সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিংয়ের বেহাল দশা সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচেও দেখা গেল। বাংলাদেশি স্পিনারদের দাপটে মিরপুরে অল্প রানেই পর পর দু’টি ম্যাচেই গুটিয়ে গেছে সফরকারিদের ইনিংস। প্রথম ম্যাচে সাকিব আর দ্বিতীয় ম্যাচে মেহেদী হাসান মিরাজের আক্রমণে ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানরা ছিলো অসহায়। আর তাই টাইগার ব্যাটসম্যানরা কোন প্রকার চাপ ছাড়াই সিরিজ জয়ের নিশানায় পৌছে যায়। সফরকারি ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৭ উইকেটে হারিয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই ওয়ানডে সিরিজ নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। একই সাথে টাইগাররা টানা ৭ ম্যাচ জয়ের নতুন রেকর্ড গড়লো।
শুক্রবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় সফরকারী উইন্ডিজ। ব্যাটিংয়ে নেমে ইনিংসের শুরু থেকেই সময়ের ব্যবধানে উইকেট হারাতে থাকে তারা। দলীয় ১০ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান। নিজের তৃতীয় ওভারের শেষ বলে ক্যারিবীয় ওপেনার সুনিল অ্যামব্রিসের উইকেট শিকার করেন ‘দ্যা ফিজ’। তার বলে মেহেদী হাসান মিরাজের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফিরেন উইন্ডিজ ওপেনার। তার আগে ১৫ বলে মাত্র ৬ রান করেন অ্যামব্রিস। এর আগে প্রথম ওয়ানডেতেও মোস্তাফিজের শিকার হন অ্যামব্রিস। সেই ম্যাচে ৭ রান করার সুযোগ পান ক্যারিবীয় এ ওপেনার।
এই ম্যাচে অভিষেক হওয়া ওপেনার কেজর্ন ওটলিকে ২৬ রানে তামিম ইকবালের ক্যাচে পরিণত করেন মেহেদী হাসান মিরাজ। দলীয় ৩৬ রানে ৪৪ বলে ২৬ রানে ফেরেন ক্যারিবীয় এ তরুণ ওপেনার। তার বিদায়ের পর মাত্র ৩ বলের ব্যবধানে মিরাজের অফ স্পিনে বিভ্রান্ত ডি সিলভা। ১ রানের ব্যবধানে ২ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যান সফরকারীরা।
ইনিংসের ১৫তম ওভারে বোলিংয়ে এসেই চতুর্থ বলে সাফল্য পান সাকিব আল হাসান। তার বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন আন্দ্রে ম্যাককার্থি। তার বিদায়ে ৩৯ রানে ৪ উইকেট হারায় উইন্ডিজ।
দলের এমন ব্যাটিং বিপর্যয়ে উইকেটে নেমে রানের খাতা খোলার আগেই রানআউট কাইল মায়ার্স। চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ের দিনে হাল ধরতে পারেননি অধিনায়ক জেসন মোহাম্মদও। সাকিবের দ্বিতীয় শিকার হওয়ার আগে করেন মাত্র ১১ রান।
দলের এমন করুণ পরিণতি দেখে সাতে ব্যাটিংয়ে নামা এনকেরুমা বোনার স্কোর মোটাতাজা করতে গিয়ে পেসার হাসান মাহমুদের শিকার হন। দলীয় ৭১ রানে সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফেরার আগে করেন ২৫ বলে ২০ রান।
আট নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে নেমে ইনিংসের শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যান রোভম্যান পাওয়েল। শেষ দিকে তার একার লড়াইয়ে ১৪৮ রান তুলতে সক্ষম হয় উইন্ডিজ। না হয় শতরানের আগেই গুটিয়ে যাওয়ার কথা ছিল ক্যারিবীয়দের। দলের হয়ে ৬৬ বলে সর্বোচ্চ ৪১ রান করেন পাওয়েল। সিরিজ বাঁচানোর ম্যাচে ৪৩.৪ ওভারে মাত্র ১৪৮ রানে সবকটি উইকেট হারায় ক্যারিবিয়ানরা। সিরিজ নিশ্চিত করতে টাইগারদের প্রয়োজন ১৪৯ রান।
বাংলাদেশ দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এ ছাড়া ২টি করে উইকেট নেন মোস্তাফিজুর রহমান ও সাকিব আল হাসান।
বাংলাদেশের ইনিংসের শুরু থেকেই দুই ওপেনার দেখেশুনে প্রতিপক্ষের বোলারদের মোকাবেলা করে রানের চাকা ঘুরাতে থাকে। মাঝেমাধ্যে তাদের ব্যাট থেকে দুই একটি চারের মারও দেখতে পায় দর্শকরা। এভাবে ৫ ওভারে বাংলাদেশের এই ওপেনিং জুটির ব্যাট থেকে আসে ২৭ রান। তবে ৬ষ্ঠ ওভারে স্পিনার আকিল হুসেইনের বল লিটনের ব্যাট ফাঁকি দিয়ে প্যাডে আঘাত করায় দলীয় ৩০ রানে জুটি ভাঙ্গে স্বাগতিকদের। ওপেনার লিটন ব্যক্তিগত ২২ রানে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান। ১০ ওভারে বাংলাদেশের লিটনের উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ ছিলো ৪১ রান। লিটনের বিদায়ের পর উকেটে তামিমের সাথে জুটি বাধেন শান্ত । এ জুটি অর্ধশত রান যোগ করে দলের খাতায়। ১৭ তম ওভারে শান্ত জেসন মোহাম্মদের বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে ব্যক্তিগত ১৭ রানে আউট হন। তখন দলের সংগ্রহ ছিলো ২ উইকেটের বিনিময়ে ৭৭রান।
টাইগারদের তৃতীয় জুটিতে অধিনায়ক তামিমের সাথে উইকেটে আসেন সাকিব আল হাসান। তখন তামিম খানিকটা হাত খুলে ব্যাট চালাতে থাকেন। ২০ তম ওভারে তামিম স্পিনার আকিলকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে লং অনের উপর দিয়ে উড়িয়ে বল মাঠের বাইরে পাঠান, এটি ছিলো ইনিংসের প্রথম ছক্কা। আর ২৫ তম ওভারে তামিম নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪৮ তম ফিফটি তুলে নেন ৭৫ বল মোকাবেলা করে। পরের ওভারে ক্যারিবীয় পেসার রেইফারের প্রথম বলে লুজ শট খেলে উইকেটরক্ষক জশুয়া সিলভার হাতে ক্যাচ তুলে দেন টাইগার অধিনায়ক। তিনি ৭৬ বল খেলে একটি ছয় ও তিনটি চারের মার মেরে ৫০ রানে ফিরে যান। এরপর মাহমুদুল্লাহ ও সাকিব অবিচ্ছিন্ন থেকে দলকে জয়ে নিশানায় পৌছে দেন। বাংলাদেশের ৩ উইকেটের বিনিময়ে ম্যাচ জয়ের সাথে সাথে মিরপুরে ৩ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজ ২-০তে নিশ্চিত করে। সাকিব ৫০ বলে ৪৩ রানে অপরাজিত থাকেন।
ক্যারিবিয়ান দলের আকিল,মোহাম্মদ ও জেসন ১ টি করে উইকেট পান । সিরিজের শেষ ম্যাচ হবে চট্রগ্রামে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর ঃ–
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৪৩.৪ ওভারে ১৪৮/১০ (রোভম্যান পাওয়েল ৪১, কেজর্ন ওটলি ২৪, এনকেরুমা ২০; মিরাজ ৪/২৫, মোস্তাফিজ ২/১৫, সাকিব ২/৩০)।
বাংলাদেশ: ৩৩.২ ওভারে ১৪৯ (তামিম ৫০, সাকিব ৪৩*,লিটন ২২, শান্ত ১৭, মুশফিক ৯*)।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ মিরাজ।