একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি শুরুর প্রাথমিক প্রক্রিয়ায় যশোর শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ ফি আদায় করেছে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা। ভর্তি আবেদন ও নিশ্চয়ন ফি বাবদ খুলনা বিভাগের ১০ জেলার সোয়া লাখ শিক্ষার্থী এ টাকা প্রদান করেছে। এ বাবদ শিক্ষার্থী জনপ্রতি মোট দিতে হয়েছে সাড়ে ৩শ’ টাকা হারে। যা তাদেরকে প্রদান করেই অনলাইনে প্রবেশ করতে হয়েছে।
যশোর শিক্ষাবোর্ড সূত্র জানায়, খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় এ শিক্ষাবোর্ডের আওতাধীন ৫৮৪টি সরকারি-বেসরকারি কলেজ রয়েছে। এসব কলেজে চলতি বছরে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য ২ লাখ ৫১৪টি আসন রয়েছে। গত ৩১ মে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এতে উর্ত্তীণ হয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার ২৪৩ জন শিক্ষার্থী।
এরপর ৯ আগষ্ট থেকে একাদশ শ্রেণিতে অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয় গত । এ কার্যক্রমের তৃতীয় পর্যায়ে আবেদনের শেষ তারিখ ছিল ৭ সেপ্টেম্বর। এছাড়া কলেজে ভর্তির শেষ তারিখ ১৭ সেপ্টেম্বর।
প্রথম পর্যায়ে খুলনা বিভাগের ৫৮৪টি কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন করেছে ১ লাখ ৩৩ হাজার ১৯৯ জন শিক্ষার্থী। এ আবেদন করতে তাদেরকে প্রাথমিক ফি দিতে হয়েছে জনপ্রতি ১৫০ টাকা হারে। এ হিসেবে আবেদনকৃত মোট ১ লাখ ৩৩ হাজার ১৯৯ জন শিক্ষার্থী শিক্ষাবোর্ডের অনুকূলে দেড়শ’ টাকা হারে ফি জমা দিয়েছে ১ কোটি ৯৯ লাখ ৮৫০ টাকা। যা টেলিটক সিমের মাধ্যমে নগদ, রকেট, বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে প্রদান করতে হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের আবেদনের পর শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ তাদের এসএসসির ফলাফলের মেধা অনুযায়ী ভর্তির জন্য কলেজ নির্ধারণ করে মোবাইলে ফিরতি ম্যাসেজ দিয়েছে। একইসাথে আবেদনকৃতদের কলেজ নিশ্চয়নের কথা বলা হয়েছে। আর এ নিশ্চয়ন করতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের ফের ২শ’ টাকা হারে ফি দিতে হয়েছে।
শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ বলেছে, একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য মোট আবেদনকৃতদের মধ্যে এক লাখ ১৫ হাজার শিক্ষার্থী কলেজ নিশ্চয়ন করেছে। এ বাবদ তাদেরকে ২শ’ টাকা হারে ফের ফি জমা দিতে হয়েছে। যার মোট পরিমান ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এ হিসেবে একাদশে ভর্তি প্রক্রিয়ার শুরুতে সোয়া লক্ষাধিক শিক্ষার্থীকে আবেদন ও নিশ্চয়ন ফি বাবদ শিক্ষাবোর্ডে মোট জমা দিতে হয়েছে ৪ কোটি ২৯ লাখ ৭৯ হাজার ৮৫০ টাকা।
অবশ্য শিক্ষাবোর্ড বলেছে, শিক্ষার্থীদের আবেদনের এ টাকার পুরোটাই তাদের থাকবে না। সফটওয়্যার ডেভেলপার, ম্যাসেজসহ বিভিন্ন খাতে ব্যয় হবে। এছাড়া, টাকার একটি অংশ সংশ্লিষ্ট কলেজগুলোতে বিতরণ করা হবে।
শিক্ষাবোর্ড সূত্র জানায়, চলতি বছরে যশোর শিক্ষাবোর্ডের অধীনে দশ জেলার বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এক লাখ ৬০ হাজার ৬৩৫ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এতে মোট পাস করে এক লাখ ৪০ হাজার ২৪৩ জন শিক্ষার্থী। পাসের হার ছিল ৮৭.৩১ ভাগ। এরপর গত ৯ আগষ্ট থেকে শুরু হয় ছাত্র-ছাত্রীদের বিভিন্ন কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া। প্রথম পর্যায়ে বিভিন্ন কলেজে ভর্তির আবেদন চলে গত ২০ আগষ্ট পর্যন্ত। তবে এ ভর্তি কার্যক্রম খাতা কলমে নয়, অনলাইনে চলছে।
আবেদনের প্রথম পর্যায়ে ৯ থেকে ২০ আগষ্ট পর্যন্ত ১১ দিনে ১ লাখ ৩৩ হাজার ১৯৯ জন শিক্ষার্থীর আবেদন জমা পড়েছে। শিক্ষার্থীরা খুলনা বিভাগের দশ জেলার ৫৮৪টি কলেজে অনলাইনে এ আবেদন করেছে। ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে কলেজভিত্তিক চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হবে। আর ১৩ থেকে ১৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শিক্ষার্থীদের কলেজে ভর্তি হতে হবে বলে আন্ত:শিক্ষা বোর্ড সিদ্ধান্তে জানিয়েছে।
এসব বিষয়ে যশোর শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক কেএম রব্বানী জানান, যশোর বোর্ডের আওতাধীন ১০ জেলায় মোট ৫৮৪টি সরকারি-বেসরকারি কলেজ রয়েছে। চলতি শিক্ষাবর্ষে এসব কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য ২ লাখ ৫১৪টি আসন রয়েছে। এসব কলেজে ভর্তির জন্য মোট ১ লাখ ৩৩ হাজার ১৯৯ জন শিক্ষার্থীর আবেদন জমা পড়েছে। আর নিশ্চয়ন করেছে ১ লাখ ১৫ হাজার শিক্ষার্থী।
এটা ছিল প্রথম পর্যায়ের আবেদনের তথ্য। দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের আবেদনেও একই শিক্ষার্থী ঘুরেফিরে পছন্দের কলেজ পেতে আবেদন করেছে। এ কারণে তাদের আবেদন লিস্ট অনুযায়ী কাউন্ট করা হয়নি।
তিনি বলেন, ‘আবেদনের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যে ফি নেয়া হয়েছে সেটা সফটওয়্যার ডেভেলপার, ফিরতি ম্যাসেজ, কলেজ নির্ধারণসহ অন্যান্য কাজে ব্যয় করা হবে।’ এছাড়া টাকার একটি অংশ সংশ্লিষ্ট কলেজ কর্তৃপক্ষকে প্রদান করা হবে বলে তিনি জানান।
খুলনা গেজেট/এনএম