যশোরে লাইসেন্সকৃত ৮৭ আগ্নেয়াস্ত্রের কোন খোঁজ মিলছে না। দেশব্যাপী অবৈধ অস্ত্র ও মাদক বিরোধী অভিযানের আগে গত ৩ সেপ্টেম্বর রাত ১২টা পর্যন্ত যশোরের বিভিন্ন থানায় লাইসেন্সকৃত বৈধ অস্ত্র জমা পড়েছে ২৭৮টি। জেলায় মোট বৈধ অস্ত্রের পরিমাণ ৩৬৫টি।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ১৫ বছরে যশোর জেলা প্রশাসনের জুডিশিয়াল মুন্সিখানা থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অনুকুলে বিভিন্ন প্রকারের ৩শ’ ৬৫টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান করা হয়। লাইসেন্স প্রাপ্তদের অধিকাংশই ক্ষমতাচ্যুত রাজনৈতিক দলের এমপি, মন্ত্রী, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতা এবং আওয়ামী ঘরনার ব্যবসায়ী। লাইসেন্সকৃত আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে শর্টগান, রিভলবার, পিস্তলের সংখ্যাই বেশি।
জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলায় লাইসেন্সকৃত আগ্নেয়াস্ত্রের সংখ্যা সর্ব মোট ১ হাজার ১৩৮টি। এর মধ্যে ৬ জানুয়ারি ২০০৯ থেকে ৫ আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত প্রদেয় লাইসেন্সের সংখ্যা ৩শ’ ৬৫টি। এরমধ্যে যশোর সদর উপজেলায় ১৩৩টি, অভয়নগরে ২৮টি, কেশবপুরে ৮টি, শার্শায় ৪৫টি, ঝিকরগাছায় ২৮টি, মণিরামপুর ১৪টি, চৌগাছায় ২৬টি ও বাঘারপাড়ায় ৩১টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান করা হয়। এছাড়া এ সময়কালে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ও সৈনিকদের মধ্যে লাইসেন্সপ্রাপ্ত মালিকের সংখ্যা ৫৫ জন।
জুলাই থেকে ৫ আগস্ট গণঅভ্যুথানের পর শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে গণভবন থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর এসব আগ্নেয়াস্ত্রের মালিক অনেকেই গা ঢাকা দেয়। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জারিকৃত এক আদেশ বলে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রদানকৃত লাইসেন্স স্থগিত করে সকল আগ্নেয়াস্ত্র ৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে স্ব স্ব জেলার পুলিশ সুপারের দপ্তরে বা জেলা প্রশাসকের দপ্তরে বা নিকটবর্তী থানায় জমা দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়। সেই নির্দেশ মেতাবেক গত ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যশোর জেলা ৩শ’ ৬৫টি আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে যশোরে জমা পড়েছে ২৭০টি। এছাড়া, যশোর জেলা থেকে লাইসেন্সকৃত আগ্নেয়াস্ত্রের মালিক যারা বর্তমানে জেলার বাইরে অবস্থান করছেন এমন ৮টি অস্ত্র সে সব জেলায় জমা পড়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যশোর জেলায় ৮৭টি অস্ত্রের মালিক তাদের লাইসেন্সকৃত আগ্নেয়াস্ত্র সরকারের আহবানে জমা করেননি। ফলে ৩ সেপ্টেম্বর রাত ১২টার পর থেকে এসব আগ্নেয়াস্ত্র অবৈধ হিসেবে গণ্য হচ্ছে। এই অবৈধ অস্ত্র এবং মাদক ও অস্ত্রবহনকারী বিভিন্ন প্রকারের ক্রিমিনালদের ধরতে দেশব্যাপী শুরু হয়েছে যৌথ বাহিনীর অভিযান। যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্ব স্ব জেলার পুলিশ সুপারগণ। আর পুরো অভিযানটির সমন্বয় করছেন জেলা প্রশাসকগণ।
বুধবার বিকেলে এ অভিযানের সার্বিক দিক পর্যালোচনা করতে জেলা প্রশাসকের অফিস কক্ষে আন্ত:বাহিনীর এক রুদ্ধদার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন যশোরের জেলা প্রশাসক আবরাউল হাছান মজুমদার। উপস্থিত ছিলেন যশোরের নবাগত পুলিশ সুপার জিয়াউদ্দিন আহমেদ, সেনাবাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত লেঃ কর্ণেল মোস্তফা কামাল ও মেজর মাসুদ, এডিসি জেনারেল এম শাহীন আহমেদ ও আনসার ভিডিপি, বিজিবি এবং র্যাবের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সেনাবাহিনী, র্যাব, বিজিবি ও পুলিশ বাহিনীর গোয়েন্দা শাখার গোপন তালিকা অনুসারে যশোর জেলার তালিকাভুক্ত অস্ত্রবাজ, চাঁদাবাজ, মাদক কারবারী অর্থাৎ যাদের বিরুদ্ধে জননিরাপত্তা বিঘিœত করার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও তালিকা আছে তা অনুসরণ করে যৌথ বাহিনীর অভিযান পরিচালনা করা হবে।
এ ব্যাপারে যৌথ অভিযানের জেলা সমন্বয়কারী ও জেলা প্রশাসক আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, বৈধ লাইসেন্সধারীদের আগ্নেয়াস্ত্র জমা দেওয়ার সময় পার হয়ে গেছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যারা অস্ত্র জমা দেননি, তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়। তারপরও আমরা সরকারি নির্দেশ মোতাবেক ৩ সেপ্টেম্বর রাত ১২টার পর থেকে অভিযান শুরু করেছি। অভিযানের বিষয়ে এখনো বিস্তারিত বলার সময় হয়নি। পরবর্তীতে আমরা এ বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করবো।
খুলনা গেজেট/কেডি