মাগফিরাত ও নাজাতের মাস রমজানুল মোবারক চলছে। আজ থেকে শুরু হলো মাগফিরাতের দশক। মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার দ্বিতীয় ১০ দিনকে বলা হয় মাগফিরাতের দশক। অর্থাৎ ১১ থেকে ২০ রোজা পর্যন্ত মাগফিরাত, যার অর্থ ক্ষমা। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রমজানের প্রথম ১০ দিন রহমতের, দ্বিতীয় ১০ দিন মাগফিরাত লাভের এবং তৃতীয় ১০ দিন জাহান্নাম থেকে মুক্তিলাভের।’ (মিশকাত) এ মাসে যখন একজন রোজাদার সারা বছরের নেকি ও পুণ্যের ঘাটতি পূরণের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা-সাধনা চালিয়ে যান এবং মাগফিরাতের ১০ দিনও অতিবাহিত করেন, তখন আল্লাহ তার গুনাহ-খাতা মাফ করে দেন। মাহে রমজানের প্রতি দিন-রাতেই অনেক মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয় এবং দোয়া কবুল হয়।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মাহে রমজানের প্রতি রাতেই একজন ফেরেশতা ঘোষণা করতে থাকেন, ‘হে পুণ্য অন্বেষণকারী! অগ্রসর হও। হে পাপাচারী! থামো, চোখ খোলো।’ তিনি আবার ঘোষণা করেন, ‘ক্ষমাপ্রার্থীকে ক্ষমা করা হবে। অনুতপ্তের অনুতাপ গ্রহণ করা হবে। প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা কবুল করা হবে।’
এ মাসে আল্লাহর দরবারে মাগফিরাত কামনা করলে, গরিব-দুঃখীদের প্রতি দান-সদকার পরিমাণ বাড়িয়ে দিলে, নিজে সব ধরনের খারাপ কাজ পরিহার করলে, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ইবাদত-বন্দেগি, জিকির-আসকার, তাসবিহ-তাহলিল, কোরআন তিলাওয়াত ও দোয়া-ইস্তেগফার করলে, মহান আল্লাহ তা অবশ্যই কবুল করেন।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এ মাসে চারটি কাজ অবশ্যকরণীয়। দুটি কাজ এমন যে, তার দ্বারা তোমাদের প্রতিপালক সন্তুষ্ট হন। অবশিষ্ট দুটি এমন, যা ছাড়া তোমাদের কোনো গত্যন্তর নেই। এই চারটির মধ্যে একটি হলো কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ করা, দ্বিতীয়টি হলো অধিক পরিমাণে ইস্তেগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করা। এ দুটি কাজ আল্লাহর দরবারে অতি পছন্দনীয়। তৃতীয় ও চতুর্থ হলো জান্নাত লাভের আশা করা ও জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণের প্রার্থনা করা। এ দুটি এমন বিষয়, যা তোমাদের জন্য একান্ত প্রয়োজন।’ (ইবনে খুজাইমা)
মাতৃগর্ভ থেকে মানুষ যেভাবে নিষ্পাপ অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয়, মাহে রমজানের ৩০ দিন যথাযথভাবে রোজা পালন করলে তেমন নিষ্কলুষ হয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এসব মুমিন বান্দার মাগফিরাত ও নাজাতপ্রাপ্তি সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যারা রমজানের চাঁদের প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত রোজা রেখেছে, তারা সেদিনের মতোই নিষ্পাপ হয়ে যাবে, যেদিন তাদের মাতা তাদের নিষ্পাপরূপে জন্ম দিয়েছেন।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাস পেয়ে নিষ্পাপ হতে পারল না, তার মতো হতভাগ্য এই জগতে আর কেউ নেই।’ সিয়াম সাধনার মধ্যে কোনোরকম ভুলত্রুটি হয়ে গেলে তৎক্ষণাৎ তওবা ও ইস্তেগফার করে নিজেদের সংশোধন করে নেওয়া দরকার। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর তিনিই (আল্লাহ) তার বান্দাদের তওবা কবুল করেন এবং পাপগুলো ক্ষমা করে দেন।’ (সূরা আশ শুরা :১৫)
অতএব, মুমিন বান্দাদের উচিত, মাগফিরাতের দশকটি আমল-ইবাদত, প্রার্থনা-মোনাজাতে কাটিয়ে আল্লাহ তায়ালার ক্ষমালাভে ধন্য হওয়া, মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে আমল করার তৌফিক দান করুন আল্লাহুম্মা আমিন।
(লেখক : ইসলামী চিন্তাবিদ, লেখক ও কলামিস্ট)
খুলনা গেজেট/এমএম