ইউক্রেনে চলমান সামরিক অভিযানের অংশ হিসেবে দেশটির মারিউপল শহরে হামলা আরও জোরদার করেছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। একইসঙ্গে খণ্ডকালীন যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ার পরও দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় এই শহরে রুশ সেনারা অনবরত গোলাবর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে। মারিউপলের মেয়রের বরাত দিয়ে রোববার (৬ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও আলজাজিরা।
শহরের মেয়র ভাদিম বয়চেঙ্কো জানিয়েছেন, রাশিয়ার অবরোধের কারণে খুব কঠিন অবস্থায় রয়েছে মারিউপল। বার্তাসংস্থা এপি’কে তিনি জানিয়েছেন, ‘শহরের আবাসিক এলাকাগুলোতে রুশ সেনাদের অবিরাম গোলাবর্ষণ চলছে। একইসঙ্গে রুশ যুদ্ধবিমান থেকেও আবাসিক এলাকায় বোমা ফেলা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, খণ্ডকালীন যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর শহর ছেড়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করার সময় নারী ও শিশুসহ বাসিন্দারা রুশ সেনাদের হামলার কবলে পড়ে।
বিবিসি বলছে, ইউক্রেনে আক্রমণ শুরুর পর কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই বন্দরনগরীকে ব্যাপক আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে রুশ সামরিক বাহিনী। গত কয়েকদিন ধরে পূর্ব ইউক্রেনের এই শহরটি সবদিক থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে রাশিয়া। অবরোধের সময় বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার পাশাপাশি খাবার সরবরাহও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল।
গত শুক্রবার মারিউপল শহরের মেয়র ভাদিম বয়চেঙ্কো জানান, কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বন্দরনগরী মারিউপল অবরুদ্ধ করে রেখেছে রুশ সামরিক বাহিনী। একইসঙ্গে অবরুদ্ধ করার পাশাপাশি বিদ্যুৎ, পানি, খাবার ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে তারা।
সেসময় তিনি আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে শহরটি অবরুদ্ধ করে রাখার পাশাপাশি অব্যাহত ভাবে হামলা চালানো হচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসিদের হাতে রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর লেনিনগ্রাদ অবরোধের কথা উল্লেখ করে ভাদিম বয়চেঙ্কো এক বিবৃতিতে বলেন, ‘লেনিনগ্রাদের মতো করে এখানে তারা অবরোধ আরোপের চেষ্টা করছে।’
নাৎসিদের হাতে রুশ শহর লেনিনগ্রাদ অবরোধের কারণে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। মারিউপল শহরের মেয়র আরও বলেন, ‘(বিচ্ছিন্ন করার পর) তারা আমাদের বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ মেরামত করতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। রুশ সৈন্যরা আমাদের রেল সংযোগও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে যেন আমরা নারী, শিশু এবং বয়স্ক নাগরিকদের সরিয়ে নিতে না পারি।’
উল্লেখ্য, চার লাখেরও বেশি বাসিন্দার মারিউপল শহরটি দখল করা রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ এই শহরটি আজভ সাগরে ইউক্রেনের কৌশলগত বন্দর এবং ডনবাস অঞ্চলে রুশ-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোর কাছেই অবস্থিত।