খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৮৬

মাহে রমাদানের বিশেষ ১০টি তাৎপর্য

মুফতি আনিস বিন ওমর

আল্লাহ রব্বুল আলামিন কিছু মানুষকে অন্যদের উপর মর্যাদা দিয়েছেন। কিছু স্থানকে কিছু স্থানের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন। কিছু সময়কে সম্মানিত করেছেন। যে সব মাসকে আল্লাহ তা’আলা মার্যাদাবান করেছেনে তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ট হলো রমযান মাস। এই মহিমান্বিত রমযানের রয়েছে কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট, আছে আলাদা মর্যাদা। অন্য মাসগুলোর উপর শ্রেষ্ট হওয়ার মত কিছু তাৎপর্য। নিচে তার কিছু পেশ করা হলো-

১. কুরআন নাযিলের মাস

মানব জাতির ইহকালীন সফলতা এবং পরকালীন মুক্তির সবথেকে বড় গাইড হলো কুরআনুল কারীম। যা মানুষকে সঠিক পথ দেখায়। হেদায়েতের সেই মহাগ্রন্থ এই মাসেই নাযিল হয়েছে। যা এই মাসের মর্যাদাকে আরো সমুন্নত করেছে। ইরশাদ হচ্ছে- شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِلنَّاسِরমযান মাসে কুরআন নাযিল করা হয়েছে, যা মানুষের জন্য হেদায়েত স্বরুপ। সুরা বাকারা ১৮৫।

২. জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়

এটা এমন মহিমান্বিত মাস, যে মাসে জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। অর্থাৎ জান্নাতের কাজ তথা নেকীর কাজ করা সহজ করে দেয়া হয়। হাদিসে ইরশাদ হচ্ছে – إِذَا جَاءَ رَمَضَانُ فُتِّحَتْ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ، وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ النَّارِ যখন রমযান মাস আসে, জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ করা হয়। সহীহ মুসলীম ১০৭৯।

৩. দুষ্ট জিন এবং শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়

শয়তান যেন মুমিনের জন্য জান্নাতের পথে বাধা হতে না পারে এই জন্য শয়তানকে এবং মানুষের ক্ষতি করে এমন জীনকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। রসুল স. বলেন -إذا كان أول ليلة من شهر رمضان صفدت الشياطين، ومردة الجن
যখন রমযানের প্রথম রজনী আসে দুষ্ট জীন এবং শয়তানকে বন্দী করা হয়। সুনানে তিরমিযী ৬৮২।

৪. মুমিনের রিজিক বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়

রমাদানুল মুবারক এমই বরকতপূর্ণ মাস, এই মাসে আমলি তারাক্কির সাথে সাথে আল্লাহ তা’আলা মুমিনের রিযিক বৃদ্ধি করে দেন। হাদিসে ভাষায় وَشَهْرٌ يَزْدَادُ فِيهِ رِزْقُ الْمُؤْمِنِ এই (রমযান) মাসে মুমিনের রিযিক বৃদ্ধি করা হয়। সহীহ ইবনে খুযাইমা ১৮৮৭।

৫. সওয়াবের আশায় নামায রোজা করলে গোনাহ মাফ হয়ে যায়

অন্য কোন মাসের ব্যপারে এমন ঘোষণা নেই যে, নামায রোজা করলে গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। শুধু রমযানের ব্যাপারে রসুল স. বলে গেছেন مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ যে ব্যক্তি রমযানে ঈমানসহ সওয়াবের আশায় ইবাদত করে (নামায পড়ে) তার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। সহীহ বুখারী ৩৭।

مَنْ صَامَ رَمَضَانَ، إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ যে ব্যক্তি ঈমানসহ সওয়াবের আশায় রমযান মাসে রোযা রাখে তার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। সহীহ বুখারী ৩৮।

৬. এই মাসের উমরা হজ্জের মত

এই মাসে প্রতিটি আমলের প্রতিদান তথা সওয়াব বহুগুনে বাড়িয়ে দেয়া হয়। এমনটি নফল আমলে ফরজের মত সওয়াব দেওয়া হয়। রসুল স. এক আনসারী মহিলাকে বলেছিলেনفَإِذَا جَاءَ رَمَضَانُ فَاعْتَمِرِي، فَإِنَّ عُمْرَةً فِيهِ تَعْدِلُ حَجَّةً রমযান মাস এলে তুমি উমরাহ কর, কারণ এ মাসের উমরাহ একটি হজ্জের সমান। সহীহ মুসলীম ২৯২৮ ।

৭. এই মাসে অসংখ্য জাহান্নামীকে মুক্তি দেয়া হয়

জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি আর জান্নাতের অনাবিল শান্তির নিবাস আমাদেরকে তিনি দিবেন এই জন্যই রমযান নামের বিশেষ অফার চালু করেছেন। এই মাসে বান্দার প্রতি তিনি এত দয়া পরবশ থাকেন যে, না দিতে পারলে তাঁর ভালো লাগে না। তাই তিনি প্রতি রমযানে অসংখ্য বান্দার জন্য জান্নাত বরাদ্দ করেন।

হাদিসে এসছে – إِنَّ لِلَّهِ عِنْدَ كُلِّ فِطْرٍ عُتَقَاءَ، وَذَلِكَ فِي كُلِّ لَيْلَةٍ আল্লাহ তা’আলা প্রতি ইফতারের অর্থাৎ রমযানের প্রতি রাতে বহু সংখ্যক লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। সুনানে ইবনে মাজাহ ১৬৪৩।

৮. রমযান মাস গুনাহের জন্য কাফ্ফারা

আমরা মুবাইল-কম্পিউটারে এন্ট্রি ভাইরাস ব্যবহার করি। কিছু সফটওয়্যার এমন যা শুধু ফোনে বা কম্পিউটারে ওকে করে রাখলেই সমস্ত ভাইরাস শেষ করে ফেলে। মাহে রমযানও তেমনি মধ্যবর্তী গুনাহ মিটিয়ে দেয়।

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে الصَّلَوَاتُ الْخَمْسُ، وَالْجُمْعَةُ إِلَى الْجُمْعَةِ، وَرَمَضَانُ إِلَى رَمَضَانَ، مُكَفِّرَاتٌ مَا بَيْنَهُنَّ إِذَا اجْتَنَبَ الْكَبَائِرَ পাঁচ ওয়াক্ত নামায, এক জুমআ থেকে অন্য জুমআ, এবং এক রমযান থেকে আর এক রমযান, তার মধ্যবর্তী গুনাহের জন্য কাফফারা হয়ে যাবে যদি কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে। সহীহ মুসলীম ৪৪০।

৯. শেষ দশকে এতেকাফ

এতেকাফ এমন একটি আমল যার সওয়াব চলমান থাকে, যতক্ষণ বান্দা এতেকাফের নিয়তে অবস্থান করে। আল্লাহর নৈকট্য হাসিলের অন্যতম একটি আমল হলো এতেকাফ করা। এতটাই ফযিলতপূর্ণ আমল যে, রসুল স. জীবনে কখনো রমযানের ইতেকাফ তরক করেন নি। রমযানের শেষ দশকের ইতেকাফ এই মাসের তাৎপর্যকে বহুগুনে বাড়িয়ে দিয়েছে। রসুল স. মৃত্যু পর্যন্ত রমযানে ইতেকাফ করে গেছেন।

হাদিসে এসেছে –
أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، كَانَ يَعْتَكِفُ العَشْرَ الأَوَاخِرَ مِنْ رَمَضَانَ حَتَّى تَوَفَّاهُ اللَّهُ রসুল স. রমযানের শেষ দশকে এতেকাফ করতেন। তাঁর ইন্তেকাল পর্যন্ত এই নিয়মই বহাল ছিল। সহীহ বুখারী ২০২৬।

১০. বছরের শ্রেষ্ট রাত এই মাসেই

উম্মতে মুহাম্মাদীকে আল্লাহ তা’আলা এমন একটি রজনী দান করেছেন, যা বছরের মধ্যে শ্রেষ্ট। বান্দাকে দেয়া এক বিশেষ অফার এই রাত। যা হাজার মাসের ইবাদতের সমান না, বরং তার থেকেও উত্তম। মহান দাতা ঘোষণা দিয়েছেন لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ কদরের রাত হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সুরা কদর ৩।

এই মর্যাদাপূর্ণ রাতটিও রমযান মাসে। যা রমযানের মর্যাদাকে আরো সমুন্নত করেছে। রসুল স. বলেন – التَمِسُوهَا فِي العَشْرِ الأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ لَيْلَةَ القَدْرِ তোমরা রমযানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর তালাশ করো। সহীহ বুখারী ২০২১।

মহিমান্বিত রমাদানুল মুবারাক প্রতিটি মুমিনের জন্য হোক বরকতময়। রহমতের বৃষ্টিতে সিক্ত হয়ে বিগলিত হোক প্রতিটি কঠোর হৃদয়। দয়ার সাগরের ক্ষমার ঢেউ ভাসিয়ে নিয়ে যাক সমস্ত পাপরাশি, মুছে যাক সমস্ত হিংসা দ্বেষ। রমযানের মহিমায় রবের ভালোবাসায় ভরে উঠুক প্রতিটি অন্তর, ঈমানে আমলে সমৃদ্ধ হোক প্রতিটি মুমিন।

(লেখক : সিনিয়র শিক্ষক, ইমদাদুল উলূম রশিদিয়া মাদরাসা, ফুলবাড়িগেট, খুলনা)

খুলনা গেজেট/এমএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!