যশোরে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে ডেঙ্গু। হাসপাতালে প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। সেই সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে মৃত্যুর তালিকাও। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে দু’নারীর মৃত্যু হয়েছে।
মৃতরা হলেন, মণিরামপুর উপজেলার লাউড়ি গ্রামের রফিকুল ইসলামের মেয়ে মার্জিয়া খাতুন (১৫) ও সদর উপজেলার চাঁচড়া এলাকার নাহার বেগম (৪৫)। এরমধ্যে মার্জিয়া যশোর জেনারেল হাসপাতালে ও নাহার খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
এদিন নতুন করে যশোর জেলায় আরও ১৪ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। বর্তমানে যশোর জেনারেল হাসপাতালসহ সাতটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ রোগে আক্রান্ত ৪১ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মানুষের সচেতনতার পাশাপাশি এডিস মশার বিস্তার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে ডেঙ্গু আরও ভয়াবহ রূপ নেবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য বিভাগের সূত্র বলেছে, বেশ কিছুদিন ধরে মণিরামপুরের মার্জিয়া ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে বুধবার সকালে তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কিছু সময় পর তার মৃত্যু হয়। এছাড়া, গত ১০ সেপ্টেম্বর চাঁচড়ার নাহার বেগমের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। এরপর তিনি প্রথমে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে তাকে খুলনায় রেফার করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার সকালে তার মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার সুহাষ রঞ্জন হালদার।
বর্তমানে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৪১ জনের মধ্যে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ১০, অভয়নগরে ২৩, ঝিকরগাছায় ৩ ও কেশবপুরে ৫ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চলতি বছরে জেলায় ৪৬০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। সুস্থ হয়েছেন ৪১৫ ও মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার হারুন অর রশিদ বলেন, যদি এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তাহলে ডেঙ্গু জ্বরের রোগীর সংখ্যাও বাড়তে থাকবে আগামী শীতকাল পর্যন্ত। ডেঙ্গুর লক্ষণ লেখা দিলেই হাসপাতালে এসে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ইতিমধ্যে হাসপাতালে আলাদা কর্ণার করা হয়েছে। সেখানে পর্যাপ্ত ডাক্তার, নার্স, স্যালাইন ও ওষুধ রয়েছে।
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডাক্তার মাহমুদুল হাসান বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে ঘরের, অফিসের বা কর্মস্থলের জানালা সব সময় বন্ধ রাখতে হবে, মশার কামড় থেকে বাঁচতে যতটা সম্ভব শরীর ঢেকে রাখা পোশাক পরিধান করতে হবে। দিনে অথবা রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে। ফুলের টব, প্লাস্টিকের পাত্র, পরিত্যক্ত টায়ার, প্লাস্টিকের ড্রাম, মাটির পাত্র, বালতি, টিনের কৌটা, ডাবের খোসা বা নারকেলের মালা ও ফ্রিজে জমে থাকা পানি তিন দিনের মধ্যে ফেলে দিতে হবে। ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিলে নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দ্রুত যোগাযোগ করতে হবে। ডেঙ্গু নিয়ে যেন মানুষের মধ্যে আতঙ্ক না ছড়ায়। সাধারণ চিকিৎসায়ই এই রোগ সেরে যায়।
খুলনা গেজেট/কেডি