মোংলা-খুলনা ও বাগেরহাট রুটে সড়ক পরিবহন ব্যবস্থায় অরাজকতা বিরাজ করছে। এ রুটে চলাচলকারী যাত্রী সাধারণ বাস মালিক ও শ্রমিকদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। এছাড়া মোংলা থেকে খুলনা পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৫০ কিলোমিটারের পথ পাড়ি দিতে সময় লাগছে প্রায় তিন ঘন্টা। এ অবস্থায় বন্দর থেকে বিভাগীয় শহর খুলনা অথবা জেলা শহর বাগেরহাটসহ সড়ক পথে প্রতিনিয়ত যাত্রীবাহী বাসে যাতায়াতকারীদের অবস্থা হয়ে পড়েছে অত্যন্ত শোচনীয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের দ্বিতীয় সামুদ্রিক বন্দর মোংলার সাথে বিভাগীয় শহর খুলনার দূরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটার। সাধারণত এ পথ পাড়ি দিতে সময় লাগে প্রায় এক থেকে সোয়া ঘন্টা। কিন্তু এ রুটে চলাচলকারী যাত্রীবাহী গাড়িগুলো প্রায় আড়াই থেকে তিন ঘন্টায় গন্তব্যে পৌঁছায়। এ নিয়ে যাত্রী সাধারণের রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। ফিটনেস বিহীন গাড়ি, অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই, যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠােনো-নামানো, অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন, যাত্রীদের সাথে পরিবহন ষ্টাফদের দূর্ব্যবহার, অতিরিক্ত মালামাল বোঝাই, ছাদে যাত্রী ওঠানো, সিটের স্বল্পতাসহ নানা ধরনের অনিয়মের কারণে সাধারণ যাত্রী পরিবহন শ্রমিকদের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে। এ নিয়ে কারো যেন বলার কিছু নেই এমনই অভিযোগ যাত্রীদের। কেউ প্রতিবাদ করলেই পরিবহন শ্রমিক ও ড্রাইভারদের হাতে নাজেহাল হতে হচ্ছে। এ যেন এক জিম্মি দশা।
মোংলা-সোনাডাঙ্গা ও মোংলা-রুপসা রুটে প্রতিনিয়ত সরাসরি এক্সপ্রেস সার্ভিস গাড়ি চলছে প্রতিনিয়ত। এ ছাড়া মোংলা-বাগেরহাট ও রুপসা রুটেও লোকাল গাড়ি চলে আসছে। অপরদিকে মোংলা থেকে চট্রগ্রাম ও উত্তর বঙ্গ গাড়ি মিলিয়ে এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন অন্তত প্রায় ৬০/৭০ টি গাড়ি চলাচল করছে। এসব রুটের প্রতিটি গাড়িরই একই অবস্থা। ডাইরেক্ট বা এক্সপ্রেস সার্ভিসের গাড়িতে প্রতিটি স্পটেই যাত্রী ওঠানো ও নামানো হয়। এছাড়া মাঝে মধ্যে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়েরও অভিযোগ রয়েছে। মোংলা থেকে খুলনা বা বাগেরহাটে যাবার পথিমধ্যে দিগরাজ ও কাটাখালীতে অন্তত ২০ মিনিট থেকে আধা ঘন্টা গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ও মালামাল ওঠানো হয়। একই ভাবে খুলনা বা বাগেরহাট থেকে মোংলায় আসার পথিমধ্যে দিগরাজ ও কাটাখালীতে দীর্ঘ সময় ধরে গাড়ি দাড় করিয়ে রাখা হয়। এছাড়া খুলনা থেকে মোংলায় আসার সময় জিরো পয়েন্ট ও সাচিডাঙ্গাতেও দীর্ঘ সময় ধরে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী তোলা হয়।
যাত্রীবাহি বাস ও পরিবহনের এ দূরাবস্থার বিষয় প্রতিকার চেয়ে গত ১১ মার্চ মোংলার বাঁধন যুব ও ক্রীড়া সংঘ উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন। ওই সংগঠনের পক্ষ থেকে খুলনা-মোংলা মহাসড়কে পরিবহন ব্যবস্থার ভোগান্তি দূরিকরণে ৭টি দাবি জানানো হয়।
সংগঠনটির সভাপতি এম আর রানা জানান, প্রতিনিয়ত চরম ভোগান্তি আর দূরাবস্থার মধ্যে যাত্রীসাধরণকে যাতায়াত করতে হয়। এ বিষয় তাদের উত্থাপিত দাবি বাস্তবায়ন করার আশ্বাস দেয়া হলেও আজও বাস্তবায়ন হয়নি। যাত্রীরা মাঝে মধ্যে মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দের কাছে এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে অভিযোগ করলে তারা ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলেও বাস্তবে তা কার্যকরী হয়না বলে সাধারণ যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন। এছাড়া খানাখন্দ ও রাস্তা ব্যস্ত থাকায় গাড়ি যাতায়াতে সময় বেশী লাগছে।
অপরদিকে এ মহাসড়কে বড় বড় পণ্যবাহি ট্রাক চলাচল করাতেও গাড়ির গতি কমিয়ে চালাতে হয় ড্রাইভারদের। অবশ্য মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তারা কোন অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেন।
খুলনা জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির কর্মচারী (ষ্টাটার) আঃ জলিল বলেন, বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর গাড়ি এ রুটে বেপরোয়াভাবে চলাচল করে। অতিরিক্ত পণ্য ট্রাকে বোঝাই করে ধারণ ক্ষমতার বাইরে এ রুটে চলাচলকারী যানবাহনগুলো রাস্তার বড় বড় ক্ষতি সাধন করছে। এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানের ট্রাক ও লরি অতিরিক্ত পণ্য বোঝাই করলেও আইন শৃংখলা বাহিনী নিরব ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ করছে বন্দর সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যাপারে বাগেরহাট আন্তঃ জেলা বাস মিনিবাস কোচ ও মাইক্রোবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তালুকদার আঃ বাকি বলেন, মাঝে মধ্যে শ্রমিকরা যাত্রীদের সাথে দূরব্যবহার করে থাকেন এটা সত্যি। তবে অভিযোগ আসলে আমরা ব্যবস্থা নেই। ইদানিং বাসের মধ্যে গাগাগাদি করে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে বলেও তিনি স্বীকার করেন। এছাড়া তিনি আন্তঃ জেলা মহাসড়কে নছিমন করিমন বন্ধসহ সড়কে অন্যান্য ফিটনেট বিহীন পরিবহন, লরি ও ট্রাক বেপরোয়া চালানোর বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
খুলনা গেজেট/এনএম