খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  অ্যান্টিগা টেস্ট: শেষ দিনে বাংলাদেশের দরকার ২২৫ রান, হাতে ৩ উইকেট

মুমিনুলের সেঞ্চুরির আক্ষেপ, ২২৭ রানে অল আউট বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ব্যাটারদের আসা-যাওয়ার মিছিলে বাংলাদেশকে একাই টানছিলেন মুমিনুল। সোহান-তাসকিনরা সঙ্গ দিতে না পারলেও সাবলীল ব্যাটিং করছিলেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। তবে নিজের ফেরার ম্যাচে সেঞ্চুরি করতে না পারার আক্ষেপে পুড়তে হয়েছে তাকে। অশ্বিনের অফ স্টাম্পের বাইরের লেংথ ডেলিভারি খেলার আগ্রহই দেখাননি মুমিনুল। তবে বল খানিকটা টার্ন করে মুমিনুলের গ্লাভসে লাগে।

পান্ত ক্যাচের আবেদন করতেই আউট দেন আম্পায়ার আর প্যাভিলিয়নের পথে হাঁটতে থাকেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। পুরোটা দিন দারুণ ব্যাটিং করা মুমিনুল শেষ পর্যন্ত আক্ষেপ নিয়ে ফিরতে হয়েছে ৮৪ রানের ইনিংস খেলে। ছন্দ ফিরে পাওয়ার ম্যাচে ১২টি চার এবং একটি ছক্কা মেরেছেন তিনি। মুমিনুল ফেরার পর উড়িয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ আউট হন খালেদ আহমেদ। তাতে মা্রত ২২৭ রানে অল আউট হয় বাংলাদেশ। ভারতের হয়ে চারটি করে উইকেট নিয়েছেন অশ্বিন এবং উমেশ।

মিরাজ আউট হওয়ার পর থিতু হতে পারেননি নুরুল হাসান সোহান। উমেশের লেংথে পড়ে ভেতরে ঢোকা বল খেলতে গিয়ে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়ে ৬ রানে আউট হয়েছেন তিনি। টিকতে পারেননি তাসকিন আহমেদও। উমেশের বলেই ড্রাইভ করতে গিয়ে সিরাজের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন বাঁহাতি এই ব্যাটার।

উইকেট থেকে বোলাররা বাড়তি সুবিধা না পাওয়ায় অনায়াসেই ব্যাটিং করতে পারছিলেন না বাংলাদেশের ব্যাটাররা। উইকেটে এসে ভালো শুরুর আভাস দিয়েছেন সবাই। তবে একমাত্র মুমিনুল ছাড়া কেউই ইনিংস বড় করতে পারেননি। ব্যাটিং অর্ডারে পদোন্নতি পেয়ে থিতুও হয়েছিলেন মিরাজ। কিন্তু ইনিংস বড় করতে পারলেন না এই অলরাউন্ডার। উমেশের অফ স্টাম্পের খানিকটা বাইরের বল খেলতে গিয়ে পান্তের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৫১ বলে ১৫ রান করা মিরাজ।

প্রথম সেশনে রাত তুলতে বেগ পেতে হলেও দ্বিতীয় সেশনে দ্রুত রান তুলেছে বাংলাদেশের ব্যাটাররা। দিনের সেশনে ২৯ ওভার ব্যাটিং করে ১০২ রান তুলেছে স্বাগতিকরা। তবে রান পাওয়ার সেশনে সাকিব, লিটন এবং মুশফিকের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটারদের হারিয়েছে বাংলাদেশ।

ছয়ে নেমে বেশ ভালো শুরুর আভাসই দিয়েছিলেন লিটন দাস। খানিকটা দ্রুত রান তোলায় মনোযোগী ছিলেন ডানহাতি এই ব্যাটার। সিরাজের ওভারে পয়েন্ট দিয়ে চার মারার পরের বলে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগ দিয়ে পুল করে ছক্কা মারেন লিটন। পরের ওভারে চার মেরেছেন অক্ষর প্যাটেলের ওভারেও। লিটনকে খানিকটা বোকা বানিয়েই আউট করেছেন অশ্বিন। ডানহাতি এই স্পিনারের ঝুলিয়ে দেয়া ফুল লেংথ ডেলিভারিতে ফ্লিক করতে চেয়েছিলেন লিটন। তবে ফিল্ডার রাহুলের সোজা যাওয়ায় সহজ ক্যাচ লুফে নেন। দারুণ শুরু করা লিটন আউট হয়েছেন ২৫ রানে।

মুশফিক ফিরলেও হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন মুমিনুল। উনাদকাটের ওভারে দুই চার মেরে ৭৮ বলে ক্যারিয়ারের ১৬তম টেস্ট হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। লম্বা সময় অফ ফর্মে থাকা মুমিনুল ১১ ইনিংস পর হাফ সেঞ্চুরি পেলেন। সবশেষ চলতি বছরের জানুয়ারিতে নিউজিল্যান্ড সফরে পঞ্চাশ পেরোনো ইনিংস খেলেছিলেন বাংলাদেশের সাবেক টেস্ট অধিনায়ক।

ভালো খেলতে থাকা মুশফিকুর রহিমকে বিদায় করেছেন উনাদকাত। এই পেসারের করা বল ব্যাটের কানায় লেগে ক্যাচ চলে যায় উইকেটরক্ষক ঋষভ পান্তের মুঠোয়। ফেরার আগে ৪৬ বলে ২৬ রান করেন মুশফিক। দুর্দান্তভাবেই শুরু করেছিলেন তিনি। রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে একই ওভারে টানা তিনটি বাউন্ডারিও হাঁকান তিনি। মুমিনুলের সঙ্গে তার জুটিটি ছিল ৪৮ রানের।

মুমিনুলের সঙ্গে দারুণ ব্যাটিং ঘুরে দাঁড়িয়ে স্বস্তি নিয়ে লাঞ্চে গিয়েছিলেন সাকিব। তবে লাঞ্চ থেকে ফিরে প্রথম বলেই সাজঘরে ফিরতে হয়েছে তাকে। উমেশ যাদবের লেংথ ডেলিভারিতে মিড অফের উপর দিয়ে উড়িয়ে মারতে চেয়েছিলেন সাকিব। তবে ঠিকঠাক টাইমিং করতে না পারায় চেতেশ্বর পূজারার হাতে ক্যাচ দিয়েছেন বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক। ফলে দলকে বিপদে ফেলে সাকিবকে ফিরতে হয়েছে ১৬ রানে।

দ্রুতই ২ উইকেট হারানোর পর প্রতিরোধ গড়ে তোলেন সাকিব আল হাসান এবং মুমিনুল হক। দেখেশুনে ব্যাটিং করার সঙ্গে বাউন্ডারিও মেরেছেন তারা দুজন। পেসারদের বিপক্ষে খানিকটা বেগ পেতে হলেও অশ্বিনকে বেশ ভালোভাবেই খেলেছেন মুমিনুল ও সাকিব। লম্বা সময় ধরেই ব্যাট হাতে সাফল্য পাচ্ছেন না মুমিনুল। তবে দুই ম্যাচ বিরতি দিয়ে একাদশে সুযোগ পাওয়া বাঁহাতি এই ব্যাটার এদিন বাংলাদেশকে আশা দেখাচ্ছেন।

সবশেষ ৯ ইনিংসে দুই অঙ্ক ছুঁতে না পারা এই ব্যাটার এদিন ছন্দে ফেরার আভাস দিয়েছেন। এদিকে দারুণভাবে সঙ্গ দিচ্ছেন সাকিবও। তবে লাঞ্চের যাওয়ার আগের ওভারে ফিরতে পারতেন বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক। অশ্বিনের লেংথ ডেলিভারিতে উইকেট থেকে বেরিয়ে এসে খেলতে চেয়েছিলেন সাকিব। তবে ব্যাটে-বলে না হয়নি। বল লেগ স্টাম্পের বাইরে দিয়ে গেলে তা গ্লাভসবন্দি করতে পারেননি ঋষভ পান্ত। স্টাম্পিং মিস করায় বেঁচে যান সাকিব।

জাকির ফেরার পরের ওভারেই আউট হয়েছেন শান্ত। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট না চালিয়ে পা এগিয়ে দেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। তাতে বল এসে সরাসরি আঘাত হানে শান্তর প্যাডে। ভারতের জোরালো আবেদনে আউট দিয়ে বসেন আম্পায়ার। অফ স্টাম্পের বেশ খানিকটা বাইরে হওয়ায় তৎক্ষণাৎ রিভিউ নেন শান্ত। রিপ্লেতে দেখা যায় অল্পের জন্য বল অফ স্টাম্পে আঘাত হানে। তাতে আম্পায়ার্স কলে আউট হয়ে সাজঘরে ফিরে যেতে হয় ২৪ রান করা শান্ত। তাতে নিজেকে খানিকটা দুর্ভাগ্যবান মনে করতে পারেন তিনি।

শুরু থেকেই খানিকটা অস্বস্তিতে ছিলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার জাকির হাসান এবং নাজমুল হোসেন শান্ত। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারাতে পারতো বাংলাদেশ। তবে মোহাম্মদ সিরাজ ক্যাচ লুফে নিতে না পারায় জীবন পান জাকির। উমেশ যাদবের প্রথম বলেই ফ্লিক করেছিলেন বাঁহাতি এই ওপেনার। তাতে লেগ সাইডে আউট হতে পারতেন শূন্য রানেই। এরপর অবশ্য ভারতের পেসারদের দেখেশুনে খেলার চেষ্টা করেন তারা দুজন। তবে সুবিধা করতে পারছিলেন না জাকির-শান্তর কেউই।

তাদের দুজনের টিকে যাওয়া জুটি ভাঙেন উনাদকাট। ইনিংসের ১৫তম ওভারে পঞ্চম বলে জাকিরকে ফেরান বাঁহাতি এই পেসার। উনাদকাটের লাফিয়ে উঠা লেংথ ডেলিভারিতে খেলারই চেষ্টা করেননি জাকির। তাতে গ্লাভসে লেগে বল চলে যায় চার নম্বর স্লিপে দাঁড়িয়ে থাকা লোকেশ রাহুলের হাতে। চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করা তরুণ এই ব্যাটার এদিন আউট হয়েছেন ১৫ রানে।

একাদশে দুটি পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ। ইয়াসির আলি রাব্বি এবং এবাদত হোসেনের জায়গায় সুযোগ পেয়েছেন মুমিনুল হক এবং তাসকিন আহমেদ। সবশেষ জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যাওয়ার আগে টেস্টের নেতৃত্ব ছেড়েছিলেন মুমিনুল। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে প্রথম টেস্টে জায়গায় পেলেও লম্বা সময় অফ ফর্মে থাকার কারণে সিরিজের শেষ ম্যাচে বাদ পড়েন বাঁহাতি এই ব্যাটার।

এরপর ঘরের মাঠে ভারতের বিপক্ষে প্রথম টেস্টেও জায়গা মেলেনি বাংলাদেশের অধিনায়কের। তবে ঢাকা টেস্টে রাব্বির জায়গায় ফেরানো হয়েছে রানখরায় ভুগতে থাকা মুমিনুলকে। এদিকে চোট থেকে পুরোদমে সুস্থ হয়ে উঠতে না পারায় চট্টগ্রাম টেস্টে ছিলেন না তাসকিন। তবে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে ফিরেছেন ডানহাতি এই পেসার।

২০১০ সালে সাউথ আফ্রিকা সফরে টেস্ট দলে অভিষেক হলেও জাতীয় দলে থিতু হতে পারেননি জয়দেব উনাদকাট। এরপর ভারত ১১৮ টেস্ট খেললেও একাদশে ফেরা হয়নি বাঁহাতি এই পেসারের। ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত পারফর্ম করার পুরস্কার হিসেবে বাংলাদেশ সফরে ডাক পেয়েছেন উনাদকাট।

ঢাকা টেস্টের একাদশে রয়েছেন কুলদীপ যাদবের পরিবর্তে। এদিকে এক টানা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১৮ টেস্ট মিস করে একাদশে ফেরার রেকর্ড গড়েছেন উনাদকাট। সবচেয়ে বেশি ১৪২ টেস্ট মিস করে একাদশে ফেরার কীর্তি রয়েছে ইংল্যান্ডের ক্রিকেটার গ্যারেথ ব্যাটির।

চট্টগ্রাম টেস্টে ভারতের কাছে ১৮৮ রানে হেরে সিরিজে ১-০ তে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ফিরতে ঢাকা টেস্টে জয়ের বিকল্প নেই সাকিব আল হাসানের দলের। এমন ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক।

বাংলাদেশ: জাকির হাসান, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক, লিটন দাস, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, নুরুল হাসান সোহান, মেহেদি হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, খালেদ আহমেদ এবং তাসকিন আহমেদ।

ভারত: লোকেশ রাহুল, শুভমান গিল, চেতেশ্বর পূজারা, বিরাট কোহলি, শ্রেয়াস আইয়ার, ঋষভ পান্ত, অক্ষর প্যাটেল, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, জয়দেব উনাদকাট, উমেশ যাদব এবং মোহাম্মদ সিরাজ।




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!