এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারকে খুনের উদ্দেশে অপহরণের মামলার আসামি আওয়ামী লীগ নেতা কাজী কামাল আহমেদ বাবুর ব্যবহৃত তিনটি মোবাইল ফোন উদ্ধারে ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে অভিযান পরিচালনার আদেশ দিয়েছেন আদালত। সোমবার (২৪ জুন) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল্লাহের আদালত জামিন ও রিমান্ড নামঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।
এ বিষয়ে আদালতের শেরেবাংলা নগর থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা উপপরিদর্শক জালাল উদ্দিন বলেন, আদালত আসামি বাবুর রিমান্ড ও জামিন নামঞ্জুর করেছেন। একইসঙ্গে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে বাবুকে ঝিনাইদহ কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সেখানে জেল সুপারের তত্ত্বাবধানে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে বাবুকে নিয়ে ডিবি পুলিশ অভিযান পরিচালনা করবে।
এদিন কারাগারে আটক আসামি বাবুকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর বাবুর তিনটি মোবাইল উদ্ধারের জন্য ফের পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান। অন্যদিকে আসামিপক্ষে রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে শুনানি করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত এ আদেশ দেন।
ডিবির রিমান্ড আবেদনে বলা হয়েছে, ভিকটিম আনোয়ারুল আজিম আনারকে প্রলুব্ধ করে অপহরণ ও হত্যার মূল ঘাতক শিমুল ভুইয়ার জব্দকৃত মোবাইল সেট পর্যালোচনায় পাওয়া যায় যে, শিমুল ভূইয়া ১৫ মে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসে এবং ১৬ মে রাতে গ্যাস বাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করে এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারকে অপহরণ ও হত্যা সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কথা বলে। পরবর্তীতে শিমুল ভুইয়া ও গ্যাস বাবু ফরিদপুরের ভাঙ্গা এলাকায় মিটিং করে ভিকটিম এমপি আনারের ছবি বিনিময় করে। এ ছাড়াও ১৭ মে থেকে ১৯ মে রাত পর্যন্ত শিমুল ভুইয়ার সঙ্গে বাবুর হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ হয়, এসএমএস আদান-প্রদান হয় এবং ভিকটিম আনার অপহরণ ও পরবর্তী টাকা পয়সা সংক্রান্তে কথাবার্তা হয়। উপর্যুক্ত তথ্যের ভিত্তিতে বাবুকে গ্রেপ্তার করে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে, সে ঘাতক শিমুল ভুইয়ার সঙ্গে ভিকটিম আনার অপহরণ ও হত্যা সংক্রান্তে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ, ছবি আদান প্রদান ও এসএমএস আদান প্রদানের কথা স্বীকার করে। শিমুল ভূইয়ার সাথে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করার মোবাইল সেটগুলো কোথায়- এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বাবু জানায়, তার মোবাইল সেটগুলো হারিয়ে গেছে এবং এই সংক্রান্তে থানায় জিডি করেছে।
পরবর্তীতে ১৪ জুন মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। জবানবন্দিতে আসামি স্বীকার করে যে, আসামি শিমুল ভূইয়ার সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগকৃত মোবাইল সেট তিনটির মধ্যে দুটি গাঙ্গুলী হোটেলের পিছনের পুকুরে এবং একটি স্টেডিয়ামের পূর্ব পার্শ্বের পুকুরের পানিতে ফেলে দেয়। এ মোবাইল সেটগুলোতে ভিকটিম আনার অপহরণ ও হত্যা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে বিধায় সেটগুলো প্রয়োজন। তাই মোবাইল সেটগুলো কোন কোন স্থানে ফেলেছে সেই স্থান নির্ধারণসহ মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত মোবাইল সেটগুলো উদ্ধার করার জন্য হাজতি আসামিকে সঙ্গে নিয়ে ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করার জন্য আসামি গ্যাস বাবু পাঁচ দিনের পুলিশ রিমান্ড প্রয়োজন।
এর আগে গত ৯ জুন আদালত আসামি বাবুর সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে গত ১৪ জুন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিমের আদালত তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন। ওইদিন জবানবন্দি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এই মামলায় শিমুল ভুঁইয়া ওরফে শিহাব ওরফে আমানুল্যাহ সাঈদ, তানভীর ভূঁইয়া ও শিলাস্তি রহমান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ছাড়া গ্রেপ্তার ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
খুলনা গেজেট/এএজে