যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ৮ শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। চাকরি প্রার্থীদের অপহরণ ও একজন আবাসিক শিক্ষার্থীকে রাতভর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ঘটনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদেরকে আজীবন বহিষ্কার এবং বর্তমানে ছাত্রত্ব না থাকায় আরও চার জনসহ মোট ১৪ জনের বিরুদ্ধেই দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৫ জুন) বিকেলে যবিপ্রবির প্রশাসনিক ভবনের সম্মেলন কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম রিজেন্ট বোর্ডের ১০০তম বিশেষ সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। রিজেন্ট বোর্ডের সদস্যরা অনেকে ভার্চুয়ালি এবং সশরীরে সভায় অংশ নেন। তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনের পর তা নিয়মানুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিসিপ্লিনারি কমিটিতে উপস্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে ডিসিপ্লিনারি কমিটির সুপারিশ রিজেন্ট বোর্ডের সভায় উপস্থাপন করার পর তা ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভার শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক ঘটনাসমূহের বিষয়ে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বক্তব্য দেন। বক্তব্যে তিনি গত ৭ ডিসেম্বর লিফট অপারেটর নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডের সময় উদ্ভূত ঘটনাসমূহ রিজেন্ট বোর্ডের সদস্যদের অবহিত করেন এবং গত ৪ জুন যবিপ্রবি শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান (পিইএসএস) বিভাগের শিক্ষার্থী শাহরিন রহমানকে রাতভর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ঘটনা অবহিত করেন।
রিজেন্ট বোর্ডের সভায় গত ৪ জুন দিবাগত রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের ৩০৬ নম্বর কক্ষে শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শাহরিন রহমানকে রাতভর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় যবিপ্রবির শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের সোহেল রানা, রেদওয়ান আহমেদ জিসান, বিপুল শেখ, ইছাদ হোসেন, আশিকুজ্জামান লিমন, আমিনুল ইসলাম, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের বেলাল হোসেন ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের রায়হান রহমান রাব্বীকে যবিপ্রবির রুলস অব ডিসিপ্লিন ফর স্টুডেন্টস অনুযায়ী আজীবন বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তবে সোহেল রানা, ইছাদ হোসেন এবং আশিকুজ্জামান লিমন এর বর্তমানে ছাত্রত্ব নেই। উল্লিখিতদের মধ্যে যাদের ছাত্রত্ব নেই তাদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। একইসাথে তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ও আবাসিক হলে প্রবেশে বিধি-নিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এছাড়া, রিজেন্ট বোর্ডের সভায় গত ৭ ডিসেম্বর লিফট অপারেটরে চাকরি প্রার্থীদের অপহরণের ঘটনা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় এবং তাদের বিষয়ে ইতিমধ্যে জারিকৃত বিধি-নিষেধ লঙ্ঘন করায় যবিপ্রবির ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী বেলাল হোসেন, ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী জি এম রাইসুল হক রানা, শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান (পিইএসএস) বিভাগের শিক্ষার্থী নৃপেন্দ্র নাথ রায়, মুশফিকুর রহমান, ফাহিম ফয়সাল লাবিব ও আবু বক্কারকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রুলস অব ডিসিপ্লিন ফর স্টুডেন্টস অনুযায়ী আজীবন বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তবে ফাহিম ফয়সাল লাবিবের বর্তমানে ছাত্রত্ব নেই। উল্লিখিতদের মধ্যে যাদের ছাত্রত্ব নেই তাদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। একইসাথে তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ও আবাসিক হলে প্রবেশে বিধি-নিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভায় যবিপ্রবির উপাচার্য ও রিজেন্ট বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আনিছুর রহমান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) খালেদা আক্তার, যুগ্ম সচিব ড. মোর্শেদা আক্তার, যশোরের আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. কাওছার উদ্দিন আহম্মদ, আইসিসিডিআর’বি-এর বায়োসেফটি অ্যান্ড বিএসএল-৩ ল্যাবরেটরির প্রধান ড. আসাদুল গনি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. কৌশিক সাহা, ইউজিসি অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির, ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিউটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. এম. এ. রশীদ, যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মর্জিনা আক্তার, যবিপ্রবির অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ইকবাল কবীর জাহিদ, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গালিব, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস (এআইএস) বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মেহেদী হাসান, রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চেয়ারম্যান নাসের শাহিরয়ার জাহেদী এমপি, সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আবু বক্কর সিদ্দিকী, যশোর সরকারি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম আহসান হাবীব, রিজেন্ট বোর্ডের সচিব ও রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী আহসান হাবীব প্রমুখ।
খুলনা গেজেট/কেডি