শীতকালে সেকেন্ড ওয়েভ হলে সেটা কম তাপমাত্রার জন্য হবে বলে ইপিডিমিওলজিস্টরা মনে করেন না। সেটা হবে আম-জনতার ধৈর্যহীন কেয়ারলেসনেসের জন্য, যা আমার ভাষায় ফাইজলামি।
সরকার ইকোনমি ঠিক রাখার জন্য চলাচলে নিষেধাজ্ঞা তুলেছেন। আর এই দেশের সব মানুষের মনের গহিনে ট্র্যাভেলার স্ত্তা জাগ্রত হয়েছে। সবকটি ট্যুরিস্ট সাইটে ইকোনমি বুম হয়েছে। ইয়াং ছেলেমেয়েরা সেখান থেকে রোগটা নিয়ে বাড়ি ফিরছে। তাদের কিছুই হচ্ছে না, তাদের থেকে যখন বাড়ির প্রবীণ অথবা জটিল রোগীরা আক্রান্ত হচ্ছেন তারা হাসপাতালে ভর্তি হতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেকেরই আইসিইউ লাগছে। ভাগ্যবান হলে বেড পাচ্ছেন। না হয় ওয়ার্ডেই তাদের জীবন প্রদীপ নিভে যাচ্ছে। কেউ কেউ প্রাইভেট হাসপাতালে গিয়ে তিনদিনের আইসিইউ বিল দেখে ভিরমি খেয়ে সরকারি জায়গায় ধরনা দিচ্ছেন। লাভ হচ্ছে না। আমরা প্যাকড।
সবাই সব মজা করতে পারছেন। শুধু কাজের জায়গায় এলেই করোনার ভয় পান। এই অবস্থা আর কয়েকদিন চললে কুর্মিটোলা নতুন রোগীর চাপ নিতে পারবে না। ডিএমসিএইচও পারবে না। তখন কি করবেন? ইয়াং যারা তারা সম্ভবত বেঁচে যাবেন। কিন্তু এই দুঃসহ মনোবেদনা বাকি জীবন টানতে পারবেন কি, যে আপনার চিল করে আসার কারণে আপনার বাবা-মাকে পৃথিবী ছেড়ে যেতে হয়েছে! তাহলে যান, চিল করেন গা। সাজেক, কক্সবাজার, কিওক্রাডং, টাঙ্গুয়ার হাওর, কিশোরগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল যান। গিয়ে ছবি আপলোড মারেন।
মনে রাখবেন, বর্তমানের এই হঠাৎ আসা রোগীর চাপের একমাত্র কারণ আপনাদের মাস্ক না পরা এবং বেহিসাবি ভ্রমণ, এক জায়গায় বসে খাওয়া-দাওয়া এবং আড্ডাবাজি। অন্য আর কোনো কারণ নেই।
জি, আর আমরা সব যন্ত্রণার ঠিকাদারি নিয়েছি। হুদাই হাসপাতালে আমাদের চাপের পর চাপ বাড়াচ্ছেন। আমাদেরকে অনেক পুরস্কার দিছেন আপনারা। অনেক কিছু। এদিকে আর্থিক বাজেট সংক্রান্ত জটিলতায় এই মাসে এখনো বেতন বিল পাস হয়নি বড় সংখ্যক চিকিৎসকের। সরকারের দেওয়া বেতন পাব নিশ্চয়ই একদিন। কিন্তু এটা বুঝেন আমার মতো যারা প্র্যাকটিস করেন না তারা বাড়িওয়ালা, ড্রাইভার, কাজের লোক, বাচ্চার টিউটর, এদের কাছে কতটা লজ্জায় পড়তে যাচ্ছি? তাছাড়া বাড়িওয়ালা বাদ দিলেও গরিব মানুষের কত হিসাব করা থাকে!
আচ্ছা বাদ দেই। প্যাচাল কেউ শুনে না। শুধু একটা কথা বলি, মাস্ক ছাড়া সামনে পড়বেন না। অপমান করবো। নিশ্চিত। আমাদেরও ধৈর্যের সীমা আছে। বুরবক জাতি! লেখক: চিকিৎসক