নাইজারের রাজধানী নিয়ামে অনুষ্ঠিত ৫৭ রাষ্ট্রবিশিষ্ট ওআইসি’র পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক শেষ হয়েছে। এতে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগ এনে দায়ের করা মামলায় আইনি লড়াইয়ের জন্য তহবিল সংগ্রহ, ইসলামোফোবিয়া ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের আহ্বান এবং ফিলিস্তিন ইস্যুতে দ্বিরাষ্ট্র সমাধানে আরব রাষ্ট্রসমূহের নীতির প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।
ওআইসি মহাসচিব ড. ইউসেফ বিন আহমেদ আল-ওতাইমিন কাউন্সিল অব ফরেন মিনিস্টার (সিএফএম)’র এর ৪৭তম বৈঠক শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে বিভক্তি নয়, ঐক্য ও সংহতির ওপর জোর দিয়েছি। আমরা একে অপরকে সম্মানের পথে চলার চেষ্টা করছি। বাকস্বাধীনতার মানে আপনি ধর্ম সম্পর্কে যা ইচ্ছে তাই বলতে পারেন না।’
পরস্পরের মতামতের প্রতি সহনশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদ ইসলামের অংশ নয়, অন্য ধর্ম বা সংস্কৃতি নিয়ে ইসলামের কোনো সমস্যা নেই। ইসলাম নারী ক্ষমতায়নকে সম্মান করে ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের শিক্ষা দেয়।’ তিনি বলেন, ‘যদি কোনো খারাপ মানুষ ইসলামের নামে অনৈতিক কাজ করে, তবে তারা ইসলামকে নয়, কেবল নিজেদেরই প্রতিনিধিত্ব করে। তাদের এই খারাপ কাজের দায় ইসলামের নয়।’
এ সময় ওআইসি’র সদস্য রাষ্ট্রগুলো ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ইসলামোফোবিয়া’র (ইসলাম আতঙ্ক) সাম্প্রতিক উত্থানে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। ওআইসি মহাসচিব বাংলাদেশসহ যেসব দেশ ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে)-তে দায়ের করা রোহিঙ্গা গণহত্য মামলায় আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে গাম্বিয়াকে ইতিমধ্যেই আর্থিক সহায়তায় দিয়েছে তাদের ধন্যবাদ জানান।
ওআইসি ইতিমধ্যেই আইসিজে-তে দায়ের করা মামলায় গাম্বিয়াকে আর্থিক সহায়তার জন্য তহবিল সংগ্রহে একটি বিশেষ অ্যাকাউন্ট (হিসেব) খুলেছে। সংস্থাটি আরও তহবিল প্রদানের জন্য এর অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে এই মামলায় পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিকে সহায়তার জন্য বাংলাদেশ ওআইসি-কে পাঁচ লাখ মার্কিন ডলার প্রদান করেছে বলে সিএমএফ-এ আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে।
ওআইসি-কে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. মোহাম্মদ জাভেদ পাটোয়ারি বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের প্রধান হিসেবে তার ভাষণে বলেন, ‘বাংলাদেশ তার সীমিত সামর্থ সত্বেও গাম্বিয়ার সহায়তায় ওআইসিকে ইতিমধ্যে পাঁচ লাখ মার্কিন ডলার দিয়েছে।
এদিকে ফিলিস্তিন ইস্যুতে ওআইসি মহাসচিব বলেন, সিএফএম জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত প্রস্তাব ও আরব দেশসমূহের পদক্ষেপের নীতির সাথে সঙ্গতি রেখে ফিলিস্তিন সংকটের দ্রুত সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ করছে। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা ফিলিস্তিন সংকটের দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের ওপর জোর দিচ্ছি। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ মহাসচিব বলেন, ওআইসি ফিলিস্তিন সংকটের যেকোনো শান্তিপূর্ণ সমাধানের উদ্যোগকে স্বাগত জানায়।
বিগত ৭২ বছর ধরে এই সংকট চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আলোচনার মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
এ সময় তিনি ওআইসি’র নব নির্বাচিত মহাসচিবকে অভিনন্দন জানান এবং ইসলামিক বিশ্ব ও এর জনগণের স্বার্থ সংরক্ষণে তার সাফল্য কামনা করেন। সিএফএম চলাকালে চাদের রাষ্ট্রদূত হুসেইন ইবরাহিমকে ওআইসি’র নতুন মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। তিনি ২০২১ সালের ১৭ নভেম্বর থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর মেয়াদে এই দায়িত্ব পালন করবেন।
সিএফএম এর সমাপনী অধিবেশনের আগে নতুন মহাসচিব হিসেবে হুসেইন ইবরাহিমের নাম ঘোষণা করা হয়। এরপর তিনি শপথ গ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ নিজ ভূমি থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিচ্ছে। এদের অধিকাংশই ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর কঠোর দমন-পীড়ন শুরুর পর প্রাণ বাঁচাতে প্রতিবেশী দেশটির কক্সবাজার জেলায় আশ্রয় নিয়েছে। গত বছরের নভেম্বর মাসে, গাম্বিয়া আইসিজে-তে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে এই মামলাটি দায়ের করে। ওআইসি, কানাডা ও নেদারল্যান্ডস গাম্বিয়াকে সমর্থন দেয়।
গত বছর ১০-১২ ডিসেম্বর আসিজে-তে মামলাটির প্রথম শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
ডিসেম্বরের শুনানিতে গাম্বিয়া মামলার আর্জিতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ১৯৪৮ সালের গণহত্যা সনদের আলোকে অভিযোগ এনে বলে, ভয়াবহ সামরিক হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ‘মিয়ানমার তাদের নিজ দেশে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন চালিয়েছে।’
গত ২৩ জানুয়ারিতে আইসিজে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নতুন করে গণহত্যার মতো ঘটনা ঠেকাতে প্রয়োজনীয় জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের ঐতিহাসিক রায় দেয়।
খুলনা গেজেট/কেএম