যশোর শিক্ষাবোর্ডের আড়াই কোটি টাকার চেক জালিয়াতির ঘটনায় চেয়ারম্যান ও সচিবসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সোমবার (১৮ অক্টোবর) দুদকের যশোর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির সহকারী পরিচালক মাহফুজ ইকবাল বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। দুদক সচিব আনোয়ার হোসেন হাওলাদার মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলায় অভিযুক্তরা হলেন, যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান মোল্লা আমীর হোসেন, সচিব এএমএইচ আলী আর রেজা, হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম, ভেনাস প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের মালিক শেখ শরিফুল ইসলাম বাবু ও শাহী লাল স্টোরের মালিক আশরাফুল আলম।
দুদকের মামলা সূত্রে জানা যায়, যশোর শিক্ষাবোর্ডের ২০২০-২১ অর্থবছরের সব ব্যাংক অ্যাকাউন্টের স্টেটমেন্ট থেকে দেখা যায়, বোর্ডের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এসটিডি হিসাব খাতে নয়টি চেক পরিশোধিত হয়। বোর্ডের এসব চেকের রক্ষিত অংশে উল্লেখিত টাকার পরিমাণের সাথে ব্যাংক কর্তৃক পরিশোধিত টাকার মিল নেই। ইস্যু করা চেকগুলোর বিপরীতে ভ্যাট ও আয়কর বাবদ সরকারি কোষাগারে টাকা পরিশোধিত হয়নি। অথচ ওই চেকের বিপরীতে জালিয়াতি করে দুটি প্রতিষ্ঠান ব্যাংক থেকে ২ কোটি ৫০ লাখ ৪৪ হাজার টাকা উঠিয়ে নিয়ে আত্মসাত করে। যা সম্প্রতি শিক্ষাবোর্ডের অডিটে ধরা পড়ে। এরপর জালিয়াতির এ ঘটনা ৯ অক্টোবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে গোটা খুলনা বিভাগের হৈ চৈ শুরু হয়।
মামলায় বলা হয়েছে শিক্ষাবোর্ডের রেজিস্ট্রার নিরীক্ষা করে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠান দুটি ওই টাকার বিপরীতে বোর্ড স্টোরে কোনো মালামাল সরবরাহ করেনি। নিয়মানুযায়ী কোনো প্রতিষ্ঠান বোর্ডে মালামাল ও সেবা সরবরাহের লক্ষ্যে বোর্ডের সচিবের স্বাক্ষর করা কার্যাদেশ পাওয়ার পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে স্টোরে মালামাল সরবরাহ করে বোর্ডের সচিবের কাছে মালামালের চালান ও বিল ভাউচার দাখিল করে। এরপর বোর্ডের সচিব মালামাল বুঝে নেয়ার জন্য চালান ও বিলের ওপর স্টোর কিপারকে মার্ক করে স্টোরে পাঠান। স্টোর কিপার ওই চালান এবং বিল ভাউচার সচিব কর্তৃক স্বাক্ষরিত স্মারকের কার্যাদেশ অনুযায়ী মালামাল বুঝে নিয়ে বিল দেয়ার লক্ষ্যে রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে বিল ভাউচার হিসাব প্রধান শাখায় প্রেরণ করেন।
কিন্তু এক্ষেত্রে হিসাব প্রধান শাখার কার্যাদেশের মাধ্যমে বিল প্রদান নথি পরীক্ষা করে দেখা যায়, পরিশোধিত অর্থের বিপরীতে কোনো বিল ভাউচার নথিতে উপস্থাপন করা হয়নি। অথচ জালিয়াত চক্র ও প্রতিষ্ঠান দুটি সুকৌশলে অন্য বিল হতে ভ্যাট ও আয়কর সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার লক্ষ্যে ইস্যু করা ৯টি চেকগুলোর মুড়ির নম্বর এবং তারিখের সঙ্গে মিল রেখে চেক জালিয়াতি করে তহবিল হতে ২ কোটি ৫০ লাখ ৪৪ হাজার টাকা উত্তোলন করে নিয়েছে।
আসামিরা দন্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯/৪৭৭ (ক) তৎসহ ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অপরাধ করেছেন। এ অভিযোগে গত ১০ অক্টোবর দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম থেকে অভিযান পরিচালিত ও তদন্ত হয়। এরই ভিত্তিতে সোমবার মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।
খুলনা গেজেট/এএ