দৈনিক পাকিস্তানের একাত্তরের ১৫ নভেম্বর এপিপি পরিবেশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পুর্ব পাকিস্তনের গভর্ণরের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী শিল্প শ্রমিকদের প্রতি সব ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশের শিল্পোন্নয়নের গতি বাড়ানের আহ্বান জানিয়েছেন। জেনারেল ফরমান আলী খালিশপুর হাউজিং স্টেট ময়দানে পূর্ব পাকিস্তান লেবার ফেডারেশন আয়োজিত এক বিরাট শ্রমিক সমাবেশে ভাষণ দিচ্ছিলেন।
তিনি শ্রমিকদের প্রতি উৎপাদন বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ উৎপাদন বাড়লে শুধু দেশ নয়, শ্রমিক মালিক সবাই উপকৃত হবে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার সব সময় শ্রমিকদের কল্যাণ চেয়েছেন। ১৯৬৯ সালে সরকার শ্রমিকদের বেতন পঁচাশি টাকা থেকে ১২৫ টাকা বৃদ্ধি করেছে। জেনারেল ফরমান আলী বলেন, মিলগুলোতে উৎপাদন না বাড়লে এবং শান্তি না থাকলে মালিক পক্ষ কর্মসংস্থানও বাড়াতে পারবেন না।
শিল্পে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শ্রমিকদের রাজনৈতিক ট্রেড ইউনিয়ন তৎপরতায় লিপ্ত হওয়া উচিত নয়। কারণ তাতে তাদের ফল ভাল হবে না। তিনি বলেন, সুষ্ঠু ট্রেড ইউনিয়ন দেশে আদর্শ শ্রমিক বাহিনী গড়ে তুলতে সাহায্য করে যা দেশকে আর্থিক দিক দিয়ে একটি উন্নত দেশে পরিণত করার সহায়ক হবে। ভারতের যুদ্ধের হুমকি প্রসংগে তিনি বিপুল হর্ষধ্বনির মধ্যে বলেন, আমাদের সেনাবাহিনী আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য প্রস্তুত। বাহিরের কোনও শক্তি পাকিস্তানের কোন সংহতি ও অখন্ডতা বিনষ্ট করতে সক্ষম হবে না।
জেনারেল বলেন, খুলনা, চট্টগ্রাম ও অন্যান্য স্থানে যে উন্নতি ঘটেছে, তা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ফলে সম্ভব হয়েছে। অথচ স্বাধীনতার আগে এসব এলাকা হিন্দুদের শোষণের চারণভূমি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। ভারতের তথাকথিত ‘বাংলাদেশ’ প্রচারণা সম্পর্কে জেনারেল ফরমান আলী ভারতীয় কর্তৃপক্ষের প্রতি পূর্ব পাকিস্তানের ক্ষতি না করে পশ্চিমবঙ্গকে স্বাধীনতা প্রদানের আহ্বান জানান।
খুলনা জিলা স্কুলে ‘রাজাকার সমাবেশ’
দৈনিক পাকিস্তান, ১৩ অক্টোবর ১৯৭১ এর প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজাকারদের উৎসাহ বাড়ানো, পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষার জন্য ১৯৭১ সালের ১১ অক্টোবর খুলনা জিলা স্কুল মিলনায়তনে রাজাকার সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও রাজাকারের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আবুল কালাম ইউসুফ সমাবেশে বক্তৃতা করেন।
তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন পাক সেনা সমর্থিত পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক সরকারের অর্থমন্ত্রী। সমাবেশে বক্তৃতা দানকালে জামায়াত নেতা মাওলানা ইউসুফ ‘দুস্কৃতকারী ও ভারতীয় সমস্ত অনুপ্রবেশকারীদের’ কার্যকলাপ দমনের জন্য রাজাকারদের ভূমিকায় ভূয়সী প্রশংসা করেন। দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর হামলার যে কোন অপচেষ্টা নস্যাৎ করে দেয়ার সেনাবাহিনী ও রাজাকারদের পেছনে আমাদের সাহসী জনগণ ঐক্যবদ্ধ থাকবেন।
খুলনা গেজেট / এমএম