মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলে অবস্থানরত একটি তেলের ট্যাংকারে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। আজ রোববার (২৩ মে) দুপুরে পশুর চ্যানেলের গ্রিন টাউন গ্যাস কোম্পানির জেটি সংলগ্ন নদীতে এ ঘটনা ঘটে। এতে এক নাবিক খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে মৃত্যু হয় এবং অন্যজনকে খুমেক হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। প্রায় আধঘন্টা চেষ্টার পর বন্দরের অগ্নি নিয়ন্ত্রণকারী জাহাজ এম টি সুন্দরবন ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
রোববার দুপুরে পশুর নদীতে অবস্থানরত তেল বোঝাই নৌযান এম টি সি-লিংক উৎসব নামক ট্যংকারে হঠাৎ নৌযানটির ইঞ্জিনরুমে আগুন ধরে। এ সময় ইঞ্জিন রুমে থাকা দুই নাবিক (গ্রিজার) মোহাম্মাদ আলী মিয়া ও ইয়াসির অগ্নিদদ্ধ হয়। বন্দরের আগুন নিয়ন্ত্রণকারী জাহাজ এম টি সুন্দরবন আধ ঘন্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আহত দু’জনকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হলে মোহাম্মদ আলি মিয়া পথে মারা যান।
তেলবাহী জাহাটির কোয়াটার মাষ্টার সিরাজুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রাম থেকে প্রায় সাড়ে ১৯ লক্ষ লিটার ডিজেল নিয়ে দুই দিন পূর্বে রওয়ানা হই খুলনা ডিপোতে আসার জন্য। রোববার দুপুরে আমরা সবাই জাহাজটির উপরে বসা ছিলাম। এসময় জাহাজটির দু’জন মেশিনম্যান (গ্রিজার) নাবিক মেশিনরুমে কাজ করছিল। হঠাৎ মেশিনরুমে ভিতর থেকে ধোঁয়া দেখতে পেয়ে আমরা দৌড়ে সেখানে যাই, কিন্ত প্রচন্ড তাপ ও ধোঁয়ার কারণে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। কিছুক্ষণ পর পরই মেশিনরুমে থাকা দুই গ্রিজার নাবিক মোহাম্মদ আলী ও ইয়াসির আগুনে ঝলছে যাওয়া অবস্থায় উঠে আসলে আমাদের লোকজন ডাক চিৎকার শুরু করে এবং আশ-পাশের লোকজন ছুটে এসে আমাদের উদ্ধার করে।
তেলের ট্যাংকারের মাষ্টার সৈয়দ আহাম্মদ জানান, জাহাজটির অন্য জায়গায় তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতি না হলেও ইঞ্জিনরুম সম্পূর্ন পুড়ে গেছে। এ জাহাজটিতে দুই মাস্টারসহ ১৩ জন নাবিক ছিল। তবে সবাই জাহাজের উপরে থাকলেও দুই গ্রিজার মেশিনরুমে কাজ করছিল।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার কমান্ডার শেখ ফকর উদ্দিন জানান, চট্টগ্রাম থেকে মেঘনা পেট্রলিয়াম কর্পোরেশন ডিপোর তেল বোঝাই করে এম টি সি-লিংক নামক ট্যাংকারটি খুলনায় যাচ্ছিল। পথিমধ্যে মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেল দিয়ে যাওয়ার সময় দুপুর দুইটার দিকে বন্দর জেটির দক্ষিণ পাশে পৌঁছালে হঠাৎ ইঞ্জিনরুমে আগুন লাগে। পোর্ট কন্টোলের মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত বন্দরের অগ্নি নির্বাপনকারী জাহাজ এমটি সুন্দরবনকে সেখানে পাঠানো হয়। এছাড়াও বাগেরহাট, মোংলা ইপিজেড ও বন্দরের ফায়ার সাভিসের ৩টি ইউনিটও আমাদের সাথে সহায়তা করেছে। তবে জাহাজটি পশুর চ্যানেলের মাঝখানে থাকায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জাহাজটিতে গিয়ে এমটি সুন্দরবনকে সহায়তা করেছে। যার ফলে বন্দরের অগ্নি নির্বাপক এম টি সুন্দরবন জাহাজ প্রায় আধা ঘন্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে। তেলবাহী জাহাজের অন্য জায়গার তেমন ক্ষয়-ক্ষতি না হলেও মেশিনরুমে বেশ ক্ষতি হয়েছে বলে জানান বন্দরের এ উর্ধতন কর্মকর্তা।
আগুনের ঘটনায় কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তাৎক্ষনিক কিছুই জানাতে পারেনি ট্যাংকারে থাকা মাষ্টার বা কোয়াটার মাষ্টার কেউ।
নিহত মোহাম্মদ আলী ওরফে লাল মিয়ার (৫২) বাড়ি ঢাকার ফতুল্লায়। আর আহত নাবিক মোঃ ইয়াসিন (৫০) খুমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তার পিতার নাম সুলতান আহম্মেদ পাটোয়ারি, বাড়ি ফেনীর ছাগলনাইয়া থানায়।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক জুলেখা খাতুন জানান, ইয়াসিনে অবস্থা খুবই খারাপ। আগুনে তার শরীরের ৭০ ভাগ পুড়ে গেছে। তাকে সার্জারি বিভাগে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
খুলনা গেজেট/ এস আই