এক সময় শিক্ষা থেকে ঝরে পড়া এবং ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমের সাথে যুক্ত মহিউদ্দিন হোসেন মিঠু (১৭) এখন সে চাকরি করছে। মিঠু শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের সুন্দরবনের কোলঘেঁষা দক্ষিণ কদমতলা গ্রামের দিনমজুর মনিরুল ইসলাম ও মমতাজ খাতুনের পুত্র। মা-বাবা, দাদী ও ৩ ভাইসহ মোট ৬ জনের পরিবার তাদের।
ভাই-বোনদের মধ্যে মহিউদ্দিন মিঠু সবার বড়। ছোট বেলা থেকে দরিদ্র পিতার সন্তান হওয়ার পরও লেখাপড়ার প্রতি তার ছিল প্রচন্ড আগ্রহ। কিন্তু দারিদ্র্যতা তাকে হার মানাতে বসেছিল। মোবাইল কোম্পানিতে চাকরি পাবার পর তার স্বপ্নও বাস্তবায়নের পথে হাঁটতে শুরু করেছে। মহিউদ্দিন মিঠু এখন চাকরির পাশাপাশি পড়াশুনা করছে, স্বপ্ন দেখছে মোবাইল শপের মালিক হবারও।
মহিউদ্দিন হোসেন মিঠু জানায়, ছোট বেলা থেকে সে লেখাপড়ার পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমের সাথে যুক্ত ছিল। তার ছোট ভাই ইটের ভাটায় কাজ করতো। চরম দারিদ্রতার কারণে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর তার লেখাপড়া প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এক পর্যায়ে পরিবারের সকলের সহযোগিতায় আবারও লেখা পড়া শুরু করে এসএসসি পাশ করে। হঠাৎ সে জানতে পারে, তাদের এলাকায় বে-সরকারী সংস্থা উত্তরণ, এডুকো বাংলাদেশের সহযোগিতায় ঝরে পড়া এবং ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমের সাথে যুক্ত শিশুদের ভকেশনাল ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেছে। এ সময় সে এলাকার ইউপি মেম্বরের সহযোগিতায় ২০২৩ সালের উত্তরণের ভকেশনাল ট্রেনিংয়ে অংশগ্রহণ করে সফলতার সাথে ইলেকট্রনিক্স ও মোবাইল ফোন সার্ভিসিং বিষয়ে ৩ মাসের কারিগরী প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্ন করে। প্রশিক্ষণ শেষে উত্তরণ কর্তৃক আয়োজিত চাকরি মেলা থেকে আনিরা ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি তাকে চাকরির সুযোগ করে দেয়। বর্তমানে মহিউদ্দিন মাসিক ১২ হাজার টাকা বেতনে নারায়নগঞ্জের আনিরা ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করছে। চাকরির পাশাপাশি লেখাপড়াও চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে তার স্বপ্ন মোবাইল শপের মালিক হবার।
মহিউদ্দিনের বাবা মনিরুল ইসলাম বলেন, দিনমজুর খেটে খাওয়া পরিবারের সন্তান হিসাবে উত্তরণ ও এডুকোর মাধ্যমে কারিগরী প্রশিক্ষণ নিয়ে ইণ্টারন্যাশনাল কোম্পানীতে চাকরীর সুযোগ পাওয়ার জন্য আমরা খুবই গর্বিত। মহিউদ্দিনকে এমন সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আমার পরিবার তাদের কাছে চির কৃতজ্ঞ।
উত্তরণের শিশুশ্রম ও নিরসন প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক নাজমা আক্তার বলেন, শ্যামনগর উপজেলায় মুন্সিগঞ্জ, বুড়িগোয়ালিনি, গাবুরা ও কাশিমাড়ী ইউনিয়নে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। অত্র ইউনিয়গুলোয় চারটি ব্রিজ স্কুলে ৩৫০ জন শ্রমজীবী শিশুকে শিক্ষাদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এই শিশুরা নিয়মিত ব্রিজ স্কুলে এসে লেখাপড়া করছে। এর মধ্যে ২০২৩ সালে ৫০ জন প্রশিক্ষাণার্থী তিনটি বিষয়ের উপর কারিগরী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। এর মধ্যে মহিউদ্দিন হোসেন মিঠু ইলেকট্রেনিক্স এবং মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ে তিন মাসের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। প্রশিক্ষণ শেষে নারায়নগঞ্জের আনিরা ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরির সুযোগ হয় তার।
মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অসীম কুমার মৃধা বলেন, উত্তরণের শিশুশ্রম ও নিরসন প্রকল্পের এই কার্যক্রম উপকূলীয় এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে। মহিউদ্দিন হোসেন মিঠুর মতো অনেকেই বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে তা কাজে লাগিয়ে কিছু উপার্জন করছে।
শ্যামনগর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ শাহিন হোসেন জানান, মূলত ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমে নিয়োজিত স্কুল বহির্ভূত শিশুদের শিক্ষার মূল স্রোতে আনার জন্যই এ ব্যবস্থা। এটি দুর্গম ও পিছিয়ে পড়া উপকূলীয় এলাকায় অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে ইলেকট্রনিকস ও মোবাইল সার্ভিসিং প্রশিক্ষণ একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ বলে মনে করেন তিনি।
খুলনা গেজেট/এনএম