খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৮৬

মোংলায় করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ

মোংলা প্রতিনিধি

ঈদুল ফিতরের পর থেকে মোংলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের হার বৃদ্ধির পাওয়ায় কঠোর বিধি নিষেধ আরোপ করতে যাচ্ছে মোংলা উপজেলা প্রশাসন। এক দিকে ঈদের ছুটি আর অন্যদিকে মোংলা সমুদ্র বন্দর। লাইটার বা কার্গো জাহাজ বোঝাই করে ভারতীয় পণ্য নিয়ে আসা নাবিকরা বাজারে অবাধ বিচরণ ও সংক্রমিত লোকজন শহরে ঢুকে পরার ফলেই আক্রান্তের হার ৫০% বৃদ্ধি পাওয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে তারা। বিধি নিষেধের ঘোষণায় মোংলার সাধারণ মানুষ উদ্বেগ হয়ে পড়েছে।

দেশে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় অন্যস্থানের মতো মোংলায়ও উপজেলায় প্রশাসন, নৌবাহিনী, থানা পুলিশ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, অঘোষিত লকডাউন, হোম কোয়ারেন্টিন ও সামাজিক দুরত্ব, সতর্কতামূলক প্রচার, জীবানুনাশক স্প্রে হাট-বাজার বন্ধসহ নানামুখী কার্যক্রম সক্রিয় ছিল সব সময়ই। কিন্ত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে এখানকার মানুষের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বা স্বাস্থ্যবিধি মানাসহ সব কার্যক্রমই মুখ থুবড়ে পড়েছে। এ অঞ্চলটি বন্দরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় দেশ-বিদেশি লোকজন শহরে ঢুকে পরছে হর-হামেশাই।

এতে করে গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও হাট-বাজারে সামাজিক দূরত্ব কেউ মানছেন না। ক্রেতা-বিক্রেতারা একে অন্যের গা-ঘেঁষে দাঁড়াচ্ছেন। হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার রক্ষা করছেন না। ওষুধের দোকান, মুদি দোকান ও সবজির দোকান ব্যতিত সব ধরনের দোকানপাট বন্ধ রাখার পুর্বের নির্দেশনা কেউ মানছিলেন না। ওই সময় প্রায় সব দোকান খোলা রেখেছে অনেকে। বিশেষ করে চায়ের দোকানে আগের মতই মানুষের আড্ডা চোখে পড়ছে। ফলে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়েছে।

তাই মোংলায় করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় ৭টি বিধি নিষেধ আরোপ করতে যাচ্ছে মোংলা উপজেলা প্রশাসন। এর মধ্যে রয়েছে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধান, জরুরি পরিবহন ছাড়া অন্য যানবাহন পৌর শহরে ঢুকতে না দেয়া, ঔষধ, জরুরি কৃষিপণ্য ব্যতীত সকল দোকানপাট বন্ধ রাখা, কাঁচাবাজার, মুদিবাজার, মাংস, মাছ ও ফলের দোকান সকাল ৬ টা থেকে বিকেল ৩ টা পর্যন্ত খোলা রাখা, হোটেলে বসে না খাওয়া, অন্য এলাকা থেকে আসা কার্গো বা লাইটার জাহাজের নাবিকদের বাজারে প্রবেশ করতে না দেয়া, নদী পারাপারে মাস্ক পরিহিত ১৬ জনের বেশী যাত্রী না তোলা। রোববার থেকে শুরু করে আগামী ৮ দিন এ বিধি নিষেধ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে নেয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

এ ব্যাপারে মোংলা পৌরসভা এলাকার কবির হোসেন বলেন, সরকারের ঘোষণা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় সামাজিক দূরত্ব এখন কথার কথায় পরিণত হয়েছে। মানুষের মধ্যে কোনো সচেতনতা নেই। আগের মতই চলাফেরা করছেন। বিশেষ করে ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, চট্টগ্রাম শহর থেকে যারা মোংলা পৌর শহর বা গ্রামাঞ্চলে আসছে তারা বাড়িতে না থেকে বাজারে আড্ডা জমাচ্ছেন। অথচ তাদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা অনেকটাই বাধ্যতামূলক ছিল কিন্ত তা কেউ মানছে না। যার ফলে আজ কঠিন পর্যায় পৌঁছেছে মোংলার করোনা ভাইরাসের পরিস্থিতি।

মোংলা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, পুলিশ প্রশাসন যথাযথ দায়িত্ব পালন করছেন। আমরা টহল দেওয়ার সময় লোকজন সরে যায়। পরে হয়তো ফিরে আসে। সরকারি নির্দেশ অমান্যকারীদের জেল জরিমানা করার একতিয়ার পুলিশের নেই। তারপরও বিধি নিষেধ শুরু হয়েছে তাই লোকজনকে বুঝিয়ে করোনা থেকে সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

মোংরল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কমলেশ মজুমদার বলেন, আগের তুলনায় মোংলায় কারোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি। ঈদুল ফিতরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষ মোংলায় এসেছে পরিবারের সাথে ইদ উৎসব উপভোগ করার জন্য, আবার ফিড়েও গেছে কর্মস্থলে। এছাড়াও দেশের অন্যান্য এলাকার মানুষ মোংলায় ঢুকে পরছে অহরহ। অন্যদিকে বেশ কিছুদিন থেকে লক্ষ করা যাচ্ছে, দেশীয় লাইটার ও কার্গো জাহাজগুলো ভারতে যাচ্ছে পণ্য পরিবহনের জন্য। বিভিন্ন পন্য বোঝাই করে মোংলার পশুর নদীতে নৌযান নোঙ্গর করে নাবিকরা তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় মালামাল ক্রয় করে। আর এ সকল নাবিকরা এখানকার মানুষের সাথে এক জায়গায় বসছে, চলছে বা একত্রে খাওয়া-দাওয়াও করছে। তাই উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যানুযায়ী মোংলায় করোনা সংক্রমণের সংখ্যা প্রায় ৫০% বৃদ্ধি পাওয়ায় এ সিদ্ধান্তে যেতে বাধ্য হয়েয়ে বলে জানায় এ কর্মকর্তা।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!