যশোরের নওয়াপাড়া রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় নিহত চার জনের দাফন নড়াইলে শনিবার (১৭ অক্টোবর) শোকাবহ পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে। খুলনায় ডাক্তার দেখাতে যাওয়ার পথে ট্রেনের ধাক্কায় শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) বিকাল পৌনে ৫টার দিকে নড়াইল শহরের ভাওয়াখালীর একই পরিবারের তিন সদস্যসহ চার জন নিহত হন।
পরিবারের সদস্যরা জানায়, শনিবার সকালে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিহত চারজনের লাশের ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়। এরপর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নিহত ইঞ্জিনিয়ার হিরোক ভূঁইয়া, বোন শিল্পী খানম ও ভাইয়ের মেয়ে রাইসার লাশ নড়াইলের বাসায় পৌঁছালে এক হৃদয় বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম এবং আপন বলতে আর কেউ থাকলো না। বছর চারেক আগে হিরোক ভূঁইয়ার মা, বাবা উপ-সহকারি ভূমি সহকারি কর্মকর্তা সানাউলাহ ভূঁইয়া মারা যান। তারপর মারা যান হিরোক ভূঁইয়ার বড় দুই ভাই। প্রকৌশলী হিরোকের বেতনের টাকায় তার স্ত্রী, মেয়ে, বোন, ভাবী, ভাইয়ের দুই মেয়ের খরচসহ সংসারের ব্যয় মেটানো হতো। অপরদিকে হিরোক ভূঁইয়ার বন্ধু আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুতে তার তিন শিশু মেয়ে এবং স্ত্রী অসহায় হয়ে পড়লেন। তাদের দেখার মত আর কেউ রইল না।
নড়াইল পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর শরিফুল আলম লিটু জানান, আশরাফুলের নামাজে জানাজা শনিবার সকাল ১০টার দিকে রুপগঞ্জ এলাকায় অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে তাকে দক্ষিণ নড়াইলের কবরস্থানে দাফন করা হয়। এদিন বাদ আসর ইঞ্জিনিয়ার হিরোক ভূঁইয়া, বোন শিল্পী খানম, হিরোক ভূঁইয়ার ভাইয়ের মেয়ে রাইসার দাফন নড়াইল শহরের আলাদাতপুর কবরস্থানে সম্পন্ন হয়।
নিহত হিরোক ভূঁইয়ার বোনের মেয়ে মীম খানম জানান, মামার পরিবারের পাঁচ সদস্য এবং এক বন্ধুকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে শুক্রবার বেলা পৌনে ৪টার দিকে নড়াইল থেকে নিজের প্রাইভেটকারে খুলনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। পরে সন্ধ্যায় শুনতে পাই নওয়াপাড়া রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মামা, খালা, মামাতো বোন এবং মামার এক বন্ধু মারা গেছেন।
নওয়াপাড়া রেলস্টেশন মাস্টার মহসীন রেজা জানান, বিকেল পৌনে ৫টার দিকে মহানন্দা ট্রেনটি খুলনার দিকে যাচ্ছিল। এ সময় নওয়াপাড়া রেল ক্রসিংয়ে প্রাইভেটকার ও ট্রেনের সংঘর্ষে চারজন মারা যান।
অভয়নগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তাজুল ইসলাম বলেন, প্রাইভেটকার ও ট্রেনের সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই তিন জন মারা গেছে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত ডাক্তার আরেক জনকে মৃত ঘোষণা করেন। প্রাইভেটকারের ছয় যাত্রীর মধ্যে চার জনই মারা গেছেন। আহত দুইজন কর্তমানে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
খুলনা গেজেট/কেএম