ভারতে বিবিসির দিল্লি ও মুম্বাই কার্যালয়ে ‘সমীক্ষা’ শেষে শুক্রবার সন্ধ্যায় দেশটির আয়কর বিভাগ এ নিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, তারা কিছু তথ্য পেয়েছে, যাতে দেখা যাচ্ছে বিদেশি সংস্থাটি আয়ের বিষয়টি গোপন করেছে ও কর দেয়নি। কাজের যে ব্যাপ্তি তার সঙ্গে বিবিসির প্রদর্শিত আয় বা মুনাফা সংগতিপূর্ণ নয়।
বিবিসির নাম উল্লেখ না করে দাবি করা হয়, তারা বেশ কিছু প্রমাণ পেয়েছে। এ ছাড়া ডিজিটাল এবং অন্যান্য নথি ও কর্মীদের জবানবন্দিও তারা খতিয়ে দেখছে।
আয়কর কর্তৃপক্ষ বলছে, সমীক্ষায় বিবিসির ‘ট্রান্সফার প্রাইসিংয়ে’ অনেক বিচ্যুতি খুঁজে পেয়েছে তারা। কোনো কোনো কর্মীর বিরুদ্ধে তারা তদন্ত দীর্ঘায়িত করার অভিযোগও এনেছে। তবে আয়কর বিভাগের বিবৃতিতে কী ধরনের বিচ্যুতি, কত দিন ধরে অথবা কত টাকা কর ফাঁকি—এসব বিষয়ে বিস্তারিত কিছুই জানানো হয়নি।
বিবিসির দিল্লি ও মুম্বাই কার্যালয়ে ভারতের আয়কর বিভাগ টানা ৬০ ঘণ্টার তদন্ত-তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে। গত মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে এ অভিযান শুরু করে আয়কর বিভাগ। বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় এ অভিযান শেষ হয়। অভিযান শেষে রাতেই বিবিসির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে বিবিসি বলেছে, তারা ভয় না পেয়ে পক্ষপাতমুক্তভাবে খবর পরিবেশন করে যাবে। তারা স্বাধীন ও বিশ্বস্ত। তারা দৃঢ়ভাবে তাদের সাংবাদিক ও কর্মীদের সঙ্গে রয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে তাঁদের জেরার মুখোমুখি হতে হয়েছে। তাঁদের মঙ্গলই প্রতিষ্ঠানের অগ্রাধিকার। সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গেও সহযোগিতা করে যাবে।
গত জানুয়ারিতে বিবিসি ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে দুই পর্বের তথ্যচিত্র সম্প্রচার করে। ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদি কোশ্চেন’ নামে তথ্যচিত্রে দাঙ্গায় ওই রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সম্পৃক্ততার বিষয় উঠে আসে। তথ্যচিত্রে বলা হয়, ওই দাঙ্গা মোদিকে পরবর্তীকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে সাহায্য করেছিল।
তথ্যচিত্রটি ভারতে সম্প্রচার করা না হলেও সরকার তা নিষিদ্ধ করে। এ জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ও শাসক দল বিজেপির পক্ষ থেকে এই তথ্যচিত্রকে ‘ভারতের প্রতি আক্রমণ’ বলে চিহ্নিত করা হয়। বলা হয়, বিবিসি ঔপনিবেশিকতামুক্ত হতে পারেনি।
তথ্যচিত্রটির রেশ ভারতীয় পার্লামেন্টেও গড়ায়। বিরোধীরা বিষয়টি নিয়ে পার্লামেন্টে আলোচনার দাবি জানিয়েছিলেন। পার্লামেন্টে বাজেট অধিবেশনের বিরতির পরদিন মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ভারতের আয়কর বিভাগ বিবিসির দিল্লি ও মুম্বাই কার্যালয়ে হানা দেয়। সরকার এ তদন্ত-তল্লাশিকে ‘সমীক্ষা’ বলে বর্ণনা করছে।
বিবিসির দিল্লি ও মুম্বাইয়ের কার্যালয়ে ভারত সরকারের আয়কর বিভাগের তল্লাশি নিয়ে দেশজুড়ে নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় বইছে। বিরোধীদের কেউ বলেছেন, এটা বিনাশকালে বিপরীত বুদ্ধি। কেউ বলেছেন, গৌতম আদানি ‘সেবি’তে গেলে তাঁকে সাদর আপ্যায়ন করা হয়, আর বিবিসির ভাগ্যে জোটে তল্লাশি। এডিটরস গিল্ডও এ তল্লাশির তীব্র নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করে এক বিবৃতিতে বলেছে, বিবিসির ক্ষেত্রে যা ঘটেছে, তা সরকারের পুরোনো রীতিরই ধারাবাহিকতা। বারবার সরকার এভাবে ভয় দেখিয়ে সংবাদপত্র ও সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধের চেষ্টা করে চলেছে।