মোংলা উপজেলার চাঁদপাই ইউনিয়নের কাইনমারী গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মালেক (৭০)। চার সন্তান আর স্ত্রীসহ পরিবার পরিজন নিয়ে এক সময় বেশ ভালোই ছিলেন তিনি। উপজেলা পরিষদের সামনে নিজের প্লট ও দোকান ছিল তার। তার আয়ের উৎস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দিকে নজর পড়ে নিউ বসুন্ধারা রিয়েল এস্টেট নামের একটি প্রতারচক্রের। তাদের প্রলোভনে পড়ে ১০ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন দোকানের প্লট। আর এ টাকা জমা তুলে দিয়েছেন ওই চক্রটির হাতে। মাত্র দু’বছরের ব্যবধানে নিঃস্ব হয়ে এখন পথে বসেছেন তিনি। পরিবার পরিজন সহ আশ্রয় নিয়েছেন অন্যের ভিটায়।
পৌর শহরের কেওড়াতলার বাসিন্দা ছেতারা বেগম(৬৫)। স্বামী-সন্তান নেই এই নারীর। অন্যের বাড়িতে ঝি কাজ করে পেট চলে তার। দু’এক পয়সা করে ১০ বছরের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমে ৫০ হাজার গুছিয়ে ছিলেন তিনি। তার কষ্টের সমুদয় অর্থ ফুঁসলিয়ে নেয় ওই একই চক্র। এখন টাকার অভাবে তার চিকিৎসা হচ্ছে না। চরম দূচিন্তা- হতাশা আর মানবেতর দিন কাঁটছে ওই বৃদ্ধার । শহরতলীর কলেজ মোড় এলাকার বিধবা জোহরা বেগম(৬০) বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে কাপড় বিক্রি করেন। একটি এনজিও থেকে লোন নিয়ে এবং ব্যবসার টাকা মিলিয়ে দু’লাখ টাকা জমা রেখে ছিলেন নিউ বসুন্ধারা রিয়েল এস্টেট নামের ওই প্রতিষ্ঠানে।
শুধু মালেক আর ছেতারা নয়, মোংলার মধ্য ও নিম্নবিত্ত ৭ শতাধিক পরিবার ওই চক্রটির প্রতারনার জালে আটকা পড়েছে। আর বিভিন্ন প্রলোভনে তাদের কাছে থেকে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে ৩০ কোটি টাকা। এ প্রতিষ্ঠানের লোভনীয় অফারে আকৃস্টি হয়ে জমি বিক্রি ও ব্যাংক লোন সহ জীবনের অপর্জিত অর্থ কড়ি হারিয়ে এখন নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছেন অনেকে। কবে নাগাদ ফেরৎ পাবেন গচ্ছিত টাকা তাও কারোই জানা নেই।
ভুক্তভোগীরা জানান, ২০১১ সালের প্রথম দিকে মোংলা উপজেলা ও পৌর এলাকায় নিউ বসুন্ধারা রিয়েল এস্টেট নামের এ প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়। শুরুতে প্রতিষ্ঠানের নিয়োগকৃত দালালরা মধ্যবৃত্ত ব্যবসায়ী ও নিম্ন পেশার মানুষকে টার্গেট করে আকর্ষনীয় ও লোভনীয় অফার দিয়ে গ্রাহক সংগ্রহে মাঠে নামে। সুদ নয়, ফরজে হাসনা নামে ব্যাংকের চেয়ে দ্বিগুন লাভ্যাংশ দেয়ার অফার দেয়। আর অল্প সময়ের মধ্যে ওই প্রতিষ্ঠানের প্রতারনার জালে আটকা পড়ে মোংলার ৭শ’পরিবার । আর এ প্রতিষ্ঠানে ৫০ হাজার থেকে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত জমা রাখেন গ্রাহকদের কেউ কেউ। ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় ৩০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় এ প্রতিষ্ঠানটি। একই বছর নভেম্বরে হঠাৎ আত্মগোপনে যেতে শুরু করে স্থানীয় পর্যায় দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহক সংগ্রহকারী দালালরা। আর যারা আছেন, তারও গ্রাহকদের গচ্ছিত টাকা ফেরত দিতে নানা অজুহাতে তালবাহানা করে চলছে।
এ অবস্থায় গত বছর ১৫ জুলাই দুদকের মানি লন্ডরিং মামলায় আটক হয়ে কারাগারে রয়েছেন নিউ বসুন্ধারা রিয়েল এস্টেট নামের এ প্রতিষ্ঠানের মালিক আঃ মান্নান তালুকদার। প্রতিষ্ঠান প্রধান কারাগারে আর তার সহযোগী দালালরা আত্মগোপনে থাকায় এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন গ্রাহকরা। উপার্জিত অর্থকড়ি হারানোর আশংকাসহ মানবেতর দিন কাটছে বিনিয়োগকারীদের। কবে নাগাদ ফেরত পাবেন গচ্ছিত টাকা তাও কারো জানা নেই।
গ্রাহক মোঃ লুৎফূল আলম বাবুল জানান, একটু স্বচ্ছল জীবন যাপনের আশায় জীবনের উপর্জিত সম্পদ ভিটা বিক্রি, অবসর ভাতা আর ব্যাংক লোন নিয়ে নিউ বসুন্ধারা রিয়েল এস্টেট নামের এ প্রতিষ্ঠানে গচ্ছিত রখেছিলেন গ্রাহকরা। তিনি বলেন-সরকার একটু উদ্যেগী হলে ফেরৎ পাবেন তাদের গচ্ছিত টাকা।