যশোরে সাংবাদিক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচজন কর্মকর্তাসহ ৯১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে ও মৃত্যুবরণ করেছেন চারজন। গেল ২৪ ঘণ্টায় তিনটি ল্যাবে কোয়ারেন্টিনে থাকা ভারতফেরত ৮৮জনসহ জেলার ১৩০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৯১ জনের পজিটিভ হয়।
এদিন জেলায় পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৯ দশমিক ২৬ ভাগ। রোববার সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
যশোর জেনারেল হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে রেডজোনে চিকিৎসাধীন প্রেসক্লাব যশোরের সম্পাদক আহসান কবীর বাবুর ভাইঝি নুসরাত জাহান তৃপ্তির (৩৫) মৃত্যু হয়েছে। তিনি শহরের চাঁচড়া এলাকার আজিজ মন্ডলের স্ত্রী। গত ১৪ জুন তিনি করোনায় আক্রান্ত হলে পরিবারের লোকজন তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। একপর্যায় শনিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে তিনি মারা যান। লাশ দাফনের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বামীর কাছে হস্থান্তর করেন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আরিফ আহমেদ। পরে রাত সাড়ে নয়টার দিকে শহরের চাঁচড়া কবরস্থানে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের সদস্যরা তাকে দাফন করেন।
এদিকে, করোনার উপসর্গ নিয়ে রোববার সকালে হাসপাতালের ইয়লোজোনে নীলা আক্তার (২৬) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া গ্রামের মনিরুজ্জামানের মেয়ে। প্রচন্ড জ্বর নিয়ে এদিন ভোরে স্বজনরা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। এখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল সাড়ে আটটার দিকে তিনি মারা যান। পুরুষ ইয়লোজোনে এদিন সকাল ছয়টার দিকে মারা যান সদর উপজেলার বসুন্দিয়া ঘোপেরডাঙ্গা গ্রামের মৃত ওলি উল্লার ছেলে মিজানুর রহমান (৫৫) ও শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে আবু বক্কর সিদ্দিকীর (৫০) মৃত্যু হয়েছে। তিনি সদর উপজেলার পারখাজুরা গ্রামের মোর্শেদ আলীর ছেলে।
সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, রোববার নতুন করে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন দৈনিক লোকসমাজের স্টাফ রিপোর্টার বিএম আসাদ, যবিপ্রবির কর্মকর্তা আনোয়ার জাহিদ (৩২), মাহমুদুল হাসান (৩০), কাজী শাহীনুর রহমান (৩৫), বোরহান উদ্দিন (২৯) ও কামরুল হাসান (২৬)। এছাড়া র্যাপিড অ্যান্টিজেন্ট পরীক্ষায় শনাক্তদের বাড়ি নড়াইল, ঝিনাইদহসহ যশোরের বিভিন্ন উপজেলা শহরে। আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
যবিপ্রবি এনএফটি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপিকা ড. শিরিন নিগার জানান, যশোর জেলার ১০৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করে নতুন সাতজনের পজিটিভ হয়েছে। এরমধ্যে পাঁচজন যবিপ্রবি’র কর্মকর্তা ও দুইজন ভারত ফেরত কোয়ারেন্টিনে থাকা। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস লকডাউন ঘোষণা করেছেন কর্তৃপক্ষ। বিশেষ কারণ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কেউ প্রবেশ করতে পারবেন না বলে তিনি জানান। এছাড়া মাগুরা জেলার ১৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করে সবকয়টি নেগেটিভ ফল পাওয়া গেছে। তবে নড়াইল জেলার ৩৭৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২৫ জনের পজিটিভ হয়েছে। অর্থাৎ ল্যাবে তিনজেলার মোট ৪৯৫টি নমুনা পরীক্ষা করে ৩২ জনের পজিটিভ হয়েছে।
সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন বলেন, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনোম সেন্টারে ভারতফেরত কোয়ারেন্টিনে থাকা ৮৮জনসহ জেলার ১০৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে ভারত থেকে আসা দু’জনসহ সাতজনের, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ল্যাবে ২২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ছয়জন এবং যশোর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ল্যাবে ১৮১ জনের র্যাপিড অ্যান্টিজেন্ট পরীক্ষায় ৭৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।