খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  বিচার বিভাগকে ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে : ড. ইউনূস
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৮ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৩৮৯
  পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকেও আমরা ভারত থেকে ফেরত চাইব : প্রধান উপদেষ্টা

মুরাদ হত্যার পরিকল্পনা নওয়াপাড়ার নারিকেল বাগানে, তিন আসামির স্বীকারোক্তি

অভয়নগর প্রতিনিধি

যশোরের অভয়নগরে চাঞ্চল্যকর যুবলীগ নেতা মুরাদ হোসেনকে হত্যার ছক আঁকা হয় নওয়াপাড়া গ্রামের মাঠের ভিতরের একটি নারিকেল বাগানে বসে। এখান থেকে বন্টন করা হয় হত্যার মিশনে অংশগ্রহনকারীদের দায়িত্ব। হত্যার আগে এই নারিকেল বাগানে বসেই একাধিক বৈঠক অনুষ্টিত হয়। যেখানে প্রতিটি বৈঠকে দিকনির্দেশনা দেন হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও অর্থের যোগানদাতা। মুবাদ হত্যাকান্ডে আটক তিন আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে দেয়া জবানবন্দীতে উপরোক্ত তথ্য জানিয়েছেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। এ কিলিং মিশনে অংশ গ্রহনকারীরা প্রত্যেকে অগ্রিম হিসেবে সাড়ে তিন হাজার টাকা করে পেয়েছেন বলে আদালতকে দেয়া জবানবন্দীতে জানিয়েছেন। এবং পরবর্তীতে আরও টাকা পরিশোধের চুক্তি হয় মূল পরিকল্পনাকারী ও অর্থের যোগানদাতার সাথে। তবে পরবর্তীতে কতটাকা পরিশোধের কথা ছিলো তা জানা যায়নি।

শুক্রবার (১৫ মার্চ) আদালতে ১৬৪ ধারায় হত্যার ঘটনায় নিজেদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে গ্রেপ্তারকৃত তিন আসামি জবানবন্ধী প্রদান করেছেন। এদিন যশোরের সিনিয়ির জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট গোলাম কিবরিয়ার গ্রেপ্তারকৃত আল আামিন শেখ ও রনি ব্যাপারি এই জবানবন্ধী প্রদান করেন। এর একদিন আগে আসামি সাগর কাজী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট পলাশ কুমার দালালের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবান বন্ধী প্রদান করেন।

১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্ধীতে তারা জানায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে যুবলীগ নেতা মুরাদ হোসেনকে হত্যার পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী মুরাদের গতিবিধি লক্ষ্য করার জন্য ইনফরমার নিয়োগ দেয়া হয়। ঘটনার দুইদিন আগে নওয়াপাড়া গ্রামের মাঠের ভিতর একটি নারিকলে বাগানে হত্যার বিষয় নিয়ে একটি মিটিং হয়। ওই মিটিং এ হত্যাকান্ডের সময় কে কি দায়িত্ব পালন করবে তা বুঝিয়ে দেয়া হয়। দায়িত্ব অনুযায়ী ঘটনার দিন ১১ ফেব্রুয়ারী রাতে মুরাদ হোসেন বাড়ী ফিরছে এই খবর পেয়ে ওই দলের নেতা ও মূল হত্যার পরিকল্পনাকারী ও অর্থদাতা একটি ভ্যান চালককে ভ্যান নিয়ে মাঠের ভিতর একটি চায়ের দোকানের সামনে আসতে বলেন। ভ্যান চালক ভ্যান নিয়ে আসলে ওই ভ্যানে মানকি টুপি পরে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র যেমন- চাপাতী, চাইনিস কুড়াল নিয়ে পাঁচ জন মুরাদের বাড়ীর সামনে থেকে ঘটনা স্থল স্বপ্নভিলার সামনে উপস্থিত হয়। ইতোমধ্যে যুবলীগ নেতা মুরাদ সেখানে এসে উপস্থিত হয়। ভ্যান থেকে নেমে মুরাদকে এলোপাতাড়ি কুপাতে থাকে। এক সময় মুরাদের মৃত্যু নিশ্চিত করে হত্যা মিশনে অংশ নেয়া হত্যাকারীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। ঘটনাস্থল থেকে ফিরে হত্যাকারীরা পূর্বের সেই নারিকেল বাগানে অবস্থান নেয় এবং অর্থদাতা ও হত্যার পরিকল্পনাকারী বাড়ীতে গিয়ে প্রতিজন সাড়ে তিন হাজার টাকা গ্রহণ করে এবং বাকি আরও টাকা পরে দেয়া হবে বলে আশস্ব হয়। হত্যায় ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র তার কাছে জমা দিয়ে তারা আত্ম গোপনে চলে যায়।

জবানবন্দিতে তারা জানান, অর্থদাতা পরিকল্পনাকারী এবং ইনফরমারসহ হত্যায় সরাসরি মোট ১০-১১ জন অংশগ্রহণ করে। এর আগে যুবলীগ নেতা মুরাদ হত্যার পর পুলিশ হত্যাকারীদের আটক করতে ও ঘটনার সুষ্টু তদন্তে মাঠে নামে। দীর্ঘ একমাস তদন্ত শেষে ভ্যান চালকের তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশের একটি টিমের অভিযানে বুধবার (১৩ মার্চ) নওয়াপাড়া রেল স্টেশন এলাকা থেকে নওয়াপাড়া রেল স্টেশন এলাকা থেকে সাগর কাজী (৩০) নামের একজনকে আটক করা হয়। সাগর কাজী উপজেলার নওয়াপাড়া মডেল কলেজ রোড়ের মধ্যপাড়া এলাকার মৃত মহসিন কাজীর ছেলে।

আটককৃত সাগরের দেয়া তথ্য মতে, ঘটনার সাথে জড়িত উপজেলার ধোপাদী গ্রামের বাবু শেখের ছেলে আল আমিন শেখ (২৫) ও উপজেলার রানাভাটা সবুজবাগ এলাকার মৃত নূর মোহাম্মদের ছেলে রনি ব্যাপারী (৩২) কে আটক করা হয়।

এ প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) বিকালে অভয়নগর থানায় প্রেস ব্রিফিংএ যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল-খ) জাহিদুল ইসলাম সোহাগ জানান, স্থানীয় সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে ঘটনায় জড়িত আসামীদের সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উম্মোচন করতে পুলিশকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে।এতে সময় লেগেছে এক মাস। ঘটনার সময় স্থানীয় সিসিটিভি ফুটেজে ঘটনাস্থল থেকে একটি ভ্যানকে চলে যেতে দেখা যায়। যদিও ভ্যান চালকের মুখটা ছিলো অনেকটাই অস্পষ্ট। এ সূত্র ধরেই পুলিশ ওই ভ্যান চালককে খুঁজতে থাকে। আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় দীর্ঘ তদন্ত শেষে পুলিশ ওই ভ্যান চালককে খুঁজে পায়। ভ্যান চালককে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে মুরাদ হত্যার সহস্যের জট খুলতে শুরু করে।

ভ্যান চালকের দেয়া তথ্যের বরাত দিয়ে পুরিশ সুপার আরও জানান, মুরাদ হত্যাকা-টি পূর্বপরিকল্পিত। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও ক্ষমতার পালাবদলে একটি পক্ষ মুরাদকে হত্যার পরিকল্পনা করে ও ইনফর্মার নিয়োগ করে। ইনফর্মারের তথ্য পেয়ে হত্যা মিশনে অংশ গ্রহনকারীরা এলাকার এক নিরীহ ভ্যান চালককে স্থানীয় একটি দোকানের সামনে আসতে বলে। দাওযাত খেতে যাওযার কথা বলে ভান চালকে ওই দোকানের সামনে নিয়ে অপেক্ষায় থাকে। কিছুক্ষণ পরে মুখে মাস্ক পরিহিত ধারালো অস্ত্রে সজ্জিত হত্যা মিশনের ৫ সদস্য ওই ভ্যানে চড়ে। এসময় চালক যেতে রাজি না হলে তাকেও হত্যার হুমকি দেয়। পরে বাধ্য হয়ে ভ্যান চালক তাদের নিয়ে ঘটনা স্থানে যায়। তারা ভ্যান থেকে নেমেই বাড়ির সামনে সড়কের উপর মুরাদকে কোপাতে শুরু করে। ভয়ে ভ্যান চালক দ্রুত সেখান থেকে সরে পড়ে।

উল্লেখ্য, গত রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) আনুমানিক রাত ১০ টার দিকে নিহত মুরাদ নওয়াপাড়া বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিল। বাড়ির কাছাকাছি স্বপ্ন ভিলার সামনে পৌঁছালে পূর্ব থেকে ওৎ পেতে থাকা একদল সন্ত্রাসী তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় গুরতর আহত মুরাদকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। পরে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। খুলনায় পৌঁছালে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় নিহতের বোন বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখপূর্বক আরও ৫-৬ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

খুলনা গেজেট/ এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!