মোংলা সমুদ্র বন্দরের কাজের সুবিধার জন্য ৭ শ’ ৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ক্রয় করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরণের ৬টি জলযান। বন্দরকে আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে “আপগ্রেডেশন অব মোংলা পোর্ট” শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এই জলযানগুলো ক্রয় করা হবে। জলযান ক্রয়ের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে দ্বিতীয় বারের মত পরামর্শক নিয়োগের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান করার প্রক্রিয়া চলছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০২১ সালের শেষের দিকে পর্যায়ক্রমে জাহাজগুলো মোংলা বন্দরে সংযুক্ত হতে পারে বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
ক্রয়কৃত জলযান গুলোর মধ্যে থাকবে, একটি পাইলট মাদার ভ্যাসেল, ২টি টাকবোর্ড, একটি সার্স এ্যান্ড রিসকিউ ভ্যাসেল (উদ্ধারকারী জাহাজ), একটি সার্ভে এ্যান্ড রিসার্স ভ্যাসেল, একটি বয়ালিং ভ্যাসেল ।
এই জাহাজগুলো ক্রয়ের জন্য ইতোমধ্যে প্রাথমিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। জাহাজ ক্রয়ের পরামর্শক নিয়োগের জন্য একবার আন্তর্জাতিক দরপত্রও আহবান করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে বিভিন্ন কারণে ওই দরপত্রটি বাতিল হয়ে যায় । আবারও দরপত্র দেয়ার জন্য অফিসিয়াল প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এর মধ্যে পাইলট মাদার ভ্যাসেল ক্রয় করতে ব্যয় হবে একশ’ ৯১ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা। এই জাহাজটি বন্দরে সংযুক্ত হলে মাদার ভেসেল থেকে পাইলট, নাবিক ও ক্রুদের তীরে আনা নেয়া আরও সহজ হবে। এ জাহাজের মাধ্যমে প্রয়োজনে বন্দরের নিরাপত্তার জন্য টহল জোরদার করা যাবে।নাবিক, ক্রু, পাইলট ও জাহাজের কর্মচারী-কর্মকর্তাদের তীর বা বন্দর থেকে মাদার ভ্যাসেলে যাওয়া আসা আরও সহজ হবে।
২টি টাকবোর্ড ক্রয়ে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ শ’ ৩৩ কোটি ৩৮ লক্ষ টাকা। টাক বোর্ড দুটি বন্দরে যুক্ত হলে বন্দরে জাহাজ মুরিং (ভেড়াতে এবং ঘুরাতে) করা সহজ হবে। নোঙ্গর করা আরও সহজ হবে। এই বোটের মাধ্যমে মাদার ভেসেলকে প্রপেলার বন্ধ অবস্থায় টেনে আনা এবং দূর্ঘটনা কবলিত শিপকে টেনে নেয়া ও অন্যান্য জাহাজের সাহায্যকারী হিসেবে কাজ করবে।
একটি উদ্ধারকারী জাহাজ অর্থ্যাৎ সার্স এ্যান্ড রিসকিউ ভ্যাসেল ক্রয়ে ব্যয় হবে ১ শ’ ১৩ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকা। আধুনিক এই জাহাজটি বন্দরে দিয়ে সমুদ্রে দূর্ঘটনা কবলিত জাহাজ খুজে বের করা এবং দূর্ঘটনা কবলিত জাহাজের নাবিক, ক্রু ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্ধার করা যাবে। এই জাহাজের কার্যক্রমে ঝড়, জলচ্ছাসসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগে আক্রান্ত জাহাজে প্রাণহানি কমবে বলে দাবি বন্দর কর্তৃপক্ষের।
বন্দর সংশ্লিষ্ট গবেষনার কাজে ব্যবহৃত হবে সার্ভে এ্যান্ড রিসার্স ভ্যাসেল।এই জাহাজটি ক্রয়ে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ শ’ ১৩টি ৪৪ লক্ষ টাকা। এই জাহাজটির মাধ্যমে নদী ও সমুদ্রে বিভিন্ন ধরনের জরিপের কাজে এবং সামুদ্রিক প্রাণী সম্পর্কে গবেষণার কাজ করা যাবে।
বন্দরের চ্যানেলে বয়া স্থাপন ও বিভিন্ন সিগনাল দেয়ার জন্য ১ শ’ ২৬ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ক্রয় করা হবে একটি অত্যাধুনিক বয়ালিং ভ্যাসেল।এটি দিয়ে স্বল্প সময়ে চ্যানেলের উপযুক্ত স্থানে সহজে বয়ালিং করা যাবে। এই জাহাজগুলো বন্দরে সংযুক্ত হলে বন্দরের সক্ষমতা কয়েকগুন বৃদ্ধি পাবে বলে দাবি করেছেন বন্দর কর্তৃপক্ষ।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এর জন্য আমরা ৫ ধরণের ৬টি আধুনিক জলযান ক্রয়ের সিন্ধান্ত নিয়েছে।সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে যত দ্রুত সম্ভব এই জলযানগুলো মোংলা বন্দরে সংযুক্ত হবে।এছাড়াও মোংলা বন্দরের আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য নানা পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
খুলনা গেজেট/এ হোসেন