যশোর পৌরসভার নির্বাচন নিয়ে শহরবাসীর মধ্যে কৌতুহল শুরু হয়েছে। আদৌ নির্বাচন হবে কিনা তা নিয়ে স্নায়ুচাপে রয়েছেন প্রার্থীরা। মেয়র প্রার্থীদের এ নিয়ে তেমন মাথাব্যাথা না থাকলেও কাউন্সিলর প্রার্থীরা উদ্বিগ্ন সময় কাটাচ্ছেন। তারা নিজ নিজ ওয়ার্ডে প্রচারণার পাশাপাশি সকাল-সন্ধ্যায় নির্বাচন অফিসে এ বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছেন।
সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী গত ৯ ফেব্রুয়ারি যশোর পৌরসভার নির্বাচনের উপর উচ্চ আদালত তিন মাসের স্থগিতাদেশ দেয়। নির্বাচন কমিশনে এ স্থগিতাদেশের কপি পৌঁছেছে। তবে ঢাকার নির্বাচন কমিশন থেকে যশোর জেলা নির্বাচন অফিসে এখনো এ সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা আসেনি।
হাইকোর্ট সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলেছে, যশোর পৌরসভার নির্বাচনের উপর স্থগিতাদেশের উপর ইতিমধ্যে নিয়মিত আপিল করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। একইসাথে স্থগিতাদেশের কপি নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়েছে। আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি সরকারের পক্ষ থেকে এ মামলায় আপিল করা হবে। এছাড়া মামলায় পক্ষভুক্ত হয়েছেন যশোর পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা হায়দার গনি খান পলাশ। তিনিও আগামী রোববার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের জন্য আপিল করবেন।
সূত্র বলেছে, যশোর পৌরসভা নির্বাচন স্থগিতের জন্য একটি পক্ষ বেশ জোরেশোরেই মাঠে নেমেছে। তারা একাধিক মামলা করার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। ইতিমধ্যে দুইটি মামলা করা হয়েছে। যার একটির শুনানিতে নির্বাচন স্থগিত হয়েছে। তবে আইন পেশার সাথে জড়িতরা বলেছেন, যেহেতু একই ইস্যুতে এসব মামলা করা হচ্ছে, সেহেতু যে কোন একটি মামলায় নির্বাচনের পক্ষে রায় দিলেই অন্যগুলো এমনিতেই খারিজ হয়ে যাবে।
এদিকে, যশোর পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম-ফেসবুকে প্রতিনিয়ত নিত্য নতুন তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে। যেখানে কেউ নির্বাচন হচ্ছে বলে দাবি করছেন। আবার কেউ নির্বাচন স্থগিত হয়ে গেছে বলে জানাচ্ছেন। তাই প্রচার-প্রচারণা স্থগিত রাখবেন, নাকি চালিয়ে যাবেন তা নিয়েও দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা। তারা রীতিমতো স্নায়ুচাপে ভুগছেন। তারা নির্বাচন অফিসের পাশাপাশি সাংবাদিকদের কাছেও ফোন করে সঠিক তথ্য জানতে চাইছেন। তবে এ নির্বাচন নিয়ে মেয়র প্রার্থীদের কোন মাথাব্যাথা নেই। নৌকা মার্কার প্রার্থী হায়দার গনি খান পলাশ হাইকোর্টে প্রতিনিধি নিয়োগ করে যশোরে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। আর বিএনপির প্রার্থী মারুফুল ইসলামকে নির্বাচনী প্রচারণায় কোথাও দেখা যাচ্ছে না। একইসাথে নির্বাচন নিয়ে যশোরবাসীরও কৌতুহলী দৃষ্টি রয়েছে। তারাও খোঁজ নিয়ে নির্বাচনের আপডেট তথ্য কি আছে।
যশোর জেলা সিনিয়র নির্বাচন অফিসার ও যশোর পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, আমরা জানতে পেরেছি এ নির্বাচন সংক্রান্ত উচ্চ আদালতের নির্দেশনা নির্বাচন কমিশনে পৌঁছেছে। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের সিন্ধান্ত যশোরবাসী দ্রুতই জানতে পারবেন।
উল্লেখ্য, গত ১৯ জানুয়ারি যশোর পৌরসভার নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি যশোর পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু এ তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন স্থগিতের আদেশ চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করেন যশোর উপশহরের ৭নং সেক্টেরের মোসলেম উদ্দিনের ছেলে এডি আব্দুল্লাহ, রামনগর ইউনিয়নের আমির আলীর ছেলে সিরাজুল ইসলাম ও চাঁচড়া চেকপোস্ট এলাকার মোকসেদ আলীর ছেলে মনিরুল ইসলাম। যার শুনানি শেষে গত ৯ ফেব্রুয়ারি আদালত যশোর পৌরসভা নির্বাচনের উপর তিন মাসের স্থগিতাদেশ দেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। পরে আবেদনকারীদের দু’জন সিরাজুল ইসলাম ও মনিরুল ইসলাম এই মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন। তারা বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন।
এছাড়া, মেয়র পদে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী হয়েছেন মোহাম্মদ আলী সরদার। সবমিলে এবার যশোর পৌরসভা নির্বাচনে ৬৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হয়েছেন।
খুলনা গেজেট/এমএইচবি