খুলনা, বাংলাদেশ | ২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৭ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  দেশ টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ হাসানের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
  সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস
  দুর্নীতি ও আমলাতন্ত্র দেশে ব্যবসায় পরিবেশ নিশ্চিতের অন্যতম বাধা : সিপিডি
  সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন ও তার স্বামীর পাসপোর্টের আবেদন স্থগিত

যশোর সদর উপজেলা নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী বিজয়ী

যশোর প্রতিনিধি

হামলা, সংঘর্ষ, কেন্দ্র দখল, জালভোটের অভিযোগসহ বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্যদিয়ে শেষ হয়েছে যশোর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন। এতে বিপুল সংখ্যক ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে জয় লাভ করেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী নুরজাহান ইসলাম নীরা। তিনি পেয়েছেন ২ লাখ ৭৬ হাজার ১৯ ভোট। তার নিকটতম বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী নুর-উন-নবী পেয়েছেন ১২ হাজার ৩৯৪ ভোট। নির্বাচনে ৫১ দশমিক ৭৭ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা নির্বাচন কার্যালয়। ভোটের পরই সমস্ত ব্যালট পেপার কড়া নিরাপত্তার মাধ্যমে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গণনার পর রাত ৯টায় বেসরকারিভাবে ফলাফল ঘোষণা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্মা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান।

নির্বাচন পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় আ’লীগ নেতারা বলেছেন, ভোট হয়েছে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে। বিএনপির অভিযোগ নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করে জনগণকে ভোট দিতে দেয়া হয়নি। কেন্দ্র দখল, পোলিং এজেন্ট বের করে দেয়া হয়েছে, হামলা করা হয়েছে নেতাকর্মীদের ওপর, আহত হয়েছেন ৫ জন। যা বিএনপি প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট দেলোয়ার হোসেন খোকন জেলা রিটার্নিং অফিসার বরাবরে অভিযোগ দায়ের করেছেন।

নির্বাচনে শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। হাতে গোনা সংখ্যক মানুষ কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়েছে। তবে কেন্দ্রে সরব ছিল আ’লীগের নেতাকর্মীরা। সেখানে বিএনপির সমর্থক ও পোলিং এজেন্টদের উপস্থিতি কম ছিল। সদর উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে মারপিট ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় ৫ জন আহত ও আরবপুর ইউনিয়নে বিএনপির সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম লাঞ্চিত হয়েছেন। ভোট কেন্দ্রে বিএনপির পক্ষে কাজ করায় তাকে মারপিট করে কেন্দ্রে থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।

এছাড়া বসুন্দিয়া ইউনিয়নের কেন্দ্র থেকে বিএনপির পোলিং এজেন্ট বের করে দেয়া হয়েছে। একইসাথে কর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। এসময় ৩ কর্মীকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। তাদেরকে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কাশিমপুর ইউনিয়নের ভোট কেন্দ্রে আ’লীগের দু’গ্রুপে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে দু’জন আহত হয়েছেন। রামনগর ইউনিয়নে এক বিএনপি কর্মীকে মারপিট করা হয়েছে। এছাড়া শহরের ঘোপ বিএড কলেজ কেন্দ্রে মুর্হু মুর্হু বিস্ফোরকদ্রব্য ফুটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। যাতে কেউ এখানে ভোট দিতে না আসে। কেন্দ্রটি বিএনপি অধ্যুষিত হিসেবে পরিচিত।

জেলা রিটার্নিং অফিসারের কাছে দেয়া লিখিত অভিযোগে বিএনপি প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট দেলোয়ার হোসেন খোকন দাবি করেছেন ১৭৫টি ভোট কেন্দ্রের ১৫০টিতে তাদের প্রার্থীর কোনো এজেন্টকে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। বাকি ২৫টিতে এজেন্টরা প্রবেশ করার সুযোগ পেলেও সকাল ১১টার পর তাদেরকেও বের করে দেয়া হয়েছে। সকাল ১০টার দিকে কাশিমপুর ইউনিয়নের মীরাপুর দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে আ’লীগের দু’প্রুপের সংঘর্ষে দলের ইউনিয়ন কমিটির সহসভাপতি শাহাজান আলীসহ (৩৫) পাঁচজন আহত হয়েছেন।

এছাড়া পৃথক নির্বাচনী সহিংসতায় আহত আরও চারজন গুরুতর অবস্থায় যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এরা হলেন বসুন্দিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গাইদগাছী গ্রামের কাজী আব্দুল আজিজ ইলাহী (৪২), তার ছেলে ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহসভাপতি কাজী মঞ্জুর এলাহী সনি (২৪), যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী তৌফিক এলাহী টনি (২৭) এবং নরেন্দ্রপুর ইউনিয়নের সিরাজসিংহা গ্রামের বিএনপি কর্মী আতিয়ার রহমান (৩৫)। সকাল ১০টায় বসুন্দিয়া ইউনিয়নের কাজী আব্দুল আজিজ ইলাহী গাইদগাছী ভোট কেন্দ্রে গেলে নৌকার সমর্থকরা আব্দুল আজিজ ও তার দু’সন্তানকে মারপিট করে। সকাল ১১টার দিকে বিএনপি কর্মী আতিয়ার রহমান সিরাজ সিংহা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ভোট দিতে গেলে তাকে জানানো হয়, তার ভোট হয়ে গেছে। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ওই যুবকরা তাকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করেন।

এদিকে, পৌর কাউন্সিলর সন্তোষ দত্তের বিরুদ্ধে সকাল ১০টার দিকে ইসলামিয়া বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসারকে মারপিট করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার পরই প্রশাসন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। কিন্তু, কাউন্সিলর সন্তোষ দত্তকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, আমি এ সংবাদ শুনে ম্যাজিস্ট্রেট পাঠিয়েছিলাম। আর কিছু জানিনা। বিষয়টি রিটার্নিং অফিসার বলতে পারবেন।

এদিকে, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী নুরজাহান ইসলাম নীরা সকাল সাড়ে ১১টায় সেবা সংঘ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে, বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী নুর উন নবী সকাল নয়টায় শংকরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট প্রদান করেন।
অন্যদিকে, যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সেবা সংঘে, যশোর-৬ আসনের সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার দুপুরে সেবা সংঘে, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন দুপুর সাড়ে ১২টায় বিএড কলেজ কেন্দ্রে, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল সাড়ে ১১টার দিকে সেবা সংঘে, যশোর পৌরসভার মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু দুপুর ১২টায় পুলিশলাইন কেন্দ্রে ভোট প্রদান করেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির খুলনা বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত সাড়ে ১১টায় বিএড কলেজ কেন্দ্রে এবং জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগম সকাল ১০টায় এনএম খান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট প্রদান করেন।

যশোর সদর উপজেলা এলাকার ১৫টি ইউনিয়নের ৫ লাখ ৬০ হাজার ৫২৫ জন ভোটারের মধ্যে এদিনে নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন ২ লাখ ৯০ হাজার ১৯৪ জন। এরমধ্যে বাতিল হয়েছে ১ হাজার ৭৮১টি ভোট। ভোট গ্রহণের হার ৫১.৭৭ শতাংশ।

আওয়ামী লীগ প্রার্থী নুরজাহান ইসলাম নীরা, যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, যশোর-৬ আসনের সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার, জেলা পরিষদের সদস্য সাইফুজ্জামান পিকুল, পৌরমেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন ভোট পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, নির্বাচন হয়েছে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর পরিবেশ ছিল না। মানুষ ভোট দিয়েছেন উৎসবমুখর পরিবেশে।

 

খুলনা গেজেট/কেএম/ এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!