দু’দিন বিরতির পর শুক্রবার রাতে আবার বল গড়াচ্ছে মাঠে। বিশ্বকাপের উন্মাদনা এখন তুঙ্গে। ২৪টি দল ইতিমধ্যেই বাড়ি চলে গেছে। অগণিত ভক্তরাও চলে গেছেন। অনেক দেশের ভক্তরা আবার নতুন করে আসছেন। কোয়ার্টার ফাইনালের লড়াই বলে কথা। জমজমাট আয়োজন। টানটান উত্তেজনা। কাতারসহ আরব দুনিয়া কাঁপছে ফুটবল জ্বরে। আবহাওয়া চমৎকার।
না শীত, না গরম। আয়োজকরা হয়তো এটা ভেবেই এ সময়টা বেছে নিয়েছিলেন। ক’দিন পরে তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামতে পারে- এমনটাই বলা হয়েছে আবহাওয়া দপ্তর থেকে।
যাই হোক, কোয়ার্টার ফাইনালের লড়াইয়ে অংশ নেবে ব্রাজিল-ক্রোয়েশিয়া, আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ডস, পর্তুগাল-মরক্কো এবং ফ্রান্স-ইংল্যান্ড এই আটটি দল। প্রথমে নামবে নেইমারের ব্রাজিল। পরে মেসির আর্জেন্টিনা। ব্রাজিল মুখোমুখি হবে ক্রোয়েশিয়ার। পাঁচবারের বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিল এবার অনেকটা সৌভাগ্যবান। গ্রুপে এ পর্যন্ত শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বীর মুখোমুখি হয়নি। যদিও ক্যামেরুনের কাছে পরাজয়ের স্বাদ পেয়েছে। শক্তিশালী জাপানকে হারিয়ে ক্রোয়েশিয়া কোয়ার্টার ফাইনালে। পেনাল্টি শুট আউটে জাপানিদের স্বপ্ন ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। এবার ক্রোয়েশিয়া আহামরি কোনো দল নয়। এই দলে কিছু অভিজ্ঞ প্লেয়ার রয়েছেন। ’৯৮ বিশ্বকাপে তৃতীয় অবস্থান ও ২০১৮ বিশ্বকাপে ফ্রান্সের বিপক্ষে ফাইনালে হেরে রানার্সআপ হয় ক্রোয়েশিয়া। কিন্তু ব্রাজিলের সঙ্গে লড়াইয়ের মতো শক্তি কতোটা আছে তা ময়দানেই বোঝা যাবে। ক্রোয়েশিয়ার কোচ জ্লাতকো দালিচ বলেছেন, আমাদের হারাবার কিছু নেই। আমরা লড়বো। জেতার জন্যই লড়বো।
আর্জেন্টিনা আর নেদারল্যান্ডসের লড়াইটা হবে খুব কঠিন। কারণ দু’দলের রেকর্ডই প্রায় সমান। কেউ হারেন, কেউ জিতেন। তবে দিনের শেষে দু’দলের জয়-পরাজয়ের রেকর্ড থেকে প্রেডিকশন করা খুব সহজ নয়। এবারের বিশ্বকাপে অনেকেই আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে রাখছেন। ফুটবল পণ্ডিতরা বলছেন, খেলাটা শেষ পর্যন্ত পেনাল্টিতে গড়াতে পারে। অল্প আগে স্থানীয় টেলিভিশনে এমন ধারণাই দিলেন অন্তত দু’জন ফুটবল পণ্ডিত। আবার এমন আশঙ্কাও ব্যক্ত করলেন- যদি সত্যি সত্যি খেলাটি টাইব্রেকারে গড়ায় তখন মেসির জন্য বিপদই হতে পারে। কারণ মেসি ইতিমধ্যেই পেনাল্টি মিস করে রেকর্ড করেছেন। নেদারল্যান্ডস এই বিশ্বকাপে অন্যতম শক্তিশালী দল। তারকার তারকা নেই এই দলে, তবে দলটি খুবই সংগঠিত। ঝিমুনি ফুটবল থেকে আক্রমণাত্মক ফুটবলের সূচনা করেছেন লুইস ভ্যান গাল। বদনাম কাটিয়ে নেদারল্যান্ডসকে নতুন কিছু দিতে চান তিনি।
আরব দেশে প্রথম বিশ্বকাপ। তাই বাড়তি উন্মাদনা লক্ষ্য করছি হাটে, ঘাটে, মাঠে, ময়দানে। সব হারিয়ে আরব দেশগুলো এখন মরক্কোর দিকে। মরক্কো নতুন এক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে বিশ্বকাপজয়ী স্পেনকে হারিয়ে। অনেকেরই ধারণা ছিল না মরক্কো এই পর্যন্ত এগুবে। কিন্তু তারা মাঠে সব ধারণা অমূলক বলে প্রমাণ করেছে। এখানকার ফুটবল ভক্তদের মধ্যে কেউ কেউ মরক্কোকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন। ফুটবল মানুষকে কাঁদায়, হাসায়। তারকার পেছনে ছুটছেন অনেকেই। হিসাবও মেলাচ্ছেন। মেসি, নেইমার, এমবাপ্পেকে নিয়ে ফাইনালের ছবিও আঁকছেন। রোনালদো তাহলে কোথায়? তিনি কি সাইডলাইনে বসেই খেলা দেখবেন? পর্তুগিজ এই ক্যাপ্টেন বদলি খেলোয়াড় হিসেবে জায়গা পাবেন? অথচ তার দল কিন্তু এগিয়ে ছিল। এগিয়ে চলেছে। ফুটবলে এমন ঘটনা বিরল। এর জন্য রোনালদো কাকে দায়ী করবেন- ভাগ্য না নিজের কর্মের ফলকে? বিশ্বকাপে বরাবরই এরকম হয়ে থাকে। আখেরে অঙ্ক মেলে, আবার কখনো মেলে না।
খুলনা গেজেট/ এমএম