মোংলায় জমি দখল করতে না পারায় একটি চিংড়ি ঘেরে বিষ দিয়ে প্রায় কয়েক লক্ষ টাকার মাছ মেরে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। চিলা গাববুনিয়া এলাকায় শনিবার রাতের অন্ধকারে বাগদা ও গলদা চিংড়ি, রুই, কাতল, ফাইসা ও পাঙ্গাসসহ কয়েক প্রজাতির মাছ মেরে ফেলা হয়েছে। বাধা দেয়ায় এক বৃদ্ধা নারীকে মেরেও রক্তাক্ত জখম করা হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে অসহায় পরিবারটি।
থানায় অভিযোগ সূত্রে ও ভুক্তভোগীরা জানায়, মোংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের গাববুনিয়া গ্রামের গরিব ও অসহায় পান্না বেগম ও তার বাবা-মা ভাই বোন নিয়ে কববাস করে আসছে। দীর্ঘদিন যাবত পান্না বেগম পরিবারের এক খন্ড জমি জোরপুর্বক দখলের পায়তারা করে আসছিল প্রতিবেশী সন্ত্রাসী নুর জামাল ও বদিয়ার শেখ নামের কয়েক প্রভাবশালী ব্যক্তি। গৃহবধু পান্না বেগমের জমির পাশেই তাদের প্রায় ৫০ থেকে ৬০ একরের চিংড়ি ঘের রয়েছে। চিংড়ি ঘেরের সাথে ৭/৮ বিঘা জমির ঘেরটি দখলে নেয়ার চেষ্টা করে বদিয়ারসহ তাদের লোকজন। এতে পান্না বেগম বাঁধা দেয়ায় বাড়ির ভিতরে ঢোকার পথও বন্ধ করে দেয় বদিয়ার শেখ ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর লোকজন। পরে নৌকায় করে বসত বাড়ির ভিতরে আসা-যাওয়া করে পান্না বেগমের বৃদ্ধ মা-বাবা ও তার পরিবারের লোকজন।
থানায় অভিযোগকারী পান্না বেগম বলেন, আমরা গরীব এবং বদিয়ার ও নুর জামাল শেখ এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় দীর্ঘদিন যাবত আমাদের উপর অত্যাচার-নির্যাতন করে আসছে তারা। তাদের হুমকি-ধামকিতে আমার দুইটি ভাই অন্য জায়গায় কাজ করে খায় কিন্ত এদের কারনে বাড়িতে আসতে পারছে না। বাড়িতে ঢোকার পথও বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া আমাদের জব্দ করার জন্য বেশ কয়েকটি মামলাও দিয়েছে এ সন্ত্রাসী বাহিনীরা।
অবশেষে বদিয়ার ও নুর জামাল শেখ’র বাড়ীর ভিতর দিয়ে পাইপের মাধ্যমে বিষ ঢেলে পান্না বেগমের ঘেরের মাছ মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে তারা। শনিবার রাতের অন্ধকারে মাছের ঘেরে বিষ দিয়ে পান্না বেগম পরিবারের প্রায় ৮/১০ লক্ষ টাকার মাছ মেরে ফেলছে ওই সকল সন্ত্রাসীরা।
এ সময় পান্না বেগমের বৃদ্ধা মা সুফিয়া বেগম ঘেরে বিষ দেয়া দেখে ফেলায়, প্রতিবাদ করলে ওই বৃদ্ধা মহিলাকে মেরে রক্তাক্ত জখম করে বদিয়ার, নুর জামালসহ তাদের লোকজন। বিষের কারণে সকালে ঘেরের মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মরে ভেসে উঠছে দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে পরিবারের লোকজন। এসময় স্থানীয় লোকজন এসে তা দেখে অবাক হয় অনেকেই। বদিয়ার শেখ এলাকায় প্রভাবশালী ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর থাকায় কেউ তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বা মুখ খুলতে সাহস পায়না বলে জানায় এলাকার অনেকেই। স্থানীয়রা পান্না বেগমের বৃদ্ধাা মা সুফিয়া বেগমকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে মোংলা হাসপাতালে চিকিৎসা করায়।
এ ব্যাপারে শনিবার রাতেই পান্না বেগম বাদী হয়ে নুর জামাল শেখ, বদিয়ার শেখ, আব্দুল্লাহ শেখ. জিলানী শেখ, মুনসুর ও জালাল শেখ এ ৬জনকে অভিযুক্ত করে মোংলা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছে। রোববার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে মোংলা থানা পুলিশের একটি দল।
অভিযুক্ত বদিয়ার শেখ জানায়, ঘেরে বিষ দিয়ে মাছ মারার অভিযোগ মিথ্যা তবে তাদের ঘেরের জমির পাশে বেড়িবাঁধ দেয়া নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হয়েছে, আমাদেরকেও মারধর করেছে পান্না বেগমসহ তাদের লোকজন।
মোংলা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ ইকবাল বাহার চৌধুরী জানায়, চিলা গাববুনিয়া এলাকায় একটি চিংড়ি ঘেরে বিষ দিয়ে মাছ মেরে ফেলার অভিযোগ পেয়েছি। পুলিশের একটি দল সেখানে পাঠানো হয়েছে, তদন্ত করে দোষিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানায় থানার এ কর্মকর্তা।
অসহায় এ পরিবারটির জমিটুকু দখলে নেয়ার জন্য ইতিপূর্বে পান্না বেগমের পিতা-মাতা ও ভাই বোনদের মারধরসহ বেশ কয়েকটি মামলাও দিয়েছে বদিয়ার শেখ ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর লোকজন। এ ব্যাপারে এ সন্ত্রাসী বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পেতে প্রশাসনের সহায়তা চেয়েছে পান্না বেগমের পরিবারের সদস্যরা।
খুলনা গেজেট/এনএম