইনজীবীরা বলেছেন, সরকার উদ্যোগ নিয়ে উচ্চ আদালতে বাদীর আপিল এবং ফারাজী আজমল হোসেনের রিট নিষ্পত্তি করলে নিম্ন আদালতে এ মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব। উচ্চ আদালত থেকে নির্দেশনা না আসলে নি¤œ আদালতে এ মামলার কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে না।
উচ্চ আদালতের নির্দেশে সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবল হত্যা মামলার বিচারকাজ বন্ধ হয়ে আছে উল্লেখ করে যশোরের পাবলিক প্রসিকিউটর এম ইদ্রিস আলী জানান, আপিলের দ্রæত নিষ্পত্তি হলে মামলার কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব। কিন্তু বাস্তবতা হলো বহু বছর ধরেই হাইকোর্টের নির্দেশনায় এই মামলার কার্যক্রম বন্ধ আছে।
নিহতের ছোট ভাই যশোর সাংবাদিক ইউনিয়ন জেইউজের সাবেক সভাপতি সাজেদ রহমান জানান, প্রধানমন্ত্রীর সাথে একাধিকবার সাক্ষাৎকালে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে শামছুর রহমান কেবল হত্যা মামলার বিচারের দাবিটি গুরুত্বের সাথে তোলা হয়। এছাড়া তারা একই দাবিতে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিও দিয়েছেন। কিন্তু এ নিয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
এ মামলার চার্জশিটভুক্ত ১৬ আসামির মধ্যে খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী মুশফিকুর রহমান হিরক পুলিশের খাতায় পলাতক রয়েছে। আরেক আসামি খুলনার ওয়ার্ড কমিশনার আসাদুজ্জামান লিটু র্যাবের ক্রসফায়ারে, কোটচাঁদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন কালু হৃদরোগে এবং যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটির আনারুল প্রতিপক্ষের হামলায় মারা গেছেন। বাকি আসামিরা জামিনে রয়েছেন।
এদিকে, শামছুর রহমানের ২২তম হত্যাবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার যশোরের বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। প্রেসক্লাব যশোর, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়ন, সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরসহ অন্যান্য সংগঠন এদিন কালো ব্যাজ ধারণ, শোকর্যালি, কবরে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করবে। একইদিন প্রেসক্লাব যশোরের আয়োজনে আলোচনা ও দোয়া মাহফিল এবং যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের উদ্যোগে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে।