খুলনা, বাংলাদেশ | ৫ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২০ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  যাত্রাবাড়িতে ব্যাটারিচালিত অটো রিকশাচালকদের সড়ক অবরোধ, সংঘর্ষে দুই পুলিশ আহত
  জুলাই গণহত্যা : ৮ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এক মাসে তদন্ত শেষ করার নির্দেশ
  বিশ্বকাপ বাছাই : মার্টিনেজের ভলিতে পেরুর বিপক্ষে জয় পেল আর্জেন্টিনা

যমুনাসহ ১৬ নদীর পানি বাড়ছে, ১৪ জেলায় দীর্ঘমেয়াদি বন্যার আশঙ্কা

গেজেট ডেস্ক

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এর প্রভাব পড়েছে যমুনায়। এতে যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করেছে। জেলার কাজিপুর পয়েন্টে যমুনার পানি বিপদসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা পানি শহর রক্ষা বাঁধ এলাকায় আরও ৪২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে শহর বিপদসীমার মাত্র ৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে বন্যার আশঙ্কা করছেন নদী পাড়ের মানুষ।

শনিবার (১৮ জুন) সকাল পৌনে ৮টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিন, উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন ও সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পানি পরিমাপক হাসানুর রহমান।

এদিকে পানি বৃদ্ধির ফলে অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতেও পানি বাড়ছে। এতে ধীরে ধীরে প্লাবিত হচ্ছে যমুনার চর ও নিম্নাঞ্চল। অপরদিকে, পানি বৃদ্ধির ফলে চরাঞ্চলের মানুষের মাঝে বন্যা ও ভাঙণ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। এসব এলাকায় পানিতে ডুবে নষ্ট হচ্ছে নানা রকমের ফসল।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি পেতে থাকলে নদীর তীরবর্তী এলাকায় বন্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

উত্তরাঞ্চলে বেড়েছে বন্যার তীব্রতা

এদিকে সিলেট বিভাগে বন্যার পাশাপাশি উত্তরাঞ্চলেও বন্যার তীব্রতা বাড়তে শুরু করেছে। আগামী দুই দিনের মধ্যে উত্তরাঞ্চলের ১৪টি জেলায়ও বন্যা হতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের দীর্ঘমেয়াদি বন্যার পূর্বাভাস।

পূর্বাভাস অনুযায়ী, ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার কুড়িগ্রাম দিয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করে তা আরও সামনে এগিয়ে আসছে। ফলে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও পাবনায় বন্যার পানি প্রবেশ করতে পারে। আর তিস্তা অববাহিকার কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও রংপুরে বন্যা শুরু হতে পারে।

শরীয়তপুর-মাদারীপুরে বন্যার পূর্বাভাস

এছাড়া পদ্মা নদীর পানি বেড়ে একই সময়ে দেশের মধ্যাঞ্চলের চারটি জেলায় বন্যা শুরু হতে পারে। পদ্মার মূল নদী গঙ্গার উজানে ভারি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ফলে শরীয়তপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর ও ফরিদপুরে নিম্নাঞ্চলে বন্যা শুরু হতে পারে।

পূর্বাভাস কেন্দ্রের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, আগামী দুই দিনের মধ্যে দেশের উজানে ভারতের মেঘালয়, আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ভারি বৃষ্টি আরও বাড়তে পারে। এরই মধ্যে শুরু হওয়া বৃষ্টির কারণে উজানের নদ–নদীগুলোর পানি বাড়ছে। নতুন করে বৃষ্টি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতি মারাত্মক রূপ ধারণ করতে পারে।

এদিকে ভয়াবহ বন্যায় ভাসছে সিলেটসহ হাওড়াঞ্চল। ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবারও থইথই পানিতে পুরো জনপদ। পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষকে উদ্ধারে প্রশাসনের সঙ্গে মাঠে নেমেছেন সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যরাও। বন্ধ হয়ে গেছে বিমান চলাচল।

সুনামগঞ্জে ১২ উপজেলা পানিবন্দি

এদিকে সুনামগঞ্জ পৌর এলাকাসহ ১২ উপজেলার হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। দু’দিন থেকে বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছেন সুনামগঞ্জবাসী। এদিকে জেলার সঙ্গে সিলেটের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

এছাড়া তিস্তা, ব্রহ্মপুত্রসহ উত্তরের নদ-নদীর পানি বাড়ায় লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।

কুড়িগ্রামের ৫০ গ্রাম পানিতে তলিয়ে

এদিকে, রৌমারী ও রাজিবপুর ছাড়াও কুড়িগ্রাম জেলার আরও তিনটি উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। জেলার ৫০টি গ্রাম তলিয়ে গেছে। ঘরবাড়িতে পানি ওঠায় মাচা বা নৌকায় আশ্রয় নিয়েছেন অনেকে।

১৬ নদীর পানি বাড়ছে

সীমান্তের ওপারে ভারি বর্ষণের সঙ্গে পাহাড়ি ঢলে তিস্তা ছাড়াও ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, ঘাঘটসহ ১৬ নদ-নদীর পানি বাড়ছে। ফলে নীলফামারীর ডিমলা, জলঢাকা, লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা, কালীগঞ্জের নিম্নাঞ্চলের অন্তত ১০ হাজার পরিবার বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে।

ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল এবং উজানের ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় অবস্থিত ভারতের অরুণাচল ও আসাম রাজ্যে চলতি মাসের তৃতীয় ও চতুর্থ সপ্তাহে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। এর প্রভাবে এ সময়ে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে এবং কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ ও পাবনা জেলায় সাত থেকে ১০ দিন মেয়াদী বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। জুনের শেষ সপ্তাহের প্রথম দিকে এসব অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কমে যেতে পারে এবং বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।

এ ছাড়া চলতি মাসের তৃতীয় ও চতুর্থ সপ্তাহে হিমালয় পাদদেশীয় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিমে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। যার ফলে দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি সময় বিশেষে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে এবং কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, রংপুর ও লালমনিরহাট জেলায় পাঁচ থেকে সাত দিনেরর বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। জুন মাসের চতুর্থ সপ্তাহের প্রথমদিকে এসব অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কমে যেতে পারে এবং বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।

গঙ্গা অববাহিকা

জুনে তৃতীয় ও চতুর্থ সপ্তাহে গঙ্গা নদীর পানি-সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে। অপরদিকে, পদ্মা নদীর পানি-সমতল বেড়ে বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করতে পারে। যার ফলে চলতি মাসের চতুর্থ সপ্তাহে ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মুন্সিগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলার নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

মেঘনা অববাহিকা

বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মেঘনা অববাহিকা এবং এর কাছাকাছি ভারতের মেঘালয় ও বরাক অববাহিকায় জুনের তৃতীয় ও চতুর্থ সপ্তাহে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত এবং সময় বিশেষে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। এর ফলে সুরমা, কুশিয়ারাসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সব প্রধান নদীর পানি-সমতল দ্রুত বাড়তে পারে। যার ফলে, সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলায় সাত থেকে ১০ দিন মেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। পরে এ মাসের চতুর্থ সপ্তাহের প্রথম ভাগে বৃষ্টিপাত কমে এসব অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।

এ ছাড়া জুনের তৃতীয় ও চতুর্থ সপ্তাহে ভারী বৃষ্টিপাতের পরিপ্রেক্ষিতে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নদ-নদীর পানি-সমতল বাড়লেও বিপৎসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা কম বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে—চলতি মাসের তৃতীয় ও চতুর্থ সপ্তাহে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে কোনো ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাস পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা নেই।

 

 

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!