খুলনা, বাংলাদেশ | ১৪ পৌষ, ১৪৩১ | ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘন্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ছাড়াল এক লাখ ১ হাজার
  জামালপুরে ব্রহ্মপুত্র নদে ডুবে তিন ভাইয়ের মৃত্যু
  সচিবালয়ে আগুনের তদন্ত চলমান থাকায় মানুষের চলাচল সীমিত করা হয়েছে, আলামত যেন নষ্ট না হয়, ক্রাইম সীন রক্ষায় এমন সিদ্ধান্ত : প্রেস সচিব
  শেরপুরে বাস-অটোরিকশার সংঘর্ষে নিহত ৬

যশোরে জামানত হারিয়েছেন পাঁচ চেয়ারম্যান প্রার্থী

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর

যশোর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শেষে নানা আলোচনায় মুখর গোটা যশোর। ভোটাররা বিজয়ী ও পরাজিত প্রার্থীদের নিয়ে নানা বিশ্লেষণ করছেন। বিজয়ীদের নিয়ে যেমন আলোচনা চলছে, তেমনি পরাজিতদের নিয়েও চলছে চায়ের দোকানগুলোতে একইভাবে আলোচনা।

এসব আলোচনায় উঠে এসেছে কোনোদিন রাজনীতি না করেও এবারের নির্বাচনে লক্ষাধিক ভোট পেয়ে বাজিমাত করা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয়ী বাশিনুর নাহার ঝুমুর। তিনি জীবনের প্রথম নির্বাচনে অংশ নিয়ে সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন। আর দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট গত পাঁচ বছর মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকারী জ্যোৎস্না আরা মিলি তার কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছেন। ঝুমুর ফুটবল প্রতীকে পেয়েছেন ১ লাখ ১৩ হাজার ৫২১ ভোট। আর জ্যোৎস্না আরা মিলি কলস প্রতীকে পেয়েছেন ৫৫ হাজার ১৫ ভোট।

শহরবাসী বলছেন, জ্যোৎস্না আরা মিলি গত নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন। গত পাঁচ বছরে ভোটাররা তাকে খুঁজে পায়নি বললেই চলে। যে কারণে তারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। অবশ্য মিলির পক্ষের লোকজন বলছেন ঝুমুরের নির্বাচিত হওয়ার পেছনে কর্মী-ভোটারদের জন্য তিনি ব্যাপক টাকা খরচ করেছেন। স্বামী চট্টগ্রামবন্দরে ব্যবসা করার কারণে তিনি অঢেল টাকা ছড়িয়ে সবাইকে ম্যানেজ করেছেন।

এদিকে, বিজয়ী চেয়ারম্যান তৌহিদ চাকলাদার ফন্টু অনেকদিন রাজনৈতিক অঙ্গণে নেপথ্যের ভূমিকা পালন করলেও এবার প্রার্থী হয়ে প্রকাশ্যে এসেছেন। নবীন হলেও তার জয় সবার দৃষ্টি কেড়েছে। ভোটের শুরুতে প্রচার-প্রচারণা কম থাকলেও ভেতরে ভেতরে এগিয়ে যান তিনি। তার এই এগিয়ে যাওয়ার পেছনে মূল ভূমিকা পালন করেন তার চাচাতো ভাই যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি শাহীন চাকলাদার। আবার চেয়ারম্যান পদে একমাত্র নারী প্রার্থী ফাতেমা আনোয়ারও চমক দেখিয়েছেন। জেলা পর্যায়ের অনেক পদধারী দীর্ঘদিনের নেতাদের টপকে নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন তিনি। মাত্র ২ হাজার ৩০৪ ভোটে পরাজিত হয়েছেন ফাতেমা আনোয়ার। একেবার সামান্য ভোটের এ পরাজয় মেনে নিতে পারছেন না তার কর্মী-সমর্থকরা।

আলোচনা হচ্ছে বর্তমান চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরীর শোচনীয় পরাজয় নিয়েও। কেবল পরাজয় না, রীতিমতো তার জামানত পর্যন্ত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। তিনি পেয়েছেন ১২ হাজার ৫৪৬ ভোট। তার ভক্ত সমর্থকদের কাছে এটি অবাস্তব ও বিষ্ময়কর ঘটনা বলে মনে হচ্ছে। তাদের বক্তব্য, মোস্তফা ফরিদ পরাজিত হলেও এতো কম ভোট পাওয়ার কথা না।

আবার চেয়ারম্যান পদে আ ন ম আরিফুল ইসলাম হীরা হেলিকপ্টার প্রতীকে ৬ হাজার ২১৯ ভোট পাওয়া নিয়েও বিস্ময় প্রকাশ করছেন ভোটাররা। অনেকেই বলছেন, ভোটের মাঠে একেবারেই নাম গন্ধ ছিল না হীরার। তারা হীরার প্রচার-প্রচারণাও শোনেননি। তার কোনো কর্মী-সমর্থক ভোটারের বাড়ি গেছেন কিনা সেটিও সন্দেহ। অথচ সেই হীরা ছয় হাজারের বেশি ভোট পেয়েছেন। যার হিসেব অনেকেই মেলাতে পারছেন না। যদিও তিনি জামানত হারিয়েছেন।

হিসেব মিলছে না চেয়ারম্যান পদে শালিক প্রতীকের মোহিত কুমার নাথের প্রাপ্ত ভোটেরও। তিনি পেয়েছেন ৯ হাজার ৯০৪ ভোট। অথচ তিনি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও দীর্ঘদিনের পোড় খাওয়া নেতা। তিনি মাত্র চার মাস আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঈগল প্রতীক নিয়ে সদর উপজেলায় ৬০ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। তার কর্মী সমর্থকরা মনে করেছিলেন উপজেলা নির্বাচনে তিনি মোটে না পেলেও ৬০ হাজারের অর্ধেক ভোট পাবেন। তাছাড়া, সদর উপজেলায় সংখালঘু ভোটার রয়েছেন প্রায় এক লাখ। ভোটের দিনে কেন্দ্রগুলোতে তাদের ব্যাপক উপস্থিতি ছিল। তাহলে তাদের ভোট কোথায় গেলো। এতোকিছুর পরও মোহিত কুমার নাথের মাত্র ৯ হাজার ভোট পাওয়া মানতে পারছেন না তার কর্মী-সমর্থকরা। তার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।

যশোর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহারুল ইসলাম আরবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রয়েছেন। এ পদে থেকেই তিনি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে ভোট করেছেন। আরবপুর ইউনিয়নে ২০ হাজারেরও বেশি ভোটার। তিনি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছেন। গোটা উপজেলায় তার পরিচিতি আছে। অনেকেই ভেবেছিলেন শাহারুল ইসলাম পাস করতে না পারলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকবেন। কিন্তু ভোট গণনার পর দেখা গেলো তার অবস্থান আটজনের মধ্যে সপ্তম। তিনি জোড়া ফুল প্রতীকে পেয়েছেন মাত্র ৮ হাজার ৫০৬ ভোট। তারও জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এটি মেনে নিতে পারছেন না তার কর্মী-সমর্থকরা।

অবশ্য ইতিবাচক আলোচনা হচ্ছে কাপ পিরিচের প্রার্থী শফিকুল ইসলাম জুয়েলকে নিয়ে। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের অনেক রথি-মহারথিকে পেছনে ফেলে চতুর্থ স্থান দখল করেছেন। পেয়েছেন ১৪ হাজার ১৫৯ ভোট। এরপরও তার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।

আলোচনা হচ্ছে ভাইস চেয়ারম্যান পদে হাঁস প্রতীকের প্রার্থী শিল্পী খাতুনের ৩২ হাজার ১৫৮ ভোট পাওয়া নিয়ে। ভোটাররা বলছেন, শিল্পী খাতুন ওই পরিমাণ ভোট পাওয়ার মতো প্রচার-প্রচারণা করেননি। অথচ তিনি ব্যাপক সংখ্যক ভোট পেয়েছেন।

আলোচনায় উঠে এসেছে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মনিরুজ্জামান নিরবের উড়োজাহাজ প্রতীকের ৯ হাজার ৯৫২ ভোট পাওয়া নিয়ে। ভোটাররা বলছেন, এ ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী একবারেই নতুন। অথচ প্রায় ১০ হাজার ভোট পেয়েছেন তিনি। যার কোন হিসেব নেই ভোটারদের কাছে।

এদিকে, প্রাপ্ত ভোটের ১৫ শতাংশ না পাওয়ায় জামানত হারিয়েছেন পাঁচ চেয়ারম্যান প্রার্থী। এসব প্রার্থীরা হলেন, বর্তমান চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী, মোহিত কুমার নাথ, শাহারুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম জুয়েল ও আরিুফুল ইসলাম হীরা।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!