যশোর জেলা পরিবহন সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন মামুনুর রশিদ বাচ্চু এবং সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন মোর্ত্তজা হোসেন। শনিবার দিনব্যাপী ভোট গণনা শেষে রাত সাড়ে ৯টায় এ ফলাফল ঘোষণা করেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব মাহাবুবুর রহমান মজনু। শুক্রবার শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ হলেও শনিবার নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ কারণে দ্বিতীয় দফা সম্পাদক মন্ডলীর অন্যান্য পদে ভোট গণনা করে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। নবনির্বাচিত এ কমিটি আগামী তিন বছরের জন্যে দায়িত্ব পালন করবে।
নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ঘোষিত ফলাফল থেকে জানা যায়, সভাপতি পদে মামুনুর রশিদ বাচ্চু পেয়েছেন ২৯৫০ ভোট। এ পদে অপর দু’জন প্রার্থী শাহেদ হোসেন জনি পেয়েছেন ২০৯৫ ভোট ও সেলিম রেজা মিঠু পেয়েছেন ১৬১৬ ভোট। সাধারণ সম্পাদক পদে মোর্ত্তজা হোসেন ৪৪৪২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। এ পদে অপর দুই প্রার্থী আব্দুল ওয়াদুদ ১৮০৯ ভোট এবং ইমান আলী পেয়েছেন ২৪০।
এছাড়া, সহসভাপতির তিন পদে রবিউল ইসলাম লবিন ৩২৫২, আবু হাসান ২৯৩৪ ও রতন অধিকারী ২৪৪২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। এ পদের অন্য প্রার্থী ষষ্টি দত্ত ২১৮১, আসাদুজ্জামান সুমন ১৬০০, মারুফ হোসেন ১৪০৫ ও হাদিউজ্জামান পেয়েছেন ৭১৬ ভোট।
যুগ্ম সম্পাদক পদে রবিউল ইসলাম মিন্টু গাজী ২৮০৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মিজানুর রহমান মিজু পেয়েছেন ২৬৯৫ ভোট।
সহ-সাধারণ সম্পাদকের দুই পদে হারুনার রশিদ ফুলু ২৮৬৫ ও কামরুল ইসলাম ২০৯২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। এপদে অপর প্রার্থীদের মধ্যে মুজিবর রহমান সরদার ১৭৬২, রকিবুল হাসান ডাবলু ১২৬৫, সেলিম রেজা ৭১২, রকিবুল ইসলাম ৩৮১ ও কাবিবুর রহমান টুটুল পেয়েছেন ৩১৯ ভোট।
সাংগঠনিক সম্পাদক পদে টিপু সুলতান ২৮১০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াজ উদ্দিন পেয়েছেন ২৫৬০ ভোট। প্রচার সম্পাদক পদে আব্দুর রহমান মিন্টু ১৬শ’ ৭৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। এপদে আব্দুর রাজ্জাক ১৩৯৪, জাহাঙ্গীর হোসেন ৯৬০, আব্দুর রহিম খাঁ বাবু ৮২৯, শেখ নান্টু ২৭৪ ভোট পেয়েছেন।
কোষাধ্যক্ষ পদে কামাল হোসেন ২০১৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। এ পদের অপর দুই প্রার্থী শহিদুল ইসলাম ১৯৮৩ ভোট ও নজরুল ইসলাম পেয়েছেন ১৪৬২ ভোট।
সদস্যের ছয় পদে নির্বাচিত হয়েছেন রবিউল ইসলাম (১৮৬৯), মোহাম্মদ আলী (১৪৮৪), তরিকুল ইসলাম (১৩৫৩), আব্দুর রউফ (১৩৩৫), শহিদুজ্জামান শহিদ (১২৪৯) ও জাহাঙ্গীর হোসেন (১৯৭)।
শনিবার সকাল ৮টা থেকে ভোট গণনা শুরু হয়। দিনব্যাপী ভোটগণনা শেষে সন্ধ্যার আগ মুহুর্তে শেষ হয়। ফলাফল ঘোষণা দেয়ার আগমূহুতেই প্রার্থীদের মধ্যে দুইজন দাবি করেন গণনা সঠিক হয়নি। প্রায় দুই হাজার ব্যালট নিয়ে নয়ছয় করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়। এসময় তাদের সমর্থকেরা শ্রমিক ইউনিয়নের অফিসের সামনে বিক্ষোভ করতে থাকেন। দুইতলায় ভোট গণনার কাজ চলতে থাকে, অন্যদিকে নিচতলায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব মাহাবুবুর রহমান মজনুর বিরুদ্ধে সেøাগান দিতে থাকেন। এসময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা অফিসে ইট পাটকেল নিক্ষেপসহ লাথি মেরে দরজা ভেঙে মাহবুবুর রহমান মজনুকে উঠিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালান। পরবর্তীতে শ্রমকি ইউনিয়নের অফিস প্রাঙ্গণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়। এরমাঝে সদস্য সচিব পুণরায় ব্যালট গণনা করার ঘোষণা দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু সেসময় অভিযোগকারী প্রার্থীরা দাবি তোলেন, ব্যালট গণনার সময় সাংবাদিকদের রাখতে হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সাংবাদিকদের বের করে দেওয়া হয়। এতে ফের পরিস্থিতি উত্তেজিত হয়ে হঠে। এক পর্যায়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। শুরু হয় পুণরায় ভোট গণনা। শেষ পর্যন্ত রাত সাড়ে ৯টায় ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবু মোর্তজা ছোট বলেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। এক পক্ষ অভিযোগ করেছিল। তা আমলে নিয়েই আমরা ফের ব্যালট গুনি।
তিনি আরও বলেন, মোট ভোট কাস্ট হয় সাত হাজার ১শ’ ১৭। তার মধ্যে ৮৩ ভোট বাতিল করা হয়েছিল। এছাড়া নির্বাচনের দিন ২৪টা ব্যালট জব্দ করা হয়েছে। শেষপর্যন্ত হিসেব করার আগেই একটি পক্ষ অভিযোগ তুলেছিল। পরবর্তীতে তাদেরকে হিসাব মিলিয়ে দেয়া হয়েছে। এরপর আর কেউ কোনো অভিযোগ করেনি।
খুলনা গেজেট/কেডি