বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দুই দিনের এক রাষ্ট্রীয় সফরে আজ শুক্রবার সকালে ঢাকা পৌঁছেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আগামিকাল ২৭ মার্চ তিনি সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুর এলাকায় অবস্থিত যশোরেশ্বরী কালিমন্দির পরিদর্শন করবেন এবং সেখানে পূজা ও প্রার্থনায় অংশ নেবেন।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্যমতে নরেন্দ্র মোদী আগামী ২৭ মার্চ সকাল ৯টা ৪৫ মিনিট শ্যামনগর এ সোবাহান মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে নবনির্মিত হ্যালিপ্যাডে বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার যোগে অবতরণ করবেন। এরপর তিনি সকাল ৯ টা ৫০ মিনিট যশোরাশ্বরী দেবি মন্দিরে পূজা দেয়ার জন্য প্রবেশ করবেন। সেখানে তিনি মাত্র ২০ মিনিট থাকার পর ১০ টা ১০ মিনিট মন্দির ত্যাগ করবেন। এরপর ১০ টা ১৫ মিনিট তিনি হ্যালিকপ্টার যোগে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন।
ভারতের প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাতক্ষীরার শ্যামনগরে আগমন উপলক্ষে গড়ে তোলা হয়েছে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টনী। রাষ্ট্রীয় এ অতিথির নিরাপত্তার কাজে অংশ নিতে ভারতীয় বিশেষ নিরাপত্তা রক্ষীসহ বাংলাদেশের সেনা বাহিনীর একটি টিম মন্দির এলাকায় পৌছেছে। এদিকে যশোরেশ^রী মন্দিরসহ হেলিপ্যাড এর নিয়ন্ত্রণ নরেন্দ্র মোদীর নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী গ্রহণ করেছে। মন্দির ও হেলিপ্যাডসহ আশপাশের এলাকায় কিছুক্ষন পরপরই ড্রোন উড়িয়ে পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত বিশেষ বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়া ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে বহন কাজে অংশ নিতে বৃহস্পতিবার বিকালে এসএসএফ এর বেশ কয়েকটি গাড়ী শ্যামনগরে পৌছে।
অপরদিকে শ্যামনগর উপজেলার যশোরেশ্বরী কালি মন্দিরের ৫ কিলোমিটার ব্যাসার্ধ্যরে মধ্যে বিপুল সংখ্যক পোশাক ধারী পুলিশসহ দৃশ্যমান তিন স্তরের নিরপত্তা বিধান করা হয়েছে। শ্যামনগরে ব্যক্তি শনাক্ত করণে অত্যাধুনিক মেশিন ব্যবহৃত হচ্ছে। ইলেট্রিক যন্ত্রের সাহায্যে মানুষের আঙ্গুলের ছাপ সংগ্রহ করে রাখছে র্যাব। অন্যদিকে শ্যামনগর উপজেলাসহ জেলাজুড়ে সাদা পোশাকে পৃথক আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্যদের সমন্বয়ে থাকছে বহুমুখী নিরপাত্তা ব্যবস্থা। থাকবেন পিজিআর (প্রেসিস্টে গার্ড রেজিমেন্ট) এস এস এফ (স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স) এর কর্মকর্তা/সদস্যরা। চিকিৎসকসহ ২৪ ঘন্টা লাইফ সিকিউরিটি সিষ্টেমসহ উন্নতমানের এম্বুলেন্স ও অস্থায়ী হাসপাতালও নির্মান করা হয়েছে।
মন্দির থেকে হেলিপ্যাড পর্যন্ত বিস্তুত সড়কের দু’পাশে বসবাসকারী পরিবারগুলোর সদস্যদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কাউকে বাড়ির বাইরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। নরেন্দ্র মোদীর সফর শেষ না হওয়া পর্যন্ত এসব এলাকার পরিবারগুলোতে তাদের কোন আত্বীয় স্বজনের আসার ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
র্যাব-৬, সিপিসি-১, সাতক্ষীরা ক্যাম্প সূত্রে জানা গেছে, ভারতীয় প্রধান মন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে সাতক্ষীরা ও এর পাশ্ববর্তী এলাকা সমূহের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে ব্যাপক নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। নিশ্চিদ্র নিরপত্তা বিধানে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক, সাতক্ষীরা-মুন্সিগঞ্জ সড়ক, সমগ্র সাতক্ষীরা জেলা, শ্যামনগর উপজেলা এলাকা এবং যশোরেশ্বরী কালী মন্দির সংলগ্ন এলাকায় দিবা-রাত্রি র্যাবের চৌকস সদস্যদের মাধ্যমে মহড়া, টহল ও তল্লাশী কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়াও যেকোন ধরনের নাশকতামূলক কর্মকান্ড রোধকল্পে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সনাক্ত করার উদ্দেশ্যে তথা ব্যক্তি সনাক্ত করণে অত্যাধুনিক মেশিন ব্যবহৃত হচ্ছে। এর পাশাপাশি প্রশিক্ষিত র্যাব গোয়েন্দা সদস্যরা সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধিসহ অগ্রিম গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে যে কোন ধরনের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি রোধকল্পে সার্বক্ষনিক নিয়োজিত রয়েছে।
সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় শ্যামনগরের যশোরেশ্বরী কালিমন্দিরের ৫ কিলোমিটার ব্যসার্ধ্যরে মধ্যে ১৩শ’ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হবে। জেলা সদরের গুরুত্বপূর্ন স্থানসহ গোটা শ্যামনগর উপজেলা সিসি টিভির আওতায় আনা হয়েছে। পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাধা পোশাষের বিপুল সংখ্যাক সদস্য ও কর্মকর্তারা নিরপত্তা নিশ্চিত করতে দায়িত্বে নিয়জিত আছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কঠোর অবস্থান অব্যাহত থাকবে। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিঘœতা সৃষ্টিকারী যে কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠিকে কঠোর হস্তে দমন করা হবে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তাফা কামাল জানান, রাষ্ট্রীয় অতিথি ভারতীয় প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আগমনকে ঘিরে নিরাপত্তার চাঁদরে ঢাকা হয়েছে গোটা সাতক্ষীরা। ইতিমধ্যে সবধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। জেলা ব্যাপী আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও শান্তি পূর্ণ রয়েছে বলে তিনি জানান।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মন্দির থেকে হেলিপ্যাড পর্যন্ত সমুদয় এলাকাজুড়ে র্যাব সদস্যদের টহল জোরদারের পাশাপাশি সড়কের দু’পাশে দুই দেশের সরকার প্রধানের ছবিসহ জাতীয় পতাকা লাগানো হয়েছে। সড়কের দু’পাশে থাকা জলাশয়ের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে সেখানে ঝর্না পানির সজ্জা করা হয়েছে। বাঁশের তৈরী ফুলের ঝুড়ি দিয়ে রাস্তার দু’পাশ চারু শিল্পের ছোয়ায় বিশেষভাবে সাজানো হয়েছে। ভরাতের সরকার প্রধানকে বরণে যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ হওয়ায় মন্দির এলাকায় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের পদচারনা কমলেও আইন শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পাওয়া বাহিনীগুলোর তৎপরতা বহুগুনে বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করতে অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছেন সাতক্ষীরা বাসী। তার আগমনকে ঘিরে বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরাজ করছে এক ধরনের উৎসবের আমেজ। তবে, তার সফরটি খুবই সংক্ষিপ্ত হলেও আয়োজনে কোনো ঘাটতি রাখেননি জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যে তারা সেখানে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।
খুলনা গেজেট/এনএম