অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, মূল্যস্ফীতি ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসের ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে গত এপ্রিল মাসে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশে নেমে এসেছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি জুন মাসেই পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের কোঠায় নেমে আসবে। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে এ লড়াইয়ের ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা কম হতে পারে। সোমবার(২ জুন) জাতীয় বাজেট বক্তৃতায় তিনি এসব তথ্য জানান।
মধ্যমেয়াদী নীতি-কৌশল বিষয়ে আলোচনা করার সময় তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, ভেঙে পড়া আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, শ্রমিক অসন্তোষ কমিয়ে শিল্প খাতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা বিরাট চ্যালেঞ্জ ছিল। বিগত সরকারের সময়ে লাগামহীন দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার ফলে চরম সংকটাপন্ন ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের মতো কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রবাসী আয়ের আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি, রপ্তানি আয়ের ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি, কৃষি ও শিল্প খাতের উৎপাদন অব্যাহত থাকা এবং সঠিক মুদ্রা ও রাজস্বনীতির সমন্বিত প্রয়োগের সুফল আমরা পাচ্ছি। ইতোমধ্যে কাঙ্ক্ষিত স্থিতিশীলতা অর্জনে অনেকদূর এগিয়েছে দেশ। তবে অর্থনীতিকে স্বাভাবিক গতিতে ফিরিয়ে আনার পথে এখনও বেশকিছু ঝুঁকি রয়েছে।
উপদেষ্টা বলেন, গত বছরের আগস্ট মাসে অন্তর্বর্তী সরকার যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয়, তখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরে মানুষকে স্বস্তি দেওয়া। এ লক্ষ্যে বিগত মাসগুলোতে আমরা ধারাবাহিকভাবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করেছি। এতে নীতি সুদের হার ১৫০ বেসিস পয়েন্ট বেড়ে এখন ১০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
মুদ্রানীতির আওতায় গৃহীত কার্যক্রমকে সহায়তা করতে সংকোচনমূলক রাজস্বনীতি অনুসরণ করা হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে আনায় সার্বিকভাবে সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাব দৃশ্যমান হয়ে উঠতে শুরু করেছে। আশার কথা হলো, এবারের রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে স্থিতিশীল ছিল।
তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতির নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকা জরুরি। এটি নিশ্চিত করতে হলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল থাকা অত্যাবশ্যক। প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক হওয়ায় এবং রপ্তানি স্থিতিশীল থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এপ্রিল মাসে বৃদ্ধি পেয়ে ২৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। যা টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এ কারণে আমরা গত ১৪ মে বাজারভিত্তিক মুদ্রাবিনিময় হার চালু করেছি।