বেনাপোল-যশোর-নড়াইল-ঢাকা এবং দর্শনা-যশোর-নড়াইল-ঢাকা রুটে দিনে দুটি করে যাত্রীবাহী ট্রেন চালু ও পূর্বঘোষিত ছয়দফা দাবিতে এবার রেললাইনে প্রতীকি অবরোধ করেছে যশোরবাসী। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) যশোর জংশনে প্রতীকি অবরোধের ডাক দেয় বৃহত্তর যশোর রেল যোগাযোগ উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির নেৃতৃবৃন্দ।
তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে যশোরের সর্বস্তরের মানুষ এদিন দুপুরে জংশনের পশ্চিম প্রান্তে রেললাইনের ওপর জড়ো হন। পরে তারা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। মঙ্গলবার দুপুর ১টা থেকে ২টা ২০ মিনিট পর্যন্ত চলে এ কর্মসূচি। এর ফলে ঢাকামুখী বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটির যাত্রা প্রায় আধা ঘণ্টা বিলম্বিত হয়। অবরোধ চলাকালে যশোরের জেলা প্রশাসক কর্মসূচিস্থলে হাজির হয়ে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেওয়ার পর অবরোধ তুলে নেয় আন্দোলনকারীরা।
অবরোধ চলাকালে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বৃহত্তর যশোর রেল যোগাযোগ উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান ভিটু। সদস্য সচিব প্রকৌশলী রুহুল আমিনের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি একরাম-উদ-দ্দৌলা, শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহমুদ হাসান বুলু, সাংস্কৃতিক সংগঠক হারুন অর রশিদ, ব্যবসায়ী মোবাশ্বের হোসেন বাবু, আইনজীবী সমিতির সহসভাপতি গোলাম মোস্তফা, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের আজিজুল হক মনি, লোকসমাজের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আনোয়ারুল কবীর নান্টু, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোরের আহবায়ক রাশেদ খান, সদস্য সচিব জেসিনা মোর্শেদ প্রমুখ।
নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রেলওয়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী ট্রেন চালালে যশোর, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুরের মানুষ কার্যত ট্রেন সেবা থেকে বঞ্চিত হবে। তারা রেলকে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য সঠিক সময় নির্ধারণ, প্রত্যেক আন্তঃনগর ট্রেনে সুলভ বগি সংযুক্ত করা, দর্শনা-খুলনা ডাবল লাইন চালু প্রভৃতি দাবি জানান। তাদের দাবি মেনে না নিলে আগামিতে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি দেন তারা।
এদিকে, কর্মসূচি চলাকালে দুপুর ২টার দিকে সেখানে হাজির হন যশোরের জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম। তিনি আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বলেন, যশোরবাসীর যৌক্তিক দাবি-দাওয়াগুলো সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তিনি পাঠিয়েছেন। মঙ্গলবার সকালেও রেলসচিবের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। এ দাবির যৌক্তিকতা আখ্যা দিয়ে তিনি সরকারের প্রতি সদয় হওয়ার আহবান জানান। একই সাথে তিনি বলেন, আন্দোলনের কারণে যাতে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না হয় এবং আন্দোলনের মাঝে যাতে কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে কুচক্রী মহল ঢুকে না পড়ে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখার জন্য সংগঠকদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, চলতি মাসেই ‘পদ্মাসেতু রেল সংযোগ প্রকল্প’ উদ্বোধন হওয়ার কথা রয়েছে। দেশে রেলওয়ের ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ এই প্রকল্প ঢাকা থেকে পদ্মাসেতু হয়ে নড়াইলের ওপর দিয়ে যশোরকে সংযুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পের মূল সংযোগস্থল যশোরে বাড়তি কোনো ট্রেন না দেওয়া, এমনকি চলাচলরত দুটি ট্রেন সুপ্রাচীন যশোর জংশনের বদলে নবনির্মিত পদ্মবিলা জংশন ব্যবহারের কারণে বঞ্চিত হচ্ছে যশোরবাসী। বর্তমানে বেনাপোল এক্সপ্রেস যশোর থেকে কুষ্টিয়ার পোড়াদহ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, ভাঙ্গা হয়ে ঢাকা যাতায়াত করছে। রাজবাড়ী ও কুষ্টিয়ার মানুষেরা এই এক্সপ্রেস ট্রেনটি বর্তমান রুটেই চালানোর দাবিতে ইতিমধ্যে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন। অন্যদিকে, খুলনা-ঢাকা রুটের দুটি ট্রেন যশোরের নবনির্মিত পদ্মবিলা জংশন হয়ে যাতায়াত করবে বলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ফলে রেলযোগাযোগের ক্ষেত্রে যশোরবাসী পদ্মাসেতুর সরাসরি সুফল থেকে বঞ্চিত হবে। এমন পরিস্থিতিতে বঞ্চিত-ক্ষুব্ধ যশোরবাসী ‘বৃহত্তর যশোর রেল যোগাযোগ উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির’ ব্যানারে আন্দোলন শুরু করে।
খুলনা গেজেট/ টিএ